1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার দায়িত্বটা আরো বেড়ে গেছে

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সঙ্গে ভারত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের একটা নাড়ির যোগ আছে। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একাত্মতার বোধ।

https://p.dw.com/p/4o5aF
কলকাতা বিজয় দিবস
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড প্রতিবছর কলকাতায় বিজয় দিবস পালন করে থাকে। ছবি: Subrata Goswami/DW

ভদ্রলোকের নাম টিসি রাও। সাবেক সেনা অফিসার। একসময় কুমায়ুন রেজিমেন্টে ছিলেন। সাদা জামার উপরে হাফ জ্যাকেটটা অনেকটা সেনার ইউনিফর্মের মতো। সেখানে কাঁধের সামনে সাবেক রেজিমেন্টের লোগোসহ 'অভিজ্ঞ সেনাকর্মী' কথাটা লেখা।

দিন কয়েক আগে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনেরকাছে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তারই একদিকে একেবারে একা  হাতে একটা পোস্টার ধরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেখানে ইংরেজিতে যা  লেখা ছিল তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘‘বাংলাদেশ: মনে রাখবেন, ভারতীয় সেনা আপনাদের স্বাধীনতার জন্য লড়েছে।''  

৪৯ বছর পর ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক

এরকমভাবে কেন পোস্টার নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন? টিসি রাও জবাব দিলেন, ''আমার পরিবার হলো সেনার পরিবার। সেই পরিবারের পাঁচজন সদস্য ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মাটিতে লড়েছিলেন। তাই আমি এই কথাটাই মনে করিয়ে দেয়ার জন্য এসেছি।''

এখনো প্রতিবছর ভারতীয় সেনা বিজয় দিবস পালন করে। ফলে টিসি রাও-এর আবেগ হলো এক সাবেক সেনার আবেগ, যিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের বিজয় দিবস নিয়ে এই আবেগ অনেকেরই আছে, বিশেষ করে যাদের ১৯৭১-এর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের কথা মনে আছে। সেসময় কলকাতা রেডিওতে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ পরিক্রমা পড়তেন। সেই পরিক্রমা লিখে দিতেন প্রণবেশ সেন। দেবদুলাল গালাটা একটু কাঁপিয়ে, আবেগ মিশিয়ে যখন সেই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি রেডিওর সামনে সেঁটে বসে থাকত। আলোড়িত হতো।

কলকাতার ঘরে ঘরে বাজত সংবাদ পরিক্রমা। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মনপ্রাণ দিয়ে শুনত, সীমান্তের ওপারে হার না মানা বাঙালিরা হাতে বন্দুক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করছে। সেই আবেগের কোনো তুলনা নেই। তাই বিজয় দিবসের আলাদা তাৎপর্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে।

সেই তাৎপর্য কি এখনো একইরকম আছে? এর স্পষ্ট উত্তর হলো, সেটা তো থাকা সম্ভব নয়। যারা সেই সময়টাকে দেখেনি, তারা তো সেই সময়টাকে ধরতে পারবে না। ৫৩ বছর পর সেই আবেগও হয়ত সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিতে পলি পড়়ে। এই সময়ে বিশ্ব ভয়ংকরভাবে বদলে গিয়েছে। দেশও। ফলে সেই সময়, সেই আবেগ তো বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে থাকা সম্ভব নয়। আর পশ্চিমবঙ্গের বাইরের মানুষদের কাছ থেকেও সেই আবেগ প্রত্যাশা করা অনুচিত। বরং এখন এই টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ডিজিটাল জগতে অনেক সংজ্ঞাই বদলে গেছে।  মানুষকে প্রভাবিত করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। নানা প্রলোভনের ফাঁদে তারা সহজে পা দিয়ে ফেলে।  

আর এবারের বিজয় দিবসের আবহটাও বদলে গেছে। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি টিভি চ্যানেল, খবরের কাগজের শিরোনামে উঠে আসেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। উঠে আসছে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের খবর। কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, ''দুই দেশের মধ্যে সংঘাত নেই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চায় না, অশান্তি বাড়ুক। এদেশের সাধারণ মানুষও চায়, শান্তি বজায় থাকুক।  আমরা তো বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করি।'' অধীরের বক্তব্য, ''ভারতেও যদি সরকার মন্দির-মসজিদ করে, হিন্দু-মুসলিম করে, তাহলে দেশের বারোটা বাজবে।'' 

আর এই একাত্মতা তো আজকের নয়, দীর্ঘদিনের। বিজয় দিবস সেই একাত্মতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। সেই একাত্মতায় আঘাত করা উচিত নয়। করলে অপূরনীয় ক্ষতি হবে। কিছু হঠকারী কাজের মূল্য অনেক বেশি করে চুকাতে হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ঘুরে এসেছেন সাংবাদিক আশিস গুপ্ত। অসমীয়া প্রতিদিনের এই সাংবাদিকের মতে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা অবশ্যই ঘটছে। আবার কিছু মাজারও আক্রান্ত হয়েছে। খুব দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসাটাই কাম্য।

এখনো পর্যন্ত ভারত সরকার সংযত আচরণ করেছে। তারা এমন কোনো কিছু করেনি, যাতে পরিস্থিতি জটিল হয়। বরং সকলকে সুরক্ষা দেয়ার কথাই বলছে সরকার। ভারতেও যদি কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটে, তখন বিশ্বের অনেক দেশ তার প্রতিক্রিয়া জানায়, খোলাখুলি কথা বলে। ফলে নিকট প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে এই উদ্বেগ নিঃসন্দেহে ন্যায্য বলে সরকার মনে করে।

কোনো সহিংসতাই কাম্য নয়, কোনো মৃত্যু, আগুন, ভাঙচুর কাঙ্খিত নয়। ভারত, বাংলাদেশ বা বিশ্বের কোনো প্রান্তেই নয়।  এবারের বিজয় দিবসের দায়িত্বটা বোধহয় সকলের কাছে অনেক বেড়ে গেছে। সহিংসতার থেকে বেরিয়ে এসে একাত্মতা বজায় রাখার দায়িত্বটা নিঃসন্দেহে খুবই বড়।

 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