এবার হলো না বেলজিয়ান চমক
১০ জুলাই ২০১৮৮৬'র বিশ্বকাপের কথা কি ভুলতে পারবে বেলজিয়াম? সেবারই একমাত্র ও প্রথমবার এমন আসরে সেমিফাইনাল খেলেছিল তারা৷ তখন আর্জেন্টিনার কাছে শেষ চার থেকে বিদায়ের পর তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচটি হয়েছিল ফ্রান্সের বিপক্ষেই৷ ৪-২ গোলে হেরেছিল তারা৷ ৩২ বছর পর আবারো এমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসরে ফ্রেঞ্চদের মুখোমুখি বেলজিয়াম৷ অবশ্য ২০১৫-তে আছে প্রীতি ম্যাচ জয়ের স্বাদ৷
এদিকে, গ্যালারির ভিভিআইপি বক্সে ফ্রান্সের যুবক প্রেসিডেন্ট এমানুয়ের মাক্রোঁ৷ তাই মাঠে অনুপ্রাণিত গাঢ় নীল জার্সি পরা ফ্রান্সের যুবক ফুটবলাররা৷ অন্যদিকে, প্রতিপক্ষের শক্তিও আরেক ফ্রেঞ্চ৷ তিনি থিয়েরি অঁরি৷ এই সাবেক ফ্রেঞ্চ তারকা স্ট্রাইকার এখন বেলজিয়ামের সহকারী কোচ৷ আর ফ্রেঞ্চ কোচ দেশঁ কীভাবে চিন্তা করেন তাও জানা আছে তাঁর৷ তাই এখানে আছে গুরুশিষ্যের লড়াইও৷
এদিকে, উরুগুয়ের সঙ্গে জয়ী দলকেই মাঠে নামান দেশঁ৷ তবে একটি পরিবর্তন ছিল৷ সাসপেনশন কাটিয়ে দলে ফিরেছেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মাটুইডি৷ এর অর্থ বাদ গেছেন টলিসো৷ তবে বেলজিয়াম দলের ফরমেশনে ব্যাপক পরিবর্তন করেছেন রবার্টো মার্টিনেজ৷ রাইট ব্যাক মুনিয়ের এই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ থাকায়, তার জায়গায় নামিয়ে এনেছেন চাডলিকে৷ আর ডে ব্রয়নেকেও মিডফিল্ড থেকে নামিয়ে লেফটব্যাকে নিয়ে এসেছেন৷ ডেম্বেলে মিডফিল্ড পর্যন্ত খেলবেন৷ এমন কম্বিনেশনে আগে খেলেনি বেলজিয়াম৷
সে যাই-হোক, কাগজে কলমে ফ্রান্স যে এগিয়ে, তাতে কোনো ভুল নেই৷ কিন্তু এগিয়ে ছিল ব্রাজিলও৷ কিন্তু এই বেলজিয়ামের ফেলাইনি, ডে ব্রয়নে, চাডলি, লুকাকুরা একসঙ্গে হলে কী করতে পারেন, তা এই আসরে অন্তত হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সবাই৷
এদিনও সেন্ট পিটার্সবুর্গ স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই তাদের সামলাতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছিল ফ্রেঞ্চ ডিফেন্সকে৷ দু'একবার দলকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষক লরিস৷ যেমন, ২২ মিনিটে বেলজিয়ান ডিফেন্ডার আলডেরভেরিল্ড ১৪ গজ দূরে থেকে ঘুরিয়ে শট করেন বাঁ পায়ে৷ কিন্তু সেখানে লরিসের দক্ষতা ছিল অনন্যসাধারণ৷ বিপদ হলো না ফ্রান্সের জন্য৷
এরই মধ্যে গ্রিজমানকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স দু‘একবার আক্রমণ চালিয়েছে৷ কিন্তু সেখান থেকে কোনো সফলতা আসেনি দেশঁর শিষ্যদের৷
