এবার খালেদা জিয়ার ৭ বছরের জেল
২৯ অক্টোবর ২০১৮এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি আরেকটি মামলায় তাঁকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ তিনি এখন সেই শাস্তি ভোগ করছেন৷
আদালত একইসঙ্গে প্রত্যেকের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত৷ এছাড়াও ট্রাস্টের নামে ঢাকা শহরের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের মালিকানায় আনার আদেশ দেয়া হয়েছে৷
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ ৫-এর আদালত ডা. আখতারাজ্জামান সোমবার বেলা ১২টার পর এই রায় ঘোষণা করেন৷ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই এ রায় ঘোষণা করা হয়৷ তিনি পিজি হাসপতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আছেন৷ তাছাড়া তিনি এই আদালতে হাজির হতে রাজি হননি৷
এ মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য তিন জন আসামি হলো খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান৷ হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷ বাকি আসামিরা কারাগারে আছেন৷
২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁ থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)৷ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনসহ চারজনকে আসামি করা হয়৷ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় মামলায়৷
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়৷ মামলাটির কার্যক্রম রাজধানীর বকশী বাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে চলে আসছিল৷ গত ৪ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ আদালতের কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে৷ গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম সেখানে আদালত বসে৷ ওইদিন খালেদা জিয়া আদালতে গিয়ে বিচারককে বলেন, তিনি অসুস্থ, বারবার তিনি এ আদালতে আসতে পারবেন না৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘ যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন৷'' গত ১২ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ধার্য তারিখেও আদালতে যেতে অস্বীকৃতি জানান খালেদা জিয়া৷এর পরের শুনানির সময় খালেদা জিয়া আসতে পারবেন কিনা বিচারক তা জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানাতে পারবেন বলেন৷ বিচারক তাঁদের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে কারা কর্তৃপক্ষকে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন৷ ১৯ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার দুই আইনজীবী কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ ২০ সেপ্টেম্বর তাঁদের বক্তব্য শোনার পর বিচারক সিদ্ধান্ত দেন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই মামলাটির বিচার কাজ চলবে৷
এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয়৷ সেই রিভিশন আবেদন গত ১৪ অক্টোবর খারিজ করে দেন হাইকোর্ট৷ এরপর ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) আবেদনটির ওপর শুনানি হয়৷ সোমবার (২৯ অক্টোবর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চখালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই মামলা চালানোর আদেশ দেন৷ এরপর একই দিনে পুরনো ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার মামলার রায় ঘোষণা করলো৷
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, ‘‘এই মামলায় খালেদা জিয়া ও তাঁর সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ এই মামলায় সর্বনিম্ন তিন এবং সর্বোচ্চ সাত বছরের শাস্তির বিধান আছে৷ আদালত মোট ১৫টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শাস্তি দেন৷ তারমধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার অন্যতম৷ আদালত বলেছেন, এটা যাঁরা ক্ষমতায় আছেন এবং ক্ষমতায় ছিলেন, সবার জন্য ওয়ার্নিং৷ আইন সবার জন্য সমান এবং নিজস্ব গতিতে চলবে৷''
আর খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আদালতে যাইনি৷ এটা একতরফা রায়৷ আদালত একতরফা রায় দিলে আমাদের কী করার আছে৷ আমরা পরে আলোচনা করে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানাবো৷''
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি আরেকটি দুর্নীতির মামলা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। তবে চিকিৎসার জন্য এখন তিনি কারা তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ)-তে রয়েছেন৷