এক সুদানি কিকবক্সারের স্বপ্ন
২০ অক্টোবর ২০১৭কিকবক্সিং-এর ট্রেনিং দিচ্ছেন পুরো ওকেলো৷ তাঁর কাছে শিখতে পাওয়া একটা বিরাট ব্যাপার, দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবায় পুরোর শিক্ষার্থীরা সেটা জানেন৷ পুরো ওকেলো এককালে অ্যামেরিকায় পেশাদার বক্সার ছিলেন৷ তিনি দক্ষিণ সুদানে ফেরেন ২০০৮ সালে৷
ওকেলো শোনালেন, ‘‘আমি যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন আমি ব্রুস লি, চাক নরিস, এদের নিয়ে পাগল ছিলাম৷ আমার শিক্ষার্থীদের জন্য আমি নিজেই আজ জ্যাকি চান বা ব্রুস লি; আমি ওদের পথ দেখাতে পারি, চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে কী করতে হবে, তা বলতে পারি৷''
পুরো ওকেলো নব্বই-এর দশকের গোড়ায় সুদানের গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে ক্যানাডায় চলে যান – তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪৷ ভ্যানকুভারে কিকবক্সিং শুরু করে শীঘ্রই তিনি একটির পর একটি টুর্নামেন্টে জিততে শুরু করেন৷ ওকেলো শোনালেন সে কাহিনী: ‘‘আমি কারাটে আর শোতোকানে থার্ড ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট ও জিউ জিৎসু আকিদো-তে ফার্স্ট ডিগ্রি ব্ল্যাক বেল্ট৷ এককালে পেশাদার বক্সার ও উত্তর অ্যামেরিকার ফুল কন্ট্যাক্ট চ্যাম্পিয়ন ছিলাম৷ আমার ৭৫ কিলোগ্রাম ওজন বিভাগে আমি অপরাজিত৷''
নতুন প্রজন্ম
পুরো ওকেলো দক্ষিণ সুদানে কিকবক্সারদের একটি নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন৷ নিজেই সাজসরঞ্জাম উদ্ভাবন করে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন৷ সাফল্যও এসেছে৷ পুরো-র কল্যাণে দক্ষিণ সুদান আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে থাকে৷ পুরো-র শিক্ষার্থীরা কেনিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া ও মিশরে কিকবক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন৷ কিন্তু তিন বছর আগে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া যাবৎ দক্ষিণ সুদানে কিকবক্সিং-এর সংক্ষিপ্ত সাফল্যের কাহিনির অবসান ঘটেছে৷
ওকেলো জানালেন, ‘‘২০১৪ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ছেলেরা সেরা ফাইটারদের মধ্যে ছিল৷ ওদের মধ্যে একজন, জেমস কুওল, ছিল কিকবক্সিং-এর বিশ্ব ব়্যাংকিং-এ ন'নম্বর৷ কিন্তু যুদ্ধের কারণে সে আর এখানে নেই৷ সে বেন্টিউ-তে কোথাও একটি প্রোটেকশন অফ সিভিলিয়ানস সাইটে রয়েছে৷ আমার তাতে খারাপ লাগলেও আমি বলেছি, আমি ছেড়ে দিতে পারি না৷''
মহিলারাও আছেন
পুরো ওকেলো মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেবার কথাও ভাবছেন৷ উইনি নাতাশা যৌন হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য কিকবক্সিং শিখছেন৷ উইনি ট্রেনিং করতে করতে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছেন যে, তিনি আজ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকেন৷
উইনি জানালেন, ‘‘২০১৩ সালের জুলাই মাসে আমি এক ইটালীয় মহিলার সাথে লড়ি – সেটা ছিল দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার দ্বিতীয় বার্ষিকী৷ সেটা ছিল আমার প্রথম ম্যাচ – যে আমি ম্যাচে জিতি৷''
গৃহযুদ্ধ সত্ত্বেও উইনি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ সুদানের হয়ে কেনিয়ায় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন৷ পুরো তাঁর শিক্ষার্থীদের পরস্পরকে সম্মান করতে শেখান – তাঁর কেন্দ্রে দক্ষিণ সুদানের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা আছেন৷
ওকেলো বলেন, ‘‘আমি এখানে আছি এটা নিশ্চিত করার জন্য যে, এই সব কম বয়সের ছেলেমেয়েরা দক্ষিণ সুদানে যা ঘটছে, তার অনুসরণ বা পুনরাবৃত্তি করবে না৷''
তবে তাঁর মতো মানুষদের প্রেরণার ফলে যে গৃহযুদ্ধের বিভীষিকার অন্ত ঘটবে, সে ধরনের অলীক আশা পুরো রাখেন না৷ তবে যুদ্ধ সমাপ্তির পর তাঁর স্বদেশকে নতুন করে গড়ে তোলায় সাহায্য করতে চান পুরো ওকেলো৷
পাট্রিক ওইয়েট/এসি