কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩বাংলাদেশের প্রকাশকরা না থাকলে, বাংলা ভাষায় কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় একটা বড় ফাঁক থেকে যেত৷ এই কথার অর্থ বুঝতে যদি অসুবিধে হয়, তাহলে অবশ্যই একবার কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে ঘুরে যাওয়া উচিত৷ উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষত কম্পিউটার ও সংক্রান্ত প্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষায় সহজ বাংলায় লেখা বইয়ের যেহেতু বড়ই আকাল, পশ্চিমবঙ্গের কম্পিউটার শিক্ষার্থীরা কার্যত বছরভর অপেক্ষায় থাকেন কলকাতা বইমেলার, যেখানে তাঁরা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত কম্পিউটারের বইগুলি হাতে নিয়ে দেখতে পারেন, কিনতে পারেন৷ এবারও কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের বই নিয়ে এই বিশেষ গোত্রের ক্রেতাদের উৎসাহের কোনও অভাব ছিল না৷ এছাড়া জনপ্রিয় কবি-সাহিত্যিকদের কবিতা-গল্প-উপন্যাসের কাটতি ছিল যথারীতি৷ বাংলা একাডেমীর অভিধান, নজরুলগীতি বা লোকসংগীত নিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত গবেষণাধর্মী বইয়ের চাহিদাও ছিল প্রতিবছরের মতোই৷
কিন্তু এবার, এই ৩৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা যেহেতু বাংলাদেশের সাহিত্যের জন্য ছিল বিশেষ একটি বছর, যেহেতু এবারের থিম দেশ বাংলাদেশ, আমরা কি প্রতিবেশী দেশটির বিপুল সাহিত্য ভাণ্ডারের যথেষ্ট খোঁজ পেলাম, নাকি স্রেফ কয়েকটি বইয়ের স্টল করেই দায় সারা হলো? এই প্রশ্ন তুলেছেন বইমেলায় আসা লোকজনেরাই, যাঁরা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের আদলে গড়া একটি প্যাভিলিয়নের মধ্যে বাংলাদেশের বইয়ের ডজন খানেক স্টল দেখে কিছুটা হতাশই হলেন৷ এর পিছনে যদিও বইমেলার উদ্যোক্তাদের বা অংশগ্রহনকারী বাংলাদেশি প্রকাশকদের উৎসাহের অভাব ছিল না বলেই মনে হয়৷ বরং কারণটা কিছুটা বোঝা যায় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উদ্বোধনী ভাষণে৷
কিন্তু নিজের লোক, প্রায় আত্মীয়ের মতো হলেও তাঁরা যখন নিমন্ত্রিত অতিথি, তাঁদের যোগ্য আপ্যায়ন করাটাও নিমন্ত্রণকর্তারই কর্তব্য৷ সম্ভবত সেখানেই কিছুটা ফাঁকি থেকে গিয়েছে এবারের কলকাতা বইমেলায়, যাতে হতাশ সেই বইপ্রেমীরা, যাঁরা বাংলাদেশের লেখক-সাহিত্যিকদের আদতেই হৃদয়ের খুব কাছাকাছি রেখেছেন৷ অবশ্য সাহিত্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্র, শিল্প, স্থাপত্য এবং পর্যটনের মতো যেসব বিষয় আজকের বাংলাদেশের পরিচয়, সেগুলির উপরেও আলো ফেলা হয়েছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে, তবে অধিকাংশেরই মত, আরও সুসংবদ্ধ উপস্থাপনা প্রয়োজন ছিল বাঙালিমাত্রেরই আবেগের সঙ্গে যুক্ত দেশটির জন্য৷
আবার বাংলা ভাষা বা বাংলা সাহিত্যের প্রতি এই আবেগ থেকেও লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থাকে৷ এবারের বইমেলার মূলমন্ত্র যেমন সম্প্রীতির বন্ধনে বই৷ দুই বাংলার মৈত্রীবন্ধনকেই সেখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এই সম্প্রীতির দায়-দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব লেখক-পাঠক, দু'পক্ষকেই বুঝতে হবে৷ একথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবারের বইমেলার বিশেষ অতিথি, বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান৷
বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নটি ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের আদলে তৈরি করা ছাড়াও বইমেলার একটি ফটক এবার তৈরি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত কার্জন হলের আদলে৷ এছাড়া এবারের বইমেলা দুই বাংলার সম্প্রীতি-বন্ধনের পাশাপাশি ১৯ শতকে বাঙালির নবজাগরণ এবং ঢাকা-কলকাতার ভূমিকাও তুলে ধরছে৷ বাউল গান ও অন্যান্য লোকসংগীতের মাধ্যমে বাংলার দেশজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হচ্ছে৷