এবার ডেঙ্গুর চেহারা আলাদা, তাই ঝুঁকি বেশি
১৬ জুলাই ২০১৯স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে এবছর সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সারাদেশে ৪ হাজার ৮৫২ জন। তারা এপর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে শিশুসহ ১২ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি জুলাই মাসের ১৬ দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭৬৭ জন। যা গত ৫ মাসের সমান। জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ১৬ জুলাই ভর্তি হয়েছেন ১৭১ জন । এক দিনে এপর্যন্ত সর্বোচ্চ ভর্তি হয়েছেন ২৭৭ জন ১০ জুলাই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে এপ্রিল মাসে ২ জন এবং জুলাই মাসে একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত বছর সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৮৪ জন সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার মধ্যে ২৬ জন মারা যান। আর আগে ২০০২ সালে ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিলো।
কিন্তু এবার জুন ও চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনের যে চিত্র তাতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিনিউকেবল ডিজিজ শাখা থেকে চলতি বছরের ৩ থেকে ১২ মার্চ ঢাকার দুই সিটি এলাকার ৯৭টি ওয়ার্ডে একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপে ১০০ টি জায়গার ৯৯৮টি বাড়ি থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আর সেই নমুনায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার উচ্চমাত্রায় লার্ভা পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিক ড্রাম, বালতি, নির্মানাধীন বাড়ির খোলা ট্যাঙ্ক, ফুলের টব থেকে যে পানির নমুনা নেয়া হয় সেই পানিতে এডিস মশার লার্ভা ছিলো সর্বোচ্চ। উত্তর সিটির ৮টি এবং দক্ষিণ সিটির ১৫টি ওয়ার্ডকে সর্বাধিক ডেঙ্গু প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিবেশষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার শকড সিনড্রম বেশি হচ্ছে। এর আগে আমরা দেখেছি হেমোরেজিক ডেঙ্গু। শকড সিনড্রম-এ শরীরে পানি কমে যায়, তাপ বেড়ে যায়, হার্ট বিট কমে যায়, ব্লাড প্রেসার কমে যায় এবং রোগী জ্ঞান হারাতে পারে। ফুসফুস এবং পেটে পানি জমে। হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ হয়, শরীরে র্যাশ ওঠে, তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ হয়। এটার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত। তাই সে বুঝতে পারে কি করতে হবে। কিন্তু এবারের ডেঙ্গুতে তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি, র্যাশ দেখা যায়না, রক্তক্ষরণও হয়না। ফলে অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। বা গুরুত্ব দেন না। জ্বর চলে যাওয়ার পরে প্লাটিলেট ভেঙ্গে ব্লাডপ্রেসার কমে কলাপস করে। ফলে এবার মৃত্যুর হার বেশি।''
তিনি বলেন, ‘‘আগে আমরা বলতাম তিন দিন দেখার জন্য। কিন্তু এবার যে ধরনের ডেঙ্গু তাতে কারুর সামান্য জ¦র হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কোনো দেরি করা যাবেনা। জ¦রের সাখে বমি ও লুজ মোশনও ঙেঙ্গুর লক্ষণ।''
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার ডেঙ্গু মোডিফায়েড ফর্মে এসেছে। লক্ষণ আগের মত নয়। তাপমাত্রাও বেশি থাকেনা , ১০১-১০২ ডিগ্রী। হেমোরেজিক নয়, শকড সিনড্রম । হাড়ে বা শরীরের সংযোগস্থলে ব্যথাও হয়না। ফলে অনেকেই বুঝতে পারেন না। তাই আমারো পরামর্শ অল্প বা বেশি যেকেনো মাত্রার জ্বর হলেও দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অপেক্ষা করা চলবে না।''
তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে হিসেব দিচ্ছে আর আমরা যে খোঁজ খবর পাচ্ছি তাতে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আমরা একজন চিকিৎসকেরও মৃত্যুর খবর পেয়েছি। কেউ যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হন তাদের জন্য ঝুঁকি বেশি।''
তিনি আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘জ্বর হলেই প্রচুর পানি ও পানীয় খাবার খেতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎকের কাছে যেতে হবে। জ্বরের মাত্রা যাই হোক না কেন।''