1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একমাত্র ঘুমের সময় ছুটি

জেনিফার ফ্রাচেক/এসি২৪ এপ্রিল ২০১৪

কাজের বুয়া কিংবা কাজের লোক, পরিচারিকা কিংবা গৃহকর্মী, যে নামেই ডাকুন, কাতারের মতো আমিরাতে কাজ করতে গিয়ে এঁদের যে কি দশা হয়, তা ব্যক্ত হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিকতম বিবরণে৷

https://p.dw.com/p/1BnQD
ছবি: AP

শুধু ফুটবল বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম তৈরি করতে গিয়েই যে বিদেশি শ্রমিকরা কাতারে অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, এমনকি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান, এমন নয়৷ কাতারে অন্যান্য বিদেশি শ্রমিকরাও নিয়মিতভাবে অত্যাচার ও নিপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছেন, যেমন গৃহকর্মীরা, যাঁদের নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার সংগঠন এবার একটি বিবরণ প্রকাশ করেছে৷

অ্যামনেস্টির হয়ে যাঁরা তাঁদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, সংশ্লিষ্ট গৃহকর্মীরা তাঁদের যে সব কাহিনি শোনান, তা চমকে ওঠার মতো: অত্যন্ত কম মাইনে; সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টা কাজ; বিরতি কিংবা ছুটির দিন নেই বললেই চলে; ঘুমের সময় কম; মালিক বা মালকিনের হাতে অত্যাচার-অপমান৷ কাতারে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি বিদেশি ঘর পরিষ্কার করা, রান্না, বাচ্চাদের দেখাশোনা, ড্রাইভার কিংবা মালির কাজে নিযুক্ত৷ এঁদের মধ্যে মহিলাদেরই সংখ্যা বেশি: ৮৪ হাজার৷ মালিকরা কাতারি, ইউরোপীয়, মার্কিনি অথবা এশিয়া কি আফ্রিকার কোনো দেশের মানুষ৷ অপরদিকে ‘কাজের লোকেরা' আসেন প্রধানত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে৷

Symbolbild WM Katar 2022
মহিলারা শুনিয়েছেন, তাঁদের কিভাবে মারধর করা হয়ছবি: Getty Images

মালিক যেখানে ‘মা-বাপ'

‘একমাত্র ঘুমের সময়টাই আমার ছুটি' – এই শিরনাম দিয়ে অ্যামনেস্টি যে রিপোর্টটা প্রকাশ করেছে, তার জন্য ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের মার্চের মধ্যে ৫২ জন ‘কাজের বুয়ার' সঙ্গে কথা বলা হয়েছে৷ এঁরা সবাই কাতারে কাজ করেন৷ এছাড়া অ্যামনেস্টি স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে খোঁজখবর করেছে; যে সব দেশ থেকে গৃহকর্মীরা এসেছেন, সেই সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে৷

মহিলারা শুনিয়েছেন, তাঁদের কিভাবে মারধোর করা হয়, চুল ধরে টানা হয়, সিঁড়ি দিয়ে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়৷ ইন্দোনেশিয়ার এক মহিলার গায়ে ছুরি দিয়ে কাটার দাগ ছিল; তাঁর বুকে গরম ইস্তিরি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়, তার দাগ ছিল৷ তিনজন মহিলা জানিয়েছেন, তাঁদের ধর্ষণ করা হয়েছে৷ খুব কম ক্ষেত্রেই এই ধরনের ধর্ষণের কথা পুলিশকে জানানো হয় অথবা অভিযোগ দায়ের করা হয়, কেননা মহিলাদের হয়ত উল্টো শুনতে হতে পারে যে, তাঁরাই প্ররোচনামূলক আচরণ করেছেন৷

৫২ জন গৃহকর্মী: সংখ্যাটা খুব বেশি না হতে পারে; তবুও মহিলাদের বক্তব্যে তাঁদের রূঢ় বাস্তবের একটা ছবি ফুটে উঠেছে, বলে অ্যামনেস্টির ধারণা৷ অ্যামনেস্টির যে প্রতিনিধি কাতারের পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন, তিনি হলেন রেজিনা স্পোয়টল৷ কাতারে যে সব বিদেশি মহিলারা গৃহকর্মীর কাজ করেন, তাঁদের প্রায় অর্ধেককে কর্মজীবনে কোনো না কোনো যৌন অপব্যবহারের শিকার হতে হয়, বলে রেজিনার ধারণা৷ তার একটা প্রমাণ, প্রতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলিতে এই সব গৃহকর্মীদের তরফ থেকে ডজন-ডজন অভিযোগ আসে৷ গতবছর কাতারের মানুষ-পাচার প্রতিরোধ নিধির কাছে মাসে ২০০ থেকে ৩০০ অভিযোগ এসেছে টেলিফোনের মাধ্যমে৷

অজানাকে ভয় কি আমার ওরে?

একে তো যে এজেন্সিগুলি এই সব গৃহকর্মীদের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আনে, তারা এখানকার বাস্তব পরিস্থিতির কথাটা উহ্যই রাখে৷ তার ওপর আবার সহজ সরল মানুষেরা আর্বি ভাষায় লেখা চুক্তি পড়তেই পারেন না৷ কাতারে পা দিলেই তাঁরা পড়েন তথাকথিত ‘‘স্পন্সর আইনের'' আওতায়৷ স্পন্সর বলতে বোঝায় এক ধরনের গ্যারান্টর, যিনি অধিকাংশ অভিবাসীর ক্ষেত্রে স্বভাবতই মালিক নিজে৷ স্পন্সর আইনের কল্যাণে গৃহকর্মীরা গৃহকর্তার মেজাজ-মর্জির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল৷ স্পন্সরের অনুমতি ছাড়া গৃহকর্মীরা চাকরিও বদলাতে পারেন না, দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন না৷ করলে আবার সেটা দণ্ডনীয় অপরাধ! আইনের দিক দিয়েও গৃহকর্মীদের অবস্থান দুর্বল: কাতারের শ্রম আইনে ছুটির দিন থেকে শুরু করে কমপ্লেন করার ব্যবস্থা, সবই আছে; কিন্তু গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়৷

কাতার ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশে বিদেশি কর্মীদের অবস্থা সম্পর্কে ইতিপূর্বেও জানাজানি ও লেখালিখি হয়েছে৷ কিন্তু দৃশ্যত কাতার সরকারের উপর চাপ এখনও পর্যাপ্তভাবে বৃদ্ধি পায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য