হায়দরাবাদ কাণ্ডের অভিযুক্তরা নিহত
৬ ডিসেম্বর ২০১৯পুলিশের গুলিতে মারা গেল হায়দরাবাদ ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত চার ধর্ষক। এই চার অভিযুক্ত মহম্মদ আরিফ(২৬), জল্লু শিবা(২০), জল্লু নবীন (২০), চিন্তাকুন্টা চেন্নাকেশাভালু (২০) গত দুদিন ধরে পুলিশের হেফাজতে ছিল। পুলিশের দাবি, শুক্রবার রাত তিনটে নাগাদ তাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তের কাজ চলছিল, তখন এক অভিযুক্ত বাকি তিনজনকে ইশারা করে। দুজন পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অন্যরা পালাতে থাকে। তখনই পুলিশ গুলি চালায়। চারজনই সেই গুলিতে মারা গিয়েছে। সাইবারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনার বলেছেন, ''রাত তিনটে থেকে ভোর ছ-টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বাকি তথ্য পরে জানানো হবে।''
কিন্তু পুলিশের এই তত্ত্ব মানবাধিকারকর্মীরা মানতে চাইছেন না। তাঁরা এই সংঘর্ষের কাহিনিকে বানানো বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। চার অভিযুক্ত ধর্ষককে এভাবে গুলি করে মারার পর প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি পূর্বপরিকল্পিত হত্যার ঘটনা? পুলিশ কি সংঘর্ষের ছলে ধর্ষকদের গুলি করে হত্যা করল? মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে? আগে পায়ে কেন গুলি চালানো হল না? এরকম একটি স্পর্শকাতর মামলার অভিযুক্তদের হাতে কেন হাতকড়া পরানো হয়নি? কোনও অপরাধ হলে পুলিশ অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে তদন্ত করে, ঘটনার পুনর্বিন্যাস করার চেষ্টা করে, কিন্তু তখন সঙ্গে নিরপেক্ষ লোকেদের নিয়ে যাওয়া হয়। ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। এখানে কি তা করা হয়েছিল? মানবাধিকার কর্মী বৃন্দা গ্রোভার বলেছেন, এভাবে অভিযুক্তদের হত্যা করে মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়া যাবে না। কতজন পুলিশ ছিল, অভিযুক্তদের পায়ে কেন গুলি করা হল না?
প্রাক্তন পুলিশ কর্তারা অবশ্য এই ঘটনার পক্ষে সাফাই দিয়েছেন। অন্ধ্র প্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিপি এন স্বর্ণজিৎ সেনের যুক্তি, এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশের যা করা উচিত তাই করেছে। ওই সময় তাঁরা পা লক্ষ্য করে গুলি চালাতে পারে না। উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা বিক্রম সিং এর যুক্তিও তাই।
টুইটার, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে পুলিশের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছে সাধারণ মানুষের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ধর্ষকরা উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। এমনকী, বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠৌর টুইট করে বলেছেন, ''আমি হায়দরাবাদ পুলিশকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে নেতৃত্বকেও অভিনন্দন জানাই, তাঁরা পুলিশকে পুলিশের মতে কাজ করতে দিয়েছেন।''
আবার ঘটনার বিরোধিতা করেও সোশ্যাল নেটওয়ার্কে সরব হয়েছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে অপরাধ প্রমাণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ধর্ষক বলা যায় না। তারা অভিযুক্ত মাত্র। দ্বিতীয়ত, পুলিশ কখনওই বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। তার জন্য আদালত আছে। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সকলকে যেতে হয়।
এই ঘটনা ঘটল সেই সময়ে যখন উন্নাওয়ের ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে একদিন আগে। ধর্ষিতা এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। পাঁচ অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। জয়পুর, রাঁচি, দিল্লিতে ধর্ষণ ও হত্যা হয়েছে। সেখানেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হায়দরাবাদের অভিযুক্তদের হত্যা নিয়ে চিন্তা ও আশঙ্কা বেড়েছে মানবতাবাদীদের।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এনডিটিভি)
গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...