‘রাষ্ট্রপতিই পারেন উদ্যোগ নিতে’
২২ নভেম্বর ২০১৩প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মতে, রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান অভিভাবক৷ তিনি যে কোনো সংকটকালে উদ্যোগ নিতে পারেন৷ এতে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই৷ পাশাপাশি নৈতিকভাবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংকট নিরসনে অবশ্যই ভূমিকা রাখতেও পারেন তিনি৷ সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়া এবং সর্বদলীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরও সেই পথ খোলা আছে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও সবাই আন্তরিক হলে সংকট নিরসন সম্ভব৷ তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে৷
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এখন দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনকেই একমাত্র পথ বলে মনে করছে৷ তারপরও সরকারের উদ্যোগের জন্য আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে চায় তারা৷ তবে তফশিল ঘোষণা হয়ে গেলে আর পেছনে তাকাবে না দলটি৷ এর আগ পর্যন্ত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবে৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ. স. ম. হান্নান শাহ মনে করেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া দেখা করার পর তিনি উদ্যোগ নিতে পারতেন৷ কিন্তু এখনও রাষ্ট্রপতির তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সংলাপে বসার যে তাগিদ দিয়েছেন, তা আসলে আন্তরিক ছিল না৷
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেখানে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী সংকট এড়াতে এবং আলোচনা শুরু করতে বিএনপির মির্জা ফখরুলের প্রতি আহ্বান জানান৷ তবে মির্জা ফখরুল তেমন কিছু বলেননি৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মির্জা ফখরুলকে আহ্বান জানিয়েছেন, তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বললেই যেন আলোচনা শুরু হতে পারে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পর এবং নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হয়ে যাওয়ার পর, এখন কি নিয়ে আলোচনা হবে?
প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক তো বলেই দিয়েছেন, সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পর এখন আর আলোচনা করে কোনো সমস্যার সমাধান করার সুযোগ নেই৷ এমন পরিস্থিতিতে এখন যে আলোচনার কথা উঠছে, তাতে কোনো ফল আসবে বলে মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অবশ্য এর ব্যাখা দিয়ে বলেছেন, এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হলে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিয়েই আসতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখতে হলে সঠিক সময়ে যেমন নির্বাচন করতে হবে, তেমনি নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া কোনো সুযোগ নেই৷ তবে এ মুহূর্তে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয়ার খুব একটা সময়ও পাবে না বিএনপি৷ কারণ, আগামী দুই/তিন দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে৷ আর তফশিল ঘোষণা হলে মন্ত্রিসভা আর সম্প্রসারণ করা হবে না হলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তাই যা করার তফশিল ঘোষণার আগেই করতে হবে৷ তিনি অবশ্য মনে করেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের দায়িত্ব অনেক বেশি৷ কেন না, সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন তাদের উপহার দিতে হবে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ. স. ম. হান্নান শাহ মনে করেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না৷ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠিত না হলে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায়ের মধ্য দিয়েই সংকটের উত্তরণ করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কোনো নির্বাচন নয়৷ নির্বাচনকালীন সরকার সর্বদলীয় বা বহুদলীয় হলে চলবে না, নির্দলীয় হতে হবে৷''
সংকট উত্তরণে এখনো সময় আছে – এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক ঘণ্টাই সরকারের জন্য যথেষ্ট৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সরকারকে বলবো আর সময়ক্ষেপণ না করে সংবিধানে নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা সংযোজন করুন৷ নিজেদের ভুল সংশোধন করে নিন৷''