ম্যার্কেল- একের ভেতর তিন
১০ জুন ২০১৩পুরো নাম: আঙ্গেলা ডরোথেয়া ম্যার্কেল
জন্ম: ১৭ই জুলাই, ১৯৫৪, হামবুর্গ, জার্মানি
পেশা: রাজনীতিবিদ, পদার্থবিদ
বাবা: হোর্স্ট কাসনার
মা: হ্যারলিন্ড কাসনার
স্বামী: উলরিশ ম্যার্কেল (১৯৭৭ – ৮২)
ইওয়াখিম সাওয়ার (১৯৯৮)
উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব: জার্মান চ্যান্সেলর (২০০৫-)
সিডিইউ সভাপতি (২০০০-)
জার্মানির প্রথম মহিলা চ্যান্সেলর৷ ২০০৫ সালে যখন প্রথমবার নির্বাচিত হলেন অনেকের মনেই সংশয় ছিল – এমন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তো? সেই সংশয় দূর হয়েছে অনেক আগেই৷
আগামী সেপ্টেম্বরেই জার্মানির সাধারণ নির্বাচন৷ তাঁকে ডিঙ্গিয়ে আর কেউ চ্যান্সেলর হবেন এমন সম্ভাবনা খুব কম, কারণ, গত আট বছরে রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেল যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা, জনপ্রিয়তা বেশ বেড়েছে৷ গ্রিস থেকে শুরু করে ইটালি, স্পেন, ফ্রান্সসহ বেশ কিছু দেশ যখন অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হাবুডুবু খাচ্ছিল তখনও ম্যার্কেল জার্মানির স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছেন শক্ত হাতে৷ ইইউ দেশগুলোতে স্থিতিশীলতার স্বার্থে প্রণীত অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম রূপকারও তিনি৷ নিজের দেশেও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন৷ ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমার পারমাণবিক চুল্লির ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর থেকে জার্মানির ধীরে ধীরে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত তারই একটি৷
জার্মানিতে সরকারের মেয়াদ চার বছরের৷ চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলের দ্বিতীয় মেয়াদ চলছে৷ আগামী নির্বাচন জিতে আরো চার বছরের জন্য দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল৷ অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ম্যার্কেল৷ গত আট বছরে চ্যান্সেলর হিসেবে বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেকবার৷ তাঁর দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)-এর কয়েকজন সদস্য-মন্ত্রী বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন৷ কিন্তু তাদের কলঙ্ক ম্যার্কেলের ব্যক্তিত্ব আর নেতৃত্বগুণকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি৷ তাই সিডিইউ ধরে রেখেছে ক্ষমতায় থাকার জোর সম্ভাবনা, পুরোভাগে তাদের ‘লৌহমানবী' তো আছেনই৷
ছোট বেলা থেকেই ম্যার্কেল মেধাবী৷ খুব অল্প বয়সে জন্মস্থান হামবুর্গ ছেড়ে বাবা মায়ের সঙ্গে চলে আসেন তখনকার পূর্ব জার্মানির ট্যমপ্লিন শহরে৷ সেখানেই কেটেছে স্কুলজীবন৷ তারপর লাইপসিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে৷ ১৯৭৭ সালে সহপাঠী উলরিশ ম্যার্কেলকে বিয়ে করেন৷ সেই সংসার টেকেনি৷ চার বছর পরই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁদের৷ তবে স্বামী গেলেও তাঁর পদবিটি রেখেছেন সঙ্গে৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি করেছেন ১৯৮৬ সালে৷ রাজনীতিতে আসা তারও চার বছর পরে, ৯০ সালে, দুই জার্মানি তখন এক হওয়ার পথে৷ সে বছরই সিডিইউ দলে যোগ দেন ম্যার্কেল৷ দলের সাধারণ সদস্য থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য, তারপর মন্ত্রী, সিডিইউ দলের প্রধান এবং চ্যান্সেলর – এত অর্জন ধরা দিতে সব মিলিয়ে ১৫ বছরও লাগেনি৷
পদার্থবিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, জার্মানির চ্যান্সেলর – এসব পরিচয়ে না চিনলেও খেলাপাগল আর শিশুরা কিন্তু ম্যার্কেলকে খুব চেনেন৷ ফুটবল খুব ভালোবাসেন৷ অনেকের মতে বারাক ওবামার পর বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাষ্ট্রনেতা ম্যার্কেল৷ জার্মান ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ম্যাচেই দর্শকের ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে৷ অলিম্পিক বা ক্রীড়াঙ্গনের অন্য বড় আসরের উদ্বোধনী বা সমাপনী অনুষ্ঠানে ম্যার্কেলের উপস্থিতি প্রায় অবধারিত৷ আজকাল অনেক ঘরেও ঢুকে পড়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ দ্বিতীয় স্বামী অধ্যাপক ইওয়াখিম সাওয়ারের সঙ্গে পারিবারিক জীবন কাটে বার্লিনে৷ ওই শহর তো বটেই, এমনকি জার্মানি ছাড়িয়েও বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন শহরে দেদার বিক্রি হচ্ছে ‘ম্যার্কেল বার্বি ডল'৷ পুতুল প্রায় সব শিশুরই পছন্দ – এমন জিনিস তাদের হাত ধরে ঘরে ঘরে তো ঢুকে পড়বেই!
মারুফ আহমদ
আশীষ চক্রবর্ত্তী