একটু জল দেবেন, হাহাকার সুন্দরবনে
১১ জুন ২০২০সপ্তাহ তিনেক আগে আমফান তছনছ করে দিয়েছিল কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ। শুধু কলকাতাতেই গাছ পড়েছিল সাড়ে পাঁচ হাজার। গোটা পশ্চিমবঙ্গে ঝড়ের দাপটে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। প্রায় গোটা কলকাতা শহর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল। বহু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরতে সময় লেগেছে এক সপ্তাহেরও বেশি। জায়গায় জায়গায় গাছের ডাল, লাইটপোস্ট এখনও পড়ে থাকলেও ২০ দিনে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে কলকাতা। সুন্দরবন হয়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ- দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এই এলাকা জুড়ে রয়েছে বৃহত্তর সুন্দরবন। এর আগে আয়লায় বিধ্বস্ত হয়েছিল এই এলাক। হাতে তৈরি মাটির বাঁধ ভেঙেছিল। আয়লার পরে গোটা সুন্দরবন জুড়ে কংক্রিটের বাঁধ দিয়েছিল প্রশাসন, গ্রামের ধার ধরে লাগানো হয়েছিল ম্যানগ্রোভ। আমফানে আয়লার মতো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ক্ষতি কমও হয়নি। যেখানেই নদী বাঁধ একটু দুর্বল ছিল, সেখানেই বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে গিয়েছে গ্রামে। এখনও সেই বাঁধ সারাতে পারেনি সরকার। গ্রামের ভিতর জোয়ার ভাটা চলছে। ভাঙা বাঁধের উপরেই ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ. খাবার নেই। নেই জল। অসহায় মানুষ নদীতে নৌকো দেখলেই চিৎকার করছে। একটু জল হবে, জল।
সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ অঞ্চলে জলের হাহাকার সব চেয়ে বেশি। শুলকুনি, ঘেরিপাড়া, মুক্তাচক, খলসেখালির পরিস্থিতি সব চেয়ে ভয়াবহ। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি ত্রাণকর্মীরা বড় বড় জলের জার নিয়ে পৌঁছচ্ছেন ওই সব এলাকায়। নৌকো থেকেই তাঁরা কলসিতে জল ঢেলে দিচ্ছেন আক্রান্ত মানুষদের। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, কত দিন চলবে এ ভাবে? এক মাস হতে চলল, গ্রামের ভিতর জোয়ার ভাটা চলছে। সামান্য বাঁধটুকুও এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি সারানো যায়নি। নোনা জলে শেষ হয়ে গিয়েছে চাষের জমি। মিষ্টি জলের ভেরিতে ভেসে উঠেছে মাছের মৃতদেহ। তার উপর এক সপ্তাহের মধ্যেই বর্ষা শুরু হয়ে যাবে। কী ভাবে দিন কাটবে তাঁদের, কেউ জানে না।
বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে কলসিতে জল ভরতে ভরতে ডয়চে ভেলেকে গল্প বলছিলেন স্বপন সর্দার. "আয়লার সময় আমি আর আমার স্ত্রী একটা আমগাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তিনদিন আটকে ছিলাম সেখানেই। গাছের ডালে বসে থাকতাম আর খুব জলতেষ্টা পেলে আমের মুকুল মুখে দিয়ে রাখতাম। তিনদিন পর প্রথম ত্রাণ এসেছিল বাংলাদেশ থেকে। আমাদের উদ্ধার করা হয়েছিল। আমফানে ওই আমগাছটাও পড়ে গিয়েছে। আমাদের আর কোথাও যাওয়ার নেই। ২০ দিন হয়ে গেল, একটু জল পাচ্ছি না ঠিক মতো।"
হ্যাঁ, এটাই সুন্দরবনের বাস্তবতা। কলকাতা শহরযখন ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ নিয়ে একের পর এক অভিযোগের আঙুল তুলছে প্রশাসনের দিকে, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা তখন বলছে, আর কিছু চাই না, একটু জল দাও।