২৪ মিনিটে নিজেদের ডিফেন্স থেকে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার উমতিতি লম্বা এক পাস দেন জিরুডের কাছে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের খেলায় গত সাত ঘন্টায় কোনো বলই টার্গেটে শট নিতে পারেননি এই চেলসি ফরোয়ার্ড৷ ম্যাচের প্রথমার্ধেও সেই ধারা অব্যাহত রাখলেন৷
৩৯ মিনিটে এবার পরিষ্কার সুযোগ হাতছাড়া করলেন পাভার্ড৷ স্টুটগার্টের এই ডিফেন্ডার এমবাপের একটি পাস থেকে বেলজিয়ান গোলরক্ষক কোর্টোয়াকে সামনাসামনি পেয়ে যান৷ কিন্তু তাঁকে অতিক্রম করতে পারেনি তাঁর বাড়ানো বলটি৷
অতিরিক্ত সময়ে আরেকবার আক্রমণে বেলজিয়াম৷ ডে ব্রয়নের ক্রস ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন উমতিতি৷ এতে করে পরিষ্কার সুযোগ এসে যায় লুকাকুর সামনে৷ কিন্তু পায়ে ঠিকমত লাগাতে পারেননি তিনি৷ গোলশূন্য থাকে প্রথমার্ধ৷
দ্বিতীয়ার্ধে আবারো চড়ে বসে বেলজিয়াম৷ গতিময় ফুটবলে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে নীল শিবিরকে৷
কিন্তু দেশঁ যেন এবার শিষ্যদের মন্ত্র পড়িয়েই পাঠিয়েছেন৷ ৫১ মিনিটে গ্রিজমানের কর্নার থেকে বার্সেলোনার তারকা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার উমতিতি উড়ে এসে হেড করেন৷ আর তাতেই পরাস্ত কোর্টোয়া৷ ১-০-তে এগিয়ে যায় ফ্রান্স৷
৫৫ মিনিটে আবারো সুযোগ৷ গ্রিজমান-এমবাপের চমৎকার একটি সেটপিস থেকে বল পান জিরুড৷ কিন্তু ব্যর্থতা যেন লেখা আছে তাঁর পায়ে৷
৬১ মিনিটে এবার লাল শিবিরের আক্রমণ৷ ১৬ গজ দূর থেকে শট নেবার সুযোগ আসে ডে ব্রয়নের সামনে, যেটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি৷ ৬৫ মিনিটে ডানপাশ থেকে আসা একটি ক্রস থেকে বল চলে আসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হেড মাস্টার ফেলাইনির মাথায়৷ কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় তা৷
এভাবেই পরতে পরতে উত্তেজনা ছড়িয়ে এগিয়ে চলে ম্যাচ৷ গড়াতে থাকে পরিণতির দিকে৷ আর তার প্রতিক্রিয়ায় কখনো লাল আর নীল গ্যালারির মধ্যে ভাগাভাগি হয় অনুভূতি৷ এদিকে কখনো মেঘ তো, ওদিকে রোদ ঝলমল৷
৭৫ মিনিটে আবারো বেলজিয়ান অ্যাটাক৷ মের্টেন্সের পাওয়ার শট ঠেকিয়ে দেন লরিস৷ ৮০ মিনিটে গ্রিজমানের ফ্রিকিক থেকে বল পেয়েও সুবিধা করতে পারেননি পগবা৷ বারের ওপর দিয়ে হেড করেন৷
অতিরিক্ত সময়ে গ্রিজমান ও বদলি খেলোয়াড় টলিসো দু'জনই পরিষ্কার সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যবধান বাড়ানোর৷ কিন্তু কেউই কোর্টোয়াকে পরাভূত করতে পারেননি৷ তাই এই ব্যবধানেই শেষ হয় ম্যাচ৷ ১৯৯৮ ও ২০০৬-এর পর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছাল ফ্রান্স৷
বুধবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া৷