1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এমন লকডাউনে সংক্রমণ বাড়তে পারে’

৪ এপ্রিল ২০২১

করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সোমবার থেকে সাত দিনের লকডাউনে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷ কিন্তু লকডাউনের যে নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে তাতে করোনা সংক্রমণ কমার বদলে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা৷

https://p.dw.com/p/3rZtL
ফাইল ছবিছবি: Reuters/M. Ponir Hussain

লকডাউনে জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস আদালত সীমিতি পরিসরে চালু থাকবে৷ গণপরিবহন চলবেনা৷ কিন্তু জরুরি সেবা দেয় এমন শিল্পকারখানা বিশেষ করে পোশাক কারখানা চালু থাকবে৷কাঁচাবাজার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চালু থাকবে৷ খাবারের দোকান ও হোটেল রোস্তোরাঁ খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না৷ তবে খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারবেন গ্রাহকরা৷ বিদেশ থেকে যাত্রীরা বাংলাদেশে আসতে পারবেন৷ ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলা না হলেও তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় নাই৷

ওষুধের দোকান সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে৷ অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন অর্থাৎ বাস, রেল ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে৷ অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ থাকলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলবে৷

চালু থাকবে সব ধরনের জরুরি সেবা এবং জরুরি পণ্য পরিবহন৷ রিকশা চলবে৷ চলবে বইমেলা৷

‘বাংলাদেশ নিজের মত লকডাউনের সংজ্ঞা তৈরি করেছে’

কিন্তু এই লকডাউনের খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের মানুষ এখন গ্রামে ছুটছেন৷ লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে জনগণের স্থান পরিবর্তনে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় অনেকেই শহর থেকে গ্রামের দিকে ছুটছেন৷

এদিকে শপিংমল এবং সাধারণ দোকানপাট বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও তা মানতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা৷রবিবার নিউ মার্কেট, গাউসিয়াসহ ওই এলাকার মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা মার্কেট খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন৷ এসময় তারা যানবাহনও ভাঙচুর করেন বলে জানা গেছে৷

সব মিলিয়ে এটাকে কোনো লকডাউন বলতে রাজি নন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী৷ তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ তার নিজের ইচ্ছামত লকডাউনের একটি সংজ্ঞা তৈরি করেছে৷ এর সাথে সায়েন্টিফিক লকডাউনের কোনো মিল নাই৷ তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে করোনা আরো ছড়াবে৷’’

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ বিশেষজ্ঞ জানান, কাঁচাবাজার খোলা থাকলে মানুষ বাজার করতে যাবে৷ হোটেল খোলা থাকলে মানুষ খাবার কিনতে যাবে৷ পোশাক কারখানা যেহেতু খোলা থাকবে, হাজার হাজার শ্রমিক বাইরে কাজে যাবেন৷ দেশের বাইরে থেকেও লোক আসবেন৷ আর সবচেয়ে বড় কথা ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে মানুষ এখন গ্রামে যাচ্ছেন এবং সাত দিন পর তারা ফিরে আসবেন৷ এর মানে হলো কয়েক লাখ মানুষ এই এক সপ্তাহে আসা-যাওয়া করবেন৷ ফলে লকডাউনের যে উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানুষকে ঘরে আটকে রাখা, বিচ্ছন্ন রাখা তা সফল হচ্ছেনা৷ বরং মানুষের চলাচল আরো বেড়ে যাচ্ছে গ্রামে যাওয়ার কারণে৷

এ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এই লকডাউন করোনা সংক্রমণ না কমিয়ে বরং করোনা সহায়ক হবে৷ কারণ জনসমাগম এবং মানুষের চলাচল বা সংস্পর্শে আমার যথেষ্ঠ সুযোগ থাকছে৷ আর বড় বড় শহর থেকে এখন করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন৷ ফলে যে ২৪টি জেলায় করোনা সংক্রমণ কম আছে সেই জেলাগুলোতে আরো বেড়ে যাবে৷’’

চিকিৎসকরা বলছেন, এটা অবৈজ্ঞানিক লকডাউন৷ নিয়ম নীতি মেনে এটা না করায় তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে৷ গত বছর সাধারণ ছুটির নামে যে লকডাউন করা হয়েছিল তাও ছিলো অপরিকল্পিত৷ এবারও তাই৷ আর এই লকডাউন করা হচ্ছে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে৷ রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটা নিয়ে কোনো ব্রিফিংও করেননি৷ শুধুমাত্র একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে৷

করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এবং বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই লকডাউন নিয়ে আমাদের কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি৷ আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানি না৷ এই লকডাউনের কী উদ্দেশ্য তা বলা হয়নি৷ আমরা ধরে নিচ্ছি যে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এই লকডাউন দেয়া হচ্ছে৷’’

তার মতে, সাত দিনের কোনো লকডাউন হয়না৷ এটা সর্বনিম্ন ১৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ২১দিনের হয়৷ এটাই বৈজ্ঞানিক নিয়ম৷ কারণ করোনা ভাইরাসের ইনকিউবিশন পিরিয়ড হলো ১৫ দিন৷ তারপর আরো সাত দিন লকডাউন দরকার৷ এই সময়ে সঠিকভাবে লকডাউন করা হলে ভাইরাসটির সংক্রমণ ও এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়৷

‘সাত দিনের কোনো লকডাউন হয় না’

তিনি বলেন ‘‘এটা হলো ঝাপ ফেলে খাবার গ্রহণের মত৷ এটা কোনো লকডাউন নয়৷ এতে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে৷ কারণ প্রায় সবই খোলা থাকছে৷ আর বড় বড় শহর থেকে লোকজন এখন গ্রামে যাচেছন লকডাউনের ছুটি কাটাতে৷ তারা গ্রামে করোনা নিয়ে যাচ্ছেন৷ আবার কারোনা নিয়ে ফিরবেন৷’’

এ নিয়ে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চেষ্টা করেও পাওয় যায়নি৷ আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাকে পাওয়া গেলেও তিনি কথা কথা বলতে রাজি হননি৷

তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘শহর ছেড়ে লোকজন যাতে গ্রামে না যান সে কারণেই শিল্প কারখানা খোলা রাখা হয়েছে৷ আর মানুষকেও সচেতন হতে হবে৷ আমরা সবাইকে যার যার অবস্থানে থাকতে বলেছি৷ গরিব মানুষের যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য রিকশা চলবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেই সাত দিন লকডাউন করা হচ্ছে৷ এরপর পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷’’

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে অন্তত সাত হাজার ৮৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন৷ যা এ পর্যন্ত একদিনে সার্বোচ্চ সংক্রমণ৷ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৩ জন৷ গত বছরের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছেন ৯ হাজার ২৬৬ জন৷ আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৪ জন৷

 

গত বছর লকডাউনের সময় বস্তির মানুষদের ভোগান্তি নিয়ে করা  ফটো গ্যালারি