1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিবিআই-এর ওপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ!‌‌‌‌‌

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৫ নভেম্বর ২০১৮

হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি থেকে অর্থ তছরুপ, ভয়ানক অপরাধের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তে একমাত্র ভরসা ছিল সিবিআই৷ এখন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সেই সিবিআই৷

https://p.dw.com/p/38Jek
ছবি: Reuters/D. Siddiqui

বহুদলীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচ এবং দুর্নীতির মহাসাম্রাজ্যের দেশে আরেক আস্থাজনক সংস্থা আরবিআই নিয়েও সন্দিহান সাধারণ মানুষ৷ প্রশ্নের মুখে স্বশাসিত সংস্থাগুলি৷

দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের অন্দরে খানাতল্লাশি চলছে, তদন্ত চলছে৷ সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মার সঙ্গে বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানার দ্বন্দ্ব শোরগোল ফেলেছে, যা কার্যত গৃহযুদ্ধের আকার নিয়েছে৷ মূলত এক মাংস ব্যবসায়ী মঈন কুরেশিকে অর্থ তছরুপ মামলা থেকে রেহাই দিতে দুই ‌কোটি টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ৷ দু'জনেই একে অপরের বিরুদ্ধে ওই টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন৷ আশ্চর্যজনকভাবে কেউই ঘুস বা তার পরিমাণ অস্বীকার করেননি!‌ ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ঘুসকান্ডের তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় নজরদারি সংস্থা সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন বা সিভিসি৷ শীর্ষ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ কে পট্টনায়েকের তত্ত্বাবধানে তদন্ত চলছে৷

প্রবীণ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‘‌গণতান্ত্রিক পথে চলার জন্য কিছু স্বাধীন সংস্থা তৈরি করা হয়৷ বর্তমান শাসক দল এই সংস্থাগুলির ওপর স্বৈরতান্ত্রিক আঘাত হানছে৷ সিবিআই এমন বহু মামলার তদন্ত করছে, যেগুলিতে মূল অভিযুক্তরা রাজনৈতিক নেতা৷ সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে সিবিআইকে করায়ত্ত করা হচ্ছে৷ সংস্থার ভেতর থেকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷’’

ওদিকে সবকিছু ঠিকঠাক নেই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতেও৷ সেখানেও ডামাডোল৷ নানা ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আরবিআই গভর্নর উর্জিত প্যাটেলের মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে৷ ঝগড়া মূলত ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের বোঝা নিয়ে৷ তার ওপর আরবিআই আইনের অব্যবহৃত ৭ নং ধারা আচমকা প্রয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক, যার অর্থ, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আরবিআই-‌কে নির্দেশ দিতে পারবে সরকার৷ স্বাধীন ভারতে এই ধারার প্রয়োগ কখনো হয়নি৷ কিছুদিন ধরে ব্যাঙ্কের ঋণ নীতিতে বদল আনতে আরবিআই্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে কেন্দ্র৷ এতসবের মধ্যে কেন্দ্রীয় এই ব্যাঙ্কের গচ্ছিত তহবিল থেকে ৩ দশমিক ৬ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিতে চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ সেক্ষেত্রেও সরকারকে পেছনের দরজা দেখিয়ে দিয়েছেন উর্জিত প্যাটেল৷ শোনা যাচ্ছিল, ঝঞ্ঝাটের জেরে পদত্যাগ করতে পারেন গভর্নর৷ এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী একদফা গোপন বৈঠক সেরে নিয়েছেন উর্জিত প্যাটেলের সঙ্গে৷ বৈঠকের কথা অবশ্য কেউই স্বীকার করেননি৷

রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে সিবিআইকে করায়ত্ত করা হচ্ছে: বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য

আরবিআই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে সুপ্রিম কোর্ট, কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিশন, নির্বাচন কমিশন সব কিছুতেই হস্তক্ষেপের অভিযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‌‘নোটবন্দির সময় আরবিআই-এর পরামর্শ নেয়নি সরকার৷ এখন নোটবন্দির ‘‌ব্যর্থতা'‌ আরবিআইয়ের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে৷ মাঝে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলেছে৷ নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ করার প্রয়াস হয়েছে৷ এটা ভয়াবহ ব্যাপার৷’’

শুধু কি সিবিআই, আরবিআই?‌ নজিরবিহীনভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে বৈদেশিক বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা ‘‌র'‌ (‌রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)‌৷ অভিযোগ, সিবিআই কর্তাদের ঘুস‌কান্ডে মধ্যস্থতা করেছেন ‘‌র’-‌এর এক আধিকারিক৷

২০১৯-‌এর নির্বাচনে প্রশ্নের জবাব চাইতে মানুষ তৈরি হচ্ছে: দেবারুণ রায়

প্রবীণ সাংবাদিক দেবারুণ রায়ের কথায়, ‘‌‘‌সরকারকে জবাবদিহি করা ও সরকারের কাজে লাগাম দেওয়া গণতন্ত্রের দু'টো বড় কাজ৷ এভাবেই বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হয়েছে ভারত৷ কিন্তু বিরোধীরা এতদিন যেসব অভিযোগ করে এসেছে, এখন পদে পদে সেসব প্রমাণ হচ্ছে৷ সরকারের চোখে সিবিআই প্রধান বর্মা দুয়োরানীর ছেলে!‌ কারণ, তিনি রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে তদন্ত করতে চেয়েছিলেন৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‌‘‌আজকের প্রধানমন্ত্রী গত সাড়ে চার বছরে একবারও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি৷ বজ্র আঁটুনি যত কঠিন হচ্ছে, ততই গেরো ফস্কা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে৷ মানুষের হয়ে প্রশ্ন কে করবে?‌ এখন ২০১৯-‌এর নির্বাচনে প্রশ্নের জবাব চাইতে মানুষই তৈরি হচ্ছে৷’’

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ আধিকারিকের তরজা চরমে উঠেছিল৷ বিরোধ প্রকাশ্যে আসার পর গত ২৩ অক্টোবর মাঝরাতে এক নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ সেই নির্দেশিকায় অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানাকে ছুটিতে পাঠানো হয়৷ সিবিআইয়ে অন্তর্বর্তীকালীন অধিকর্তা পদে বসেন এম. নাগেশ্বর রাও৷ ঠিক পরদিন ২৪ অক্টোবর সেই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন অলোক বর্মা৷ সুপ্রিম কোর্টের  প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি এস. কে. কাউলের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলছে৷

এই ‘‌নিরপেক্ষ'‌ সংস্থাগুলিতে ঝঞ্ঝাট মিটবে কিনা সে প্রশ্নের জবাব মিলবে পরে৷ তার আগে মোটামুটি প্রমান হয়েছে যে, সর্বোচ্চ তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থাটি মোটেও নিষ্কলঙ্ক নয়৷ আবার তেমনই সরকারের অঙুলি হেলনে না চললে আরবিআইয়ের মতো যে-কোনো স্বশাসিত ওপরেই যে খাড়া নেমে আসতে পারে, তা-‌ও বিলক্ষণ বুঝেছে সাধারণ মানুষ৷ সবমিলিয়ে ফাটল দেখা দিয়েছে মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থলে৷