একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের ভূমিকা
আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে নির্বাচন কাভার করে আসছেন এ রকম কয়েকজন সাংবাদিকের মুখেই শুনুন নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের ভূমিকা কেমন হয় আর কেমন হওয়া উচিত৷
হারুন আল রশীদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, দৈনিক প্রথম আলো
সব মানুষেরই দল ও মত আছে, একজন সাংবাদিকেরও থাকবে৷ কারণ, রাজনৈতিক মত ও দর্শন থাকাটা দোষের নয়৷ তবে সাংবাদিক যখন তাঁর প্রতিবেদন তৈরি করবে, সেই প্রতিবেদন যেন তাঁর দলীয় মত ও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত না হয়, বিশেষ করে নির্বাচনে৷ কারণ, এই বিশেষ গুণটিই একজন সাংবাদিককে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা হতে সাহায্য করে৷
সোমা ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি, চ্যানেল আই
নির্বাচনের পরিস্থিতি যেমনই থাকুক না কেন তার সাথে খাপ খাইয়ে মূল খবরটা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়াটাই সাংবাদিকদের মূল কাজ৷ সামান্য ভুল কিংবা কোনো পক্ষকে কোনো সুবিধা দিতে গিয়ে রাষ্ট্র কিংবা জনগণ যেন ক্ষতির শিকার না হয়, সেটিই মুখ্য বিষয়৷ এছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচনে কালো টাকার যে ছড়াছড়ি থাকে, তার হাতছানি পাশ কাটিয়ে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকতে হয়৷
মইনুল হক চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
নির্বাচনের মাঠে সব দল ও প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছে কিনা তা গণমাধ্যমকর্মীরাই প্রতিবেদনে তুলে ধরেন৷ রাজধানীকেন্ত্রিক সাংবাদিক ও প্রান্তিক অঞ্চলের সাংবাদিকদের ভোটের দিন সঠিক ও তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশনে অসম প্রতিযোগিতা দেখা যায়৷ সে ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই এবং মাঠের পরিস্থিতির সঠিক চিত্র তুলে ধরতে বেশ বেগ পেতে হয়৷ ফলাফল প্রচারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রভিত্তিক আনুষ্ঠানিক ফলাফল ছাড়া তথ্য প্রচার করা উচিত নয়৷
আরাফাত সিদ্দিক, জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি, এনটিভি
বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের ভূমিকা থাকে তাঁর প্রতিষ্ঠানের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী৷ এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সংবাদ প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীন দল ও তাদের প্রার্থীদের আচরণবিধি লংঘনের বিষয়টি সরাসরি সম্প্রচার বা প্রকাশ করছে না৷ যতটুকু প্রকাশ পায়, তা অন্যের অভিযোগ হিসেবে জানানো হয়৷ কোনো অনিয়ম দেখা গেলে তা যথাযথ তথ্য প্রমাণসহ তুলে ধরতে হবে৷ সেখানে সব পক্ষের বক্তব্য থাকা উচিত৷
শারমিন ইব্রাহীম, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলা ভিশন
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রার্থী আর ভোটারের এই উৎসবের সাথে সম্পৃক্ততাই তুলে ধরতে চান সাংবাদিক৷ সংবাদ উপস্থাপনের মূল শর্ত ক্রসচেক বা তথ্য যাচাই-বাছাই করে নেয়া৷ কোনো প্রার্থীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে যেভাবে প্রভাবিত করে, তেমনি সাংবাদিকের পেশাদারিত্বকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করে৷ ব্যক্তিগত পছন্দ, মতাদর্শের উর্ধ্বে থেকেই সংবাদ পরিবেশন করবেন– এটাই কাম্য৷
নিয়াজ মোর্শেদ, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন
যাঁরা নীতিনির্ধারণীর ভূমিকায় থাকেন, তাঁদের নির্দেশে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করে মাঠের সাংবাদিকরা কাজ করেন৷ এ কারণে সংবাদ প্রকাশে মাঠের সাংবাদিকের ভূমিকা হয় পক্ষপাতমূলক৷ তবে বেশির ভাগ সাংবাদিক মাঠে কাজ করার সময়, সব ধরনের সংবাদই সংগ্রহ করেন৷ দুনিয়ার কোনো সংবাদমাধ্যমই ভোটের সময় নিরপেক্ষ না৷ তাঁরা বিভক্ত হয়ে পড়েন৷
আসমা মিতা, সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
ভোটের সময় সাংবাদিকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ নির্ভুল তথ্য জানানো৷ কারণ, তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রয়োজনে চারপাশে অনেক গুজব ছড়ায়৷ সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ প্রবণতা আরো বেড়েছে৷ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ বিষয়টি বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে৷ কাজেই নির্ভুল তথ্য দেয়াই সাংবাদিকদের মূল কাজ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি৷
ইমরান হোসেন, বাংলা ট্রিবিউন
ভোটের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন হয়– এ প্রশ্নের জবাব আপেক্ষিক৷ অনেকে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে প্রকৃত দায়িত্বটা পালন করতে চান না, আবার আমাদের কেউ কেউ এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে বেশি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি৷ আমি মনে করি, কমিশনের নিজের স্বার্থেই গণমাধ্যমকে অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেয়া উচিত৷ আর গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশের সুযোগ নিয়ে এমন আচরণ করা উচিত নয়, যাতে ভোট বিঘ্নিত হয়৷
রাসেল আহমেদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, যমুনা টেলিভিশন
কোনো দলের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি না দিয়ে মানুষের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত৷ সেজন্য সাংবাদিকদের চোখ-কান খোলা থাকা দরকার৷ জানা উচিত, কোনটা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, কোনটা আরপিও তে নিষেধ, তার সবটাই৷ তবে বাস্তবতা হলো, সব সময় সাংবাদিক তার চোখ খোলা রাখতে পারেন না৷ নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকবার৷ সবচেয়ে বড় কথা, নিজের দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকা৷
তানিয়া রহমান, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ৭১ টেলিভিশন
আমি মনে করি, সাংবাদিকরা জনগণের মুখপাত্র৷ তাই জনগণের কথাই সাংবাদিকরা আগেও বলেছেন, আসছে নির্বাচনেও বলবেন৷