এত নিরাপত্তা-ব্যবস্থা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কেন সহিংসতা
লোকসভা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি আধা সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারপরও কেন সহিংসতামুক্ত হচ্ছে না নির্বাচন?
সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী
পশ্চিমবঙ্গে এবার মোট ৯২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে। মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ে ৩৬০ কোম্পানি, উত্তর প্রদেশে ২৫০ কোম্পানি দিয়েছিল কেন্দ্র। প্রতি কোম্পানিতে একশজনের মতো জওয়ান থাকেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গে ৯২ হাজার আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানের ভোটের ডিউটি করার কথা।
কী করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী?
কেন্দ্রীয় বাহিনী যেখানে যেদিন ভোট হচ্ছে, তার অনেকদিন আগেই পৌঁছে যাচ্ছে। যেমন বসিরহাট কেন্দ্রের অন্তর্গত সন্দেশখালিতে ১ জুন ভোট। কিন্তু দিন সাতেক আগে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছে গেছে। তারা রুট মার্চ করছে। ভোটের দিন তাদের মূল দায়িত্ব থাকে ভোটকেন্দ্রের ভিতরে।
পুলিশও প্রচুর
প্রতিটি পর্বে যে সব কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে, সেখানে প্রচুর পুলিশ কর্মীকে ভোটের কাজে লাগানো হচ্ছে। তারা ভোটের আগে এলাকায় ঘুরছে। ভোটের দিন তাদের মূল দায়িত্ব থাকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে শৃঙ্খলারক্ষার ব্যবস্থা করা।
তারপরেও অশান্তি
এত কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ সত্ত্বেও গত ছয় পর্বের ভোটেই অশান্তি হয়েছে। ভোটদাতাদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে, বোমাবাজি, রাজনৈতিক দলের কর্মী খুন, ভাঙচুর, ভুয়া এজেন্ট নিয়োগ, প্রার্থীদের ঘিরে বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
‘শান্তিপূর্ণ ভোট হবে কী করে?’
অবসরপ্রাপ্তপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''শান্তিপূর্ণভাবে ভোট কে করাতে চাইছে? ২০১১ সালে ভোটে সোনিয়া গান্ধীর নিশ্চিত করেছিলেন যে, পোলিং, প্রিসাইডিং অফিসার কে হবেন, তা কেন্দ্রীয় স্তর থেকে ঠিক করে দেয়া হবে। তারপর আর হয়নি। এবারো হয়নি। এবার তৃণমূল ও বিজেপি চাইছে, হয় তৃণমূল জিতুক বা বিজেপি জিতুক। কংগ্রেস বা বামেরা যেন কোনো সুবিধা না হয়। তাহলে শান্তিপূর্ণ ভোট হবে কী করে?''
'কেন ব্যবস্থা নেয়া হয় না?'
নজরুলের প্রশ্ন, ''ভোটের সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। তাহলে বুথের কাছে ৩০-৩৫ জন বা তার বেশি মানুষ কী করে জড়ো হচ্ছে? পুলিশ কী করছে? বাঁশ হাতে, লাঠি হাতে মানুষের ছবি দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।''
'শাসক দলের চাপ'
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলেছেন, ''কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন নিয়োগ করে তা ঠিক। তারা এখানকার অলিগলি চেনে না। বাইরে থেকে আসে। তারাও পুরোপুরি স্থানীয় কর্মকর্তা ও পুলিশের উপর নির্ভর করে। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের উপর শাসক দলের চাপ থাকাটা স্বাভাবিক।''
'বেশি উদ্য়োগও নেয় না'
শুভাশিসের দাবি, ''কেন্দ্রীয় বাহিনী খুব বেশি উদ্য়োগও নেয় বলে মনে হয় না। সামনে ঝামেলা হলে তারা তা থামাবার চেষ্টা করে। তারা ঝামেলার মধ্যে জড়াতে চায় না। হয়ত তারা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেক কথা শুনে আসে বলে এমন হয়।'' তার মতে, ''এই কথাটাও সত্যি গোলমাল হলে শাসক দলই প্রধাণত লাভবান হয়।''
অপকৌশল?
তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা একাধিক বিরোধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ভোটকে্ন্দ্রের কাছাকাছি গেলেই তাদের ঘিরে ধরছে তৃণমূলের সমর্থকরা৷ ফলে প্রার্থীরা এক জায়গায় অনেকক্ষণ আটকে পড়ছেন। গত ছয় পর্বে বেশ কিছু কেন্দ্রে এই কৌশল নেয়া হয়। বিরোধী প্রার্থীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়া, গাড়ির কাচ ভাঙা, প্রার্থীকে তাড়া করার দৃশ্য পর্যন্ত দেখা গেছে৷ নন্দীগ্রামে বিজেপি তৃণমূল এজেন্টদের ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ।
ভুয়া এজেন্ট বসানো
মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম একাধিক বুথে গিয়ে ভুয়া এজেন্টদের ধরে বের করে দেন। এরপর এই ঘটনা পরবর্তী পর্বে নিয়মিত হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এ বিষয়ে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
অশান্তি বন্ধ হবে কী করে?
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। কিন্তু আগের তুলনায় অনেক কড়া ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করা হচ্ছে, তাহলে অশান্তি থামাতে আর কী ব্যবস্থা নিতে হবে?