একান্নবর্তী পরিবারের স্বপ্নপূরণ
৩ আগস্ট ২০১৬ইটালির সাউথ টিরোল প্রদেশের ফিচ এলাকায় পিশলার পরিবারের নতুন বাড়ি শোভা পাচ্ছে৷ ২০০৯ সাল থেকে তারা তথাকথিত ‘প্যাসিভ হাউস'-এ বসবাস করছে৷ অর্থাৎ বাড়ির ১৮০ বর্গ মিটার জুড়ে কোনো হিটিং ব্যবস্থা নেই৷ সৌরশক্তি সঞ্চয় করে বাড়ি স্বাধীনভাবে গরম রাখা হয়৷
স্থপতি আর্টুর পিশলার বাবা-মা সহ নিজস্ব পরিবারের জন্য বাড়িটি তৈরি করেছেন৷ নীচের দুই তলায় তিনি স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন৷ খোলা রান্নাঘর সহ বসার ঘরটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ স্ত্রী ক্রিস্টিনে বলেন, ‘‘আমরা খোলামেলা ঘরের কথা ভেবেছিলাম৷ অর্থাৎ একটি ছাদের নীচে একটি ঘরেই পারিবারিক জীবন সাজানো হবে৷ তাই এখানে শোবার ঘর ও বাথরুম ছাড়া কোথাও কোনো দরজা নেই৷ বাকিটা সব একই জায়গায় রয়ছে৷''
বসার ঘরের সিলিং-এর উচ্চতা ৫ মিটার ৬০ সেন্টিমিটার৷ জানালা মেঝে পর্যন্ত বিস্তৃত৷ ফলে ঘরে অনেক আলো ঢোকে৷ একই সঙ্গে সাউথ টিরোল-এর মনোরম দৃশ্যও উপভোগ করা যায়৷ কাঠের থামগুলি সত্যি দেখার মতো, সেগুলির উপযোগিতাও রয়েছে৷
আর্টুর পিশলার বলেন, ‘‘এই সব থাম এই মুহূর্তে বাড়ি তৈরির উপকরণ মাত্র৷ তবে এর সুবিধা হলো, ভবিষ্যতে পরিবারের সদস্যসংখ্যা বাড়লে আরও ঘর যোগ করা সম্ভব হবে৷ এর জন্য বাড়ির থার্মাল খোলস বা বাইরের স্তরে পরিবর্তন করতে হবে না৷'
বাড়ির অনেক কিছুই কাঠ দিয়ে তৈরি৷ যেমন ভেতরের বারান্দা৷ আর্টুর পিশলার বলেন, ‘‘সিঁড়ির উপরের ঘরটি তেমন ব্যবহার হয় না৷ তাই সেটিকে আমরা আমাদের নিজস্ব যোগাযোগের জন্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম৷ প্রথমে নিজের জন্য সুন্দর করে সাজাতে চেয়েছিলাম৷ শেষ পর্যন্ত সেটি বাচ্চাদের খেলার জায়গা হয়ে উঠলো৷ এখান থেকে সরাসরি রান্নাঘর আর বসার ঘর দেখা যায়৷''
গরম পানির জন্য একটি ছোট চুলা ছাড়া বাড়িতে অন্য কোনো হিটিং ব্যবস্থা নেই৷ সৌরশক্তি দিয়েই বাড়িটি গরম রাখা হয়৷ ভালো ইনসুলেশনের কারণে উত্তাপ পালাতে পারে না৷ বাড়িটি একেবারে এয়ার টাইট৷ তবে বাসিন্দারা যাতে যথেষ্ট অক্সিজেন পায়, তার জন্য একটি তাজা বাতাসের প্লান্ট রয়েছে৷ পিশলার বলেন, ‘‘এই স্ট্যারৎসিং শহরেও গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে৷ ভুললে চলবে না, যে হিট ইনসুলেশন শীতে কাজে লাগে, গ্রীষ্মেও সেটি ঘর ঠান্ডা রাখে৷
দোতলায় বাবা-মার শোবার ঘর, বাথরুম ও শিশুদের ঘর৷ আর্টুর পিশলার-এর বাবা-মা তিন তলায় থাকেন৷ তাঁদের বারান্দা সহ ৭০ বর্গমিটার ফ্ল্যাটের আলাদা প্রবেশপথ রয়েছে৷ আর্টুর পিশলার বলেন, ‘‘সৌরশক্তি পেতে দক্ষিণ দিকে মুখ করে বাড়িটি বানানো খুব জরুরি ছিল৷ আমাদের এই ‘প্যাসিভ হাউস'-এর জ্যামিতির মধ্যে শান্তির আমেজ রয়েছে৷ চারিপাশের নিসর্গের সঙ্গে সেটা বেশ খাপ খেয়ে যায়৷''
এই স্থপতি একাধিক প্রজন্মের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করতে সফল হয়েছেন, যে একই সঙ্গে টেকসই ও আধুনিক স্থাপত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে৷
''