1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একদল নারী, অস্ত্র তাদের কাগজ আর কলম

৩১ জুলাই ২০১০

ভারতে নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়ে আসা সংগঠনগুলোর মধ্যে শুধু গুলাবী গ্যাং-এর নামই উল্লেখযোগ্য নয়, রয়েছেন আরও একদল নারী৷ তাদের অস্ত্র কলম আর কাগজ৷ একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করছেন তারা৷ কীভাবে ?

https://p.dw.com/p/OYoq
‘খবর লাহারিয়া' নারীদের নানা ইস্যুই বেশি প্রাধান্য পায় (ফাইল ফটো)ছবি: DW

ভারতের বুন্দেলখন্ড অঞ্চলের চিত্রকূটের একটি অস্থায়ী বাড়ি৷ ‘খবর লাহারিয়া' পত্রিকার কার্যালয়ে মঙ্গলবারের এক সকাল৷ বৈঠক করছেন পত্রিকাটির সম্পাদকীয় কর্মীরা৷ কোন কম্পিউটার নেই, নেই কোন টেবিল৷ ১৬ জন নারীর সবাই গোল হয়ে মাটিতে বসেছেন৷ তাদের চারপাশে খবরের কাগজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ মীরা পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ মনে করে, সাংবাদিকতা শুধু পুরুষের কাজ৷ তারা আরও ভাবে, নারীরা কেন তা করছে? কিন্তু আমরা মনে করি, নারীদেরও সাংবাদিকতা করা উচিত এবং গত ৮ বছর ধরে আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি৷ আমরা প্রচেষ্টা দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেছি নারীরাও যথেষ্ট শক্ত৷''

বুন্দেলখন্ড অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি নারী কখনও বিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ পাননি৷ শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি নারী এবং শতকরা ৩০ ভাগ পুরুষ পড়ালেখা জানেন না৷ শিক্ষার অভাব এবং অশিক্ষার উচ্চ মাত্রা ঐ অঞ্চলে সৃষ্টি করেছে এক দুষ্ট চক্র৷ এই দুষ্টচক্র ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একদল নারী৷ আর তাদের অস্ত্র কাগজ, কলম৷ হ্যাঁ তারাই ‘খবর লাহারিয়া' পত্রিকার সৈনিক৷ ‘খবর লাহারিয়া' শব্দের বাংলা করলে দাঁড়ায় খবর তরঙ্গ৷

৮ পাতার একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘খবর লাহারিয়া'৷ পত্রিকাটি সম্পূর্ণভাবে নারীদের দ্বারা পরিচালিত৷ প্রতিবেদন সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং ছাপা থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত সব কিছুই করছেন নারীরা৷

২২ বছর বয়সী আনারকলি এক বছর ধরে ‘খবর লাহারিয়া'র প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছেন৷ দশ মাস বয়সের একটি বাচ্চা আছে তার৷ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার জন্যে প্রতিদিনই পরিবারের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে৷ আনারকলি বলেন, ‘‘আমার পরিবার বলছে, তুমি একজন নারী, তোমার এই কাজ করা উচিত নয়৷ তুমি যদি কাজ করতে বাইরে যাও, তাহলে বাড়ির কাজ করবে কে? আমি বলি, বাড়ির কাজ আগে করে তারপরেই আমি বাইরে যাবো৷ আর তারপরেও যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমি আমার সন্তানটিকে সঙ্গে নিয়ে যাবো৷ তাহলে আর সমস্যা কোথায়?''

আসলে ভারতীয় এনজিও ‘নিরন্তর'এর পরিকল্পনাতেই ‘খবর লাহারিয়া' প্রকাশ করা শুরু হয় ২০০২ সাল থেকে৷ আগে থেকে পুরুষের দখল করে রাখা পেশার এই ক্ষেত্রটিতে ভারতের গ্রামীণ নারীদের প্রবেশের সুযোগ করে দেয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য৷ আর সম্পূর্ণভাবে নারী নিয়ন্ত্রিত সম্পাদকীয় এই দলটি স্বাভাবিকভাবেই নারীদের ইস্যুকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন৷

‘খবর লাহারিয়া'র হয়ে কাজ করার জন্যে ২০০৯ সালে ‘ইউনেস্কো লিটারেসি প্রাইজ' পুরস্কার দেয়া হয় নিরন্তরকে৷ পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক মীরার মতে, বৃহত্তর পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্যে তাদের পত্রিকাতে খুব সাধারণভাবে লেখা হয়৷ মীরা বলেন, ‘‘আমরা বড় ফন্ট ব্যবহার করি, কেননা যারা নতুন লেখাপড়া শিখছে, তারা এবং যারা কম শিক্ষিত তারাও তাহলে পত্রিকাটি পড়তে পারবে সহজেই৷ বুন্দেলখন্ডের খুব কম মানুষই নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার সুযোগ পান৷ আর আমরা পত্রিকা পড়ার জন্যে নারীদের উৎসাহিত করছি৷''

তবে ‘খবর লাহারিয়া' পত্রিকাটির প্রধান সমস্যা, পত্রিকাটির প্রচার বা এর কাটতি৷ সম্পাদকীয় দলের সদস্যরাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই পত্রিকার বিক্রির দায়িত্ব পালন করেন৷ সিনিয়র সম্পাদক শান্তি পত্রিকাটির সর্বশেষ সংস্করণ নিয়ে মানিকপুরের একটি গ্রামে যান৷ অঞ্চলটি পত্রিকাটির সদর দপ্তর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে৷ শান্তি বলেন, ‘‘সবাই যখন পত্রিকায় দেখে, একটি ট্রাকে আগুন লেগেছে এবং আমরা সেটি পত্রিকায় দিয়েছি, তখন তারা সত্যিই চিন্তিত হয়ে যায়৷ জিজ্ঞাসা করে, কেন আমি শিক্ষকতার কাজ করছি না? এই কাজ করতে গিয়ে আমার যদি কিছু হয়েও যায়, তাহলেও অন্তত মানুষ তো তা জানতে পারবে৷''

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন