একটি তুষারফলকের জীবন
শীতে উত্তর গোলার্ধের অনেক দেশ বরফে ঢেকে যায়৷ কিন্তু বরফ মানে একক ও অকৃত্রিম তুষারফলক – ইংরেজিতে যাকে বলে স্নোফ্লেক৷ কোনো দু’টি তুষারফলক কিন্তু এক নয়...৷
বরফে ডুবে থাকা পৃথিবী
সে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা – পায়ের তলায় বরফের খচমচ শব্দ ছাড়া৷ শীতের দেশের অধিকাংশ মানুষ হোয়াইট ক্রিসমাস, অর্থাৎ বরফে ঢাকা বড়দিনের স্বপ্ন দেখেন৷
পানি জমে হয় বরফ
ওপরের ঠান্ডা হাওয়ায় এক কণা ধুলো বা ধোঁয়াকে কেন্দ্র করে এক ফোঁটা জল, অর্থাৎ বাষ্প জমে তৈরি হয় একটি তুষারকণা৷ ঠান্ডা বলতে হাওয়ার তাপমাত্রা মাইনাস চার থেকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে হওয়া চাই৷
ষড়ভুজ দিয়ে শুরু
স্নোফ্লেক বা তুষারফলক শুরু হয় এক মিলিমিটারের দশ ভাগের এক ভাগ ব্যাসের একটি ষড়ভুজকে ভিত্তি করে৷ হাইড্রোজেন অ্যাটম যেভাবে পানির মলিকিউল এইচটুও-তে বন্ডিং করে, তা থেকেই এই আকারের সৃষ্টি হয়৷
স্ফটিক তুষার থেকে তুষারফলক
পানি জমে জমে যত বেশি ষড়ভুজ স্ফটিক হয়, ততই তুষারফলকগুলির ডেনড্রাইট নামের সম্প্রসারিত অংশগুলি বাড়তে থাকে৷ এ থেকেই তুষারফলকগুলি তাদের তারকাসুলভ আকৃতি পায় – ক্যালিডোস্কোপের মতো যা প্রতিবার অন্য ধরনের নকশা গড়তে পারে, যা নির্ভর করে তাপমাত্রা কিরকম, বাতাসের গতি কতোটা ও মেঘে কী পরিমাণ আর্দ্রতা আছে, এ সবের উপর৷
নানা ধরনের বরফ
মেঘ থেকে মাটিতে নামতে একটি তুষারফলকের প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে৷ মাইনাস পাঁচ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা হলে আর আর্দ্রতা বেশি থাকলে তুষারফলকগুলি আরো বড় হয়৷ তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা যত কম হবে – যেমন মেরু অঞ্চলে – ততই সুঁচের মতো সরু বরফের কণা আর প্লেট ক্রিস্টাল বা কাচের পাতের মতো বরফ তৈরি হবে৷
স্নোম্যান তৈরি, নাকি স্কিইং?
ভেজা, বড় বড় তুষারফলকগুলো দিয়ে খুব ভালো স্নোম্যান বানানো যায়৷ ছোট আর আরো বেশি ঠান্ডা স্নোফ্লেকগুলো থেকে পাউডার স্নো বা গুঁড়ো বরফ তৈরি হয়, যা স্কি করার পক্ষে ভালো৷
‘গত বছরের বরফ’
বরফ পড়ে জমাট বেঁধে হিমবাহগুলি সৃষ্টি হয়েছে৷ চাপ বাঁধা এই বরফ কিন্তু গরমে গলতে পারে – পরে আবার শীতে জমে যায়৷ এ ধরনের দানাবরফকে বলা হয় ‘ফির্ন’ বরফ৷ সুইশ জার্মানে ‘ফির্ন’ কথাটার মানে হলো ‘গত বছরের’৷ এই বরফ নীল বা সবুজ দেখায়৷ জলবায়ু পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো এই ‘গত বছরের বরফ’৷
দেখতেই সাদা
সাদা বরফ ব্যাপারটাই আসলে একটা ভ্রম৷ পানি থেকে বরফ তৈরি আর পানির কোনো রং নেই৷ কিন্তু বরফের ক্রিস্টাল বা স্ফটিকগুলো আয়নার মতো সব ধরনের ফ্রিকোয়েন্সির আলো একযোগে প্রতিফলন করে – যার ফলে আমাদের চোখে তা সাদা বলে মনে হয়৷
অদ্ভুত, অনন্য
তুষারফলক যেখানে আর যেভাবেই তৈরি হোক না কেন, তাদের সৌন্দর্য আর অনন্যতা দেখে আমরা মুগ্ধ হই – বিশেষ করে যখন তারা ক্ষণস্থায়ী৷ গলে আবার পানি হয়ে যেতে কতক্ষণ?