ফিচার অফ দ্য উইক
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ক্লাউন উইদআউট বর্ডার্স-এর যাত্রা শুরু হয় স্পেন থেকে ১৯৯৩ সালে৷ বছর ছয়েক ধরে জার্মানিতেও কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে সংস্থাটি৷ জার্মান ক্লাউনরা বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন শিশুদের আনন্দ দিতে৷ সম্প্রতি তাঁরা ভারতেও ঘুরে এসেছেন৷
‘‘আমরা কিছু হিন্দি শব্দও শিখতে চেষ্টা করেছি৷ তবে তা একেবারেই ভাঙা ভাঙা৷ খুব সহজ দুই একটা কথা৷ মূলত আকারে ইঙ্গিতেই কাজ চালাতে হয়'', বলেন হ্যারবার্ট টমাস, জার্মানির মিউনিখ শহরে আইনজীবী হিসাবে কর্মরত তিনি৷ ক্লাউন উইদআউট বর্ডার্স-এর সঙ্গে ভারতের এক গ্রামে বাচ্চাদের একটুখানি আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেছেন এই আইনজীবী৷ সেখানকার বাচ্চারা ইংরেজি তেমন জানে না৷ কিন্তু জার্মানি থেকে আসা বিদেশিদের হাসি তামাশা তারা উপভোগ করেছে৷
হ্যারবার্ট টমাস বলেন, ‘‘আসল কথা হলো, বাচ্চাদের একটু খানি হাসি উপহার দেওয়া৷ যেখানে খুশি হওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই৷''
উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের এই গ্রামের স্কুলে ১০০ ছেলে মেয়ের অধিকাংশই হতদরিদ্র খেত মজুর পরিবার থেকে এসেছে৷ দেখলেই বোঝা যায়, সবসময় পেট ভরে খেতে পায় না ওরা৷ দ্রুত প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে উঠতে হয় তাদের, মা-বাবার কাজে খেতে বা বাড়িতে সাহায্যের হাত বাড়াতে হয়৷
জার্মান ক্লাউনরা সেখানে ভেলকিবাজি দেখান, হৈ হুল্লোড় করেন বাচ্চাদের সাথে৷ এইসব হাসি তামাশার মূলমন্ত্র হলো: ‘হাওয়ায় ভেসে যাও, হাসতে হাসতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলো'৷
বাঘের মতো শক্তিধর হতে হবে: এই ‘রোল প্লেয়িং গেম'-এ প্রশিক্ষণকারী ও বাচ্চারা রণরঙ্গিণী বাঘের মূর্তি ধারণ করে৷ ১১ বছরের নিধির মন ভেলকিবাজির জগৎ থেকে যেন বের হয়ে আসতে চায় না৷ সে জানে ক্লাউনরা সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাতে৷ তার মতে, এটা একটা সুন্দর ‘আইডিয়া'৷
ভারতের উত্তরাঞ্চলের এই গ্রামটির স্কুলে প্রতি পাঁচ ছাত্রে একজন মাত্র ছাত্রী৷ মা-বাবারা চান, কন্যা সন্তানকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিতে৷ তাদের জন্ম না হলেই যেন বাঁচেন তারা৷ কেননা মোটা অঙ্কের পন দিয়ে মেয়েদের জন্য পাত্র জোগাড় করতে হয়৷
জার্মানি থেকে আসা অতিথিরা বাচ্চাদের দুঃখ দারিদ্র্যপূর্ণ জীবনে যেন এক মুঠো মুক্ত বাতাস৷ ক্লাউন গেওর্গিয়া হুবার ও শ্টেফান ক্নল বাচ্চাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উত্সাহ উদ্দীপনা দেখে মুগ্ধ৷
হুবার জানান, ‘‘বাচ্চাদের চোখে মুখে যে আনন্দোল্লাস ফুটে ওঠে, তা আমাকেও আনন্দিত করে৷ এই উচ্ছ্বাস যেন অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আসা৷ এজন্যই আমি এখানে৷ আর এখানেই আমার সার্থকতা৷''