এরশাদ-রওশনের বিবাদ স্পষ্ট
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেয়া বা না নেয়া নিয়ে এরশাদ এবং তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়৷ শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদেরই জয় হয়৷ তাঁর মত অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি৷ এরশাদের মনোনয়ন-পত্র প্রত্যাহার করার নির্দেশে সাড়া মেলে না৷ এখন জাতীয় পার্টি ৩৪ জন সংসদ সদস্য নিয়ে বিরোধী দলে থাকলেও, একই সঙ্গে তারা মন্ত্রীত্বও নিয়েছেন৷ এছাড়া, রওশন বিরোধী দলীয় নেত্রী হলেও এরশাদ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত৷
কিন্তু বুধবার সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধিদের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভায় হতাশ হয়েছেন পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ৷ কারণ তিনি এই সভা ডাকলেও সেখানে ৩৪ জন সংসদ সদস্যের মাত্র চারজন উপস্থিত ছিলেন৷ ছিলেন না রওশন এরশাদও৷
তাই এরশাদ বলেছেন, যাঁরা তাঁর নির্দেশ অমান্য করে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাঁরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন৷ তাই তিনি সবাইকে ফিরে আসার আহ্বান জানান৷ আর যাঁরা সরকারের মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে এরশাদ বলেন, ‘‘গর্ব করে বলি না, আমি যেখানে আছি, সেখানে জাতীয় পার্টি থাকবে৷ আমি না থাকলে থাকার কোনো প্রশ্ন নেই৷ সামান্য মোহ বা পদের কারণে এই বন্ধন ছিন্ন করা যাবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমি নির্বাচনটা করিনি, আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম তোমাদের না করার জন্য৷ কেন করিনি তা আমি আজ বলব না৷ তবে চেয়ারম্যান যা বলে তা নির্দেশ বলে মানতে হবে৷''
এরশাদ বলেন, ‘‘যারা লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করেছে৷ আজ তাঁরা এখানে আসেনি৷ মেঘ কেটে যাবে, আমরা রাস্তায় নামব, ভোটারদের কাছে যাব৷ ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচনে আমরা জিতব৷''
এদিকে ৩০ জন সংসদ সদস্যের বর্ধিত সভায় যোগ না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ডয়চে ভেলের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তিনি ব্যস্ততার কথা বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান৷
তবে রওশন এরশাদপন্থি সংসদ সদস্যদের একজন ইয়াহিয়া চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানান, বর্ধিত সভায় তাঁদের যাওয়া কথা নয়৷ এটা জেলা পর্যায়ের নেতাদের মতবিনিময় সভা৷ তাই তাঁরা যাননি৷ তাঁরা দলের নির্দেশ মেনেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন৷ বুধবারের সভায় যাঁরা এরশাদের পাশে ছিলেন তাঁদের অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন৷ এরশাদ নিজেও এমপি হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন৷ তাই যাঁরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন – এরশাদের এই বক্তব্য মেনে নেয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
এদিকে এরশাদকে বাদ দিয়ে রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির হাল ধরবেন – এই কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে৷ বুধবার এরশদের ডাকা বর্ধিত সভায় তা আরো স্পষ্ট হলো৷ এ নিয়ে জাতীয় পার্টির এমপিদের নিয়ে রওশন একাধিক বৈঠকও করেছেন৷ দু-একদিনের মধ্যে তাঁরা আবার বসছেন বলে জানা গেছে৷ এ জন্য রওশন এমপিদের ঢাকায় ডেকেছেন৷ ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, এটা সত্য যে জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদের অনুসারী অনেক৷ তবে এইচ এম এরশাদই এখনও দলের চেয়ারম্যান৷