একসময় আমরা একটি পৃথিবীই ব্যবহার করতাম
শেষ কবে আমরা এক পৃথিবীর সমান সম্পদ ব্যবহার করেছিলাম মনে আছে? ১৯৭০ সালে৷ এখন যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের অনেকের তখনও জন্মই হয়নি৷ তখন থেকে আমাদের চাহিদার যোগ হয়েছে আরো এক পৃথিবীর সমান সম্পদ৷ সংখ্যার হিসেবে দেখুন এই পরিবর্তন৷
সংখ্যায় বাড়ছি আমরা
১৯৭০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ৩৭০ কোটি৷ এখন তা ছাড়িয়েছে ৭৫০ কোটি৷ এর মধ্যে শুধু চীনের জনসংখ্যাই ১৪০ কোটি, ভারতের ১৩৩ কোটি৷ (সূত্র: স্টাটিস্টা, জার্মান ফাউন্ডেশন ফর ওয়ার্ল্ড পপুলেশন)
কোথায় থাকি আমরা?
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৪ ভাগই ১৯৭০ সালে বাস করতেন গ্রামে৷ কিন্তু খুব দ্রুতই সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে৷ ২০১৬ সালে এই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫ ভাগে৷ (সূত্র: ওয়ার্ল্ড ব্যাংক)
নগর সভ্যতা
আমরা দিনদিন শহুরে নাগরিকে পরিণত হচ্ছি৷ ১৯৭০ সালে পৃথিবীর ১৩৪ কোটি মানুষ বাস করতেন শহরে৷ ২০১৬ সালে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বাস করছেন ৪০০ কোটি মানুষ৷ এমনকি অনুন্নত দেশগুলোতেও বাড়ছে শহরে বাস করার প্রবণতা৷ (সূত্র: ওয়ার্ল্ড ব্যাংক)
পরিবহন ব্যবস্থা
নিজের একটা গাড়ি থাকবে, চিন্তা করতে ভালোই লাগে, তাই না? আপনি কি জানেন এই মুহূর্তে পৃথিবীতে কী পরিমাণ গাড়ি আছে? এর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ দুঃসাধ্য, কিন্তু একটা ধারণা করাই যেতে পারে৷ ১৯৭০ সালে পৃথিবীর রাস্তায় ছিল ২৫ কোটি গাড়ি৷ ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১০০ কোটির কাছাকাছি৷ ২০২০ সালে তা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ অবশ্য এর মধ্যে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের গাড়িই আছে৷ (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
বাসের বিকল্প প্লেন!
বোয়িং ৭৪৭ প্রথম যাত্রী পরিবহন সেবা ঘোষণা করে ১৯৭০ সালে৷ ৩২৪ জন যাত্রী নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন উড়ে যায় সেই বিমান৷ সেই বছর ৩১ কোটি মানুষ বিমানে চড়েছিলেন৷ ২০১৬ সালে আকাশপথে যাত্রা করেছেন ৩৭০ কোটি মানুষ৷ (সূত্র: ওয়ার্ল্ড ব্যাংক)
মাটির তলার সম্পদ নীচেই রাখুন
তেলের ব্যবহার সম্পর্কে ভেবে দেখেছেন কখনও? এখনও মাটির তলায় প্রচুর পরিমাণ তেল মজুদ আছে৷ ভয়ংকর দুর্যোগ এড়াতে চাইলে এই সম্পদ মাটির নীচেই রাখা উচিত৷ কিন্তু আমরা করছি ঠিক উলটোটা৷ ভূগর্ভ থেকে কালো সোনা উত্তোলনের পরিমাণ দিনদিন বেড়েই চলেছে৷ ১৯৭০ সালে তেল উৎপাদন ছিল দিনে ৪৮ হাজার ব্যারেল৷ ২০১৬ সালে এ পরিমাণ ৯২ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে৷ (সূত্র: স্টাটিস্টা)
বায়ু দূষণ
আমরা যাই করি, তাতেই কার্বন নিঃসরণ হয়৷ আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, আমরা এই কাজ খুব ভালোভাবেই করি৷ ১৯৭০ সালে পৃথিবীর মানুষ ১৪শ’ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ করেছিল৷ ২০১৫ সালে কত, কোনো ধারণা আছে? ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টন৷ (সূত্র: স্টাটিস্টা)
হারিয়ে যাচ্ছে বন-জঙ্গল
বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান রেইনফরেস্ট হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় আমাজনকে৷ এত বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড এই বন শুষে নেয় যে একে অনেকে পৃথিবীর ‘সবুজ ফুসফুস’ নামেও ডাকা হয়৷ কিন্তু সেই আমাজনেও আমরা হাত দিয়েছেই৷ নির্বিচারে কাঠ কাটায় ছোট হয়ে আসছে পৃথিবীর ফুসফুস৷ ১৯৭০ সালে ৪১ লাখ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ২০১৬ সালে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ বর্গকিলোমিটারে৷ ৪৬ বছর পর আমরা পাচ্ছি ১৯ ভাগ ছোট এক ফুসফুস৷