একদল জার্মান উগ্রপন্থির মুখোশ উন্মোচনের এক দশক
৪ নভেম্বর ২০২১অথচ আজও তেমন রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখা যায়নি। তারা নয় অভিবাসী ও এক জার্মান নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। তাদের বোমা হামলা থেকে অনেকে প্রাণে বেঁচে গেলেও শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ২০১৮ সালে ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড (এনএসইউ) নামের সন্ত্রাসী দলটির একমাত্র জীবিত সদস্য বিয়াটে শেপেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অন্যান্য দণ্ড দেয়া হয়।
এনএসইউ তদন্ত এগোয়নি বেশি দূর
এখন পর্যন্ত ২০০০ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত হওয়া কতগুলো হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে কেবল। তদন্ত এর বাইরে এখনো যেতে পারেনি। অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো বাকি। উগ্রবাদী শুধু বিয়াটে শেপে বা তার দুই সহযোগী নয়, মিউনিখে এখনো নিশ্চয় আরো অনেক ডানপন্থি উগ্রবাদী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তদন্তকারীদের হাতে এমন অনেক তথ্য প্রমাণ থাকলেও তারা কিছু করতে পারছেন না, বা করছেন না। কেন এই অনীহা? তাদের হাতে থাকা প্রমাণাদি কি যথেষ্ট নয়? নাকি এনএসইউ কেবল বিয়াটে আর তার দুই সহযোগী উভে ব্যোনহার্ডট ও উভে মুন্ডলোসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ- এই তত্ত্বে বিশ্বাসী তারা? ১৯৯৮ সালে এই তরুণী হঠাৎ গায়েব হয়ে যান এবং কিছুদিন পর জার্মানি জুড়ে হত্যাযজ্ঞে নেমে পড়েন। তাদের অভিবাসন বিরোধিতা এক অন্ধকার আনন্দে মেতে ওঠে।
ফাইলবন্দী গোয়েন্দা তথ্য
এই দলটি এতদিন ধরে জার্মানিজুড়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পেরেছে, কারণ এখানে তাদের সমর্থক ও সহমর্মী মানুষ আছেন। এমন চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং নানা মেয়াদে জেল দেয়া হয়েছে। শুধু এই ঘটনাই তো তদন্ত কর্মকর্তাদের ‘এনএসইউ ত্রয়ী' তত্ত্বকে খারিজ করে দেয়। আজ এনএসইউর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার ১০ বছর পর জার্মানির এই বিচারিক ইতিহাসটি আরেকবার খতিয়ে দেখা দরকার। খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, উগ্রডানপন্থিদের সামলাতে জার্মানি আজও কতটা হিমসিম খাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত মিডিয়ার ভাষায় ‘কাবাব মার্ডার'-এর ঘটনা থেকে আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, তা ভুল ছিল এবং সেখান থেকে আমরা শিক্ষা নেইনি। যেমন ২০২১ সালে জার্মানির হেসে রাজ্যে খ্রিস্টীয় গনতন্ত্রী পার্টি (সিডিইউ) ও সবুজ দলের সরকার বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও, যেখানে এমনকি অতিডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-ও ছিল, এনএসইউ সম্পর্কিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো খুলতে দেয়নি। এই ফাইলগুলো এখন আগামী ৩০ বছর খামবন্দী থাকবে। এর মানে হেসের মত রাজ্যে এখনো স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাস তৈরির যথেষ্ট সুযোগ আছে।
হেসেতে রক্তের দাগ: হালিত ইয়োসগাট, ভাল্টার ল্যুবকে, হানাউ
২০০৬ সালে এনএসইউর শিকার হালিত ইয়োসগাটকে তার ইন্টারনেট ক্যাফেতে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনা ঘটার সময় জার্মানির একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ২০১৯ সালে সিডিইউ রাজনীতিবিদ ভাল্টার ল্যুবকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। ল্যুবকে জার্মানির শরণার্থীদের জন্য কাজ করতেন। এই ঘটনার আঙ্গিক এনএসইউর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিলে যায়। ল্যুবকের উগ্রপন্থি হন্তরকদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, যার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু হেসে রাজ্যে ২০২০ সালেও এই চরমপন্থিরা আট পুরুষ ও এক নারীকে হানাউ শহরে হত্যা করেছে।
ম্যার্কেলের কথা আন্তরিক, কিন্তু অকার্যকর
শুনতে তেতো লাগতে পারে, কিন্তু কর্তৃপক্ষের কথায় আর কাজে মিল পাওয়া যায়নি। জার্মান চ্যান্সেলরের ক্ষেত্রেও কথাটি খাটে। ২০১২ সালে বার্লিনে এনএসইউর শিকার ব্যক্তিদের স্মরণসভায় আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছিলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডগুলোর সর্বোচ্চ তদন্ত হবে এবং যারা সহযোগিতা করেছে, প্ররোচিত করেছে এবং পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে তাদের মুখোশ খুলে দেয়া হবে, এবং সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’’ কোন সন্দেহ নেই, প্রতিশ্রুতিতে কোন খাদ ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে তা রাখা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে অনেকের মধ্যেই যথেষ্ট সাহস ও প্রত্যয়ের অভাব রয়েছে। একটা দেশ এনএসইউ-র মত দলের মুখোশ উন্মোচিত হবার এক দশক পরও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তালাবন্দি করে রাখে, যখন এরইমধ্যে একই ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে, তখন বুঝতে হবে দেশটি তাদের উগ্রডানপন্থা নির্মূলে তেমন কিছু করছে না।
মার্সেল ফ্যুর্সটেনাউ/ জেডএ