এক নজরে ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
৩২ বছরে পড়লো ঢাকার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। তবে এবারের আয়োজনটি আসলে ২২তম। উৎসবের স্লোগান হলো ‘বেটার ফিল্ম, বেটার অডিয়েন্স, বেটার সোসাইটি’।
উৎসবের রং
১৯৯২ থেকে যাত্রা শুরু হওয়া উৎসবটি প্রথম চার বছর ছিল নিয়মিত। এরপর দ্বিবার্ষিক উৎসবের আয়োজন করা হতো। ২০১৬ থেকে আবার নিয়মিত হচ্ছে এই উৎসব। এবার মূল উৎসব প্রাঙ্গন জাতীয় জাদুঘর সেজেছে উৎসবের রঙে। নানা দেশের ছবিসহ ব্যানার, কাটআউট, রিকশাচিত্র ঠাঁই পেয়েছে সাজসজ্জায়। কিউরেট করেছেন এফডিসি’র শিল্প নির্দেশক হিমাদ্রি বড়ুয়া।
২৫২টি ছবির প্রদর্শনী
৭৪টি দেশের ২৫২ টি ছবি ছিল এবারের উৎসবে। উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। উৎসবের এশিয়ান বিভাগের প্রধান বিচারক ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর।
ইরানি ছবি দিয়ে উদ্বোধন
উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শিত হয় ফেরেশতে। ইরানের নির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজমের ছবিটির প্রযোজক ও অভিনেত্রী ছিলেন জয়া আহসান। এশিয়ান বিভাগের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ছবিটি। প্রদর্শনীর সময় নির্মাতাসহ অন্য কলাকুশলীরা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না অভিনেত্রী জয়া আহসান।
বৃষ্টিতেও ভিড়
শীতের সন্ধ্যায় বৃষ্টি। তবু দর্শক লাইন দিয়ে দেখলেন মমতা শঙ্কর ও স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় অভিনীত সিনেমা ‘বিজয়ার পরে’। অভিজিৎ শ্রীদাস পরিচালিত ছবিটি দর্শকের দারুণ প্রশংসা পেয়েছে। উৎসবের সব ছবি দর্শকেরা দেখেছেন বিনামূল্যে।
নির্মাতারাও ছিলেন
কলাকুশলীসহ নির্মাতা লীসা গাজীও উপস্থিত ছিলেন উৎসবে। তার পরিচালিত ছবি ‘বাড়ির নাম শাহানা’ দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। এই বিভাগে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’, ‘নোনা পানি’ , ‘ইতি চিত্রা ‘, ‘১৯৭১: সেই সব দিন’সহ ১৩ টি ছবি প্রতিযোগিতা করেছে।
নারীদের প্রাধান্য
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘দশম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম কনফারেন্স’। দুইদিনের আয়োজনে ছিল ছয়টি সেশন। প্রথম দিনের তৃতীয় সেশনে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নারী নির্মাতারাই নারীকে ভালো বুঝতে পারে৷’’
প্রেক্ষাগৃহ পরিপূর্ণ
বাংলাদেশ আর কলকাতার ছবি প্রদর্শনীর সময়ই মিলনায়তন এমন পূর্ণ ছিল। ভিন্ন ভাষার ছবির ক্ষেত্রে এমন চিত্র খুব একটা দেখা যায়নি। তবে সবমিলিয়ে দর্শকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
কোথায় দেখানো হলো চলচ্চিত্রগুলো
উৎসবের অন্যতম ভেন্যু ছিল শিল্পকলা একাডেমী। এখানে তিনটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হয় ছবিগুলো। সকাল ১০.৩০, দুপুর ১ টা, বিকেল ৩ টা ও বিকেল পাঁচটা ছিল ছবি দেখানোর সময়।
অন্য ভেন্যু
উৎসবের আরেক ভেন্যু আঁলিয়স ফ্রঁসেজ। এখানকার ছোট্ট প্রেক্ষাগৃহ অনেক সময়ই দর্শকের স্থান সংকুলান করতে পারেনি। এই ভেন্যুতেই হয়েছে ‘ওয়েস্ট মিট ইস্ট: চিত্রনাট্য' প্রতিযোগিতা।
ফোকাসে চীন
উৎসবের আরেক বিভাগ ছিল ‘ওয়াইড অ্যাঙ্গেল’। সেখানে ফোকাস ছিল চীনের ওপরে। দেশটির ১৬ টি ছবি দেখানো হয় এই বিভাগে।
নেপালী অভিবাসীদের নিয়ে ছবি
ক্রোয়েশিয়ার নির্মাতা আনজা স্ট্রেলেক উৎসবে নিয়ে এসেছেন তার প্রামাণ্যচিত্র্র। নেপালি অভিবাসীদের নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন চলচ্চিত্রটি। উইমেন কনফারেন্সে তিনি ‘কি নোট’ পড়েছেন। ঢাকার এই উৎসবে নান্দনিক ছবির সমারোহ তাকে মুগ্ধ করেছে।
যাদের ছাড়া উৎসব অসম্পূর্ণ
শিল্পকলার ইনফর্মেশন ডেস্কে কর্মরতা স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে কোনো ক্লান্তি ছিল না। উৎসব দারুণ উপভোগ করেছেন তারা।
মমতা শংকরের উপস্থিতি
নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মমতা শংকর উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। উৎসবে তার ছবি ‘বিজয়ার পরে’ দেখে দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন।
মৃণাল সেনকে নিয়ে ছবি
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন পরিচালক অঞ্জন দত্ত। তার ছবি ‘ চালচিত্র এখন’ দেখানো হয় উৎসবের সপ্তম দিনে। মৃণাল সেনকে ঘিরে নির্মিত ছবিটি নিয়ে তিনি বললেন, ‘‘ছবিতে মৃণাল সেনকে আমি পূজা করিনি। মানুষ হিসেবে দেখিয়েছি।’’
বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার বিজয়ীসহ অতিথিরা
উৎসবের শেষ দিনে দশটি বিভাগের মধ্যে আটটি বিভাগে পুরস্কার দেয়া হয়। বাংলাদেশ প্যানোরামায় ফিপরেসি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে পান্থ প্রসাদ পরিচালিত 'সাবিত্রী'। এই বিভাগে স্বল্পদৈর্ঘ্যে সেরা ছবি বৈশাখী সমাদ্দার পরিচালিত 'লায়লা'। এশিয়ান বিভাগে সেরা ছবি চীনের কিয়াও সিক্সু পরিচালিত 'দ্য কর্ড অব লাইফ'। 'চালচিত্র এখন' ছবির জন্য এই বিভাগে সেরা অভিনেতা হয়েছেন অঞ্জন দত্ত। সেরা অভিনেত্রী 'দ্য কর্ড অব লাইফে'র বাদেমা।