এশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্কট বেড়েই চলেছে
২ জুলাই ২০০৯মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন স্বদেশ ছেড়ে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষ৷
২৩ বছর বয়সী বাংলাদেশী যুবক মোমেন ভূঁইয়া দু'বছর হলো মালয়েশিয়ায় এসেছেন৷ উদ্দেশ্য ভ্যান চালিয়ে কিছু টাকা রোজগার তারপর দেশে গিয়ে প্রেমিকাকে ঘরণী করা৷কিন্তু পারছেন কই! বিশ্বমন্দার কবলে পড়ে এখন অস্তিত্ব রক্ষা করাই দায়৷ দিনমজুরের কাজও পাচ্ছেন না৷ পরিবারের সম্বল জমিটুকু বিক্রি আর ধার-দেনার টাকা মিলিয়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে কুয়ালালামপুর এসেও এখন তার না খেয়ে মরার অবস্থা৷ দিশেহারা মোমেন বার্তা সংস্থাকে বলছিলেন, ‘এখানে শিগগিরই কাজ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিনা৷ এজেন্ট শুধুই বলে যাচ্ছে, কাজ নেই, কাজ নেই...৷ অথচ দেশে ফিরে যাওয়াও আমার জন্য খুব বড় সমস্যা৷জমিজমা বিক্রি করার পর ধার-কর্জ্জও করেছি৷ সেই টাকা শোধ করার সাধ্য আমার নেই৷ তাছাড়া পাসপোর্টটাও নেই৷'
শুধু মোমেনের নয়, মালয়েশিয়ায় ২২ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিকের মধ্যে অনেকেরই এখন এই অবস্থা৷ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি শ্রমিক আমদানিকারী এই দেশ বিশ্বমন্দার ধকল সামলাতে গিয়ে কমাতে শুরু করেছে অভিবাসী শ্রমিক৷ দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে এ বছরের শুরুর দিকে উৎপাদন খাতে নতুন করে বিদেশীদের নিয়োগ বন্ধ করেছে৷অন্যান্য সেক্টরেও বিদেশীদের ওয়ার্ক পার্মিট দেয়া রাতারাতি কমিয়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া৷ দেশটির হঠাৎ অভিবাসীদের প্রতি এমন কঠোর হওয়ার সবচেয়ে বড় শিকার সম্ভবত বাংলাদশ৷ এ বছর ৫৫ হাজার বাংলাদেশীকে ভিসা দিয়েও পরে তা বাতিল করে দিয়েছে মালয়েশিয়া৷
মালয়েশিয়ারই যখন এই চিত্র তখন এশিয়ার অন্যান্য দেশে অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থা কী হতে পারে তা তো সহজেই অনুমান করা যায়৷ তবে বিশ্বমন্দার কারণে অভিবাসীরা যে হঠাৎ করেই আশ্রয়দানকারী দেশগুলোতে বিপদে পড়ছেন, তা কিন্তু নয়৷ অভিবাসী শ্রমিকদের সংগঠন কারাম এশিয়ার সিনথিয়া গ্যাব্রিয়েল মনে করেন অভিবাসীদের ভোগান্তি পুরোনো ব্যাপার, বিশ্বমন্দা শুধু পরিস্থিতিটাকে আরো খারাপ করেছে, ‘অন্যায়ভাবে ছাঁটাই, বকেয়া বেতন, বেতন দেরিতে পাওয়া -- অভিবাসীরা এসব সমস্যা অর্থনৈতিক সঙ্কট শুরুর অনেক আগে থেকেই মোকাবেলা করে আসছেন৷এখন শুধু পরিস্থিতিটা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে৷'
মালয়েশিয়ায় ইন্দোনেশীয় দূতাবাসের উপ-প্রধান তাতাং রাজাককেও সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যাসঙ্কুল জীবনযাপনের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে৷ জানালেন, কয়েক মাস ধরে অসংখ্য ইন্দোনেশীয় শ্রমিক এসে কাজ হারানো, কাজ না পাওয়া, মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হওয়ার কথা বলছেন৷ঘরদোর পরিস্কার করা, বাচ্চাদের দেখাশোনা করা থেকে শুরু করে বাগান বা কারখানার কাজে যে দেশ এতদিন বিদেশীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেই মালয়েশিয়া হঠাৎ সব জায়গায় দেশী লোক নিয়োগে বেশ উঠে-পড়ে লেগেছে৷ সুতরাং এর প্রভাব অভিবাসীদের ওপর তো পড়বেই৷
সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের মাঝে ব্যাপক বেকারত্ব স্বাস্থ্য খাতেও খুব বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে বলে কারমান এশিয়ার সিনথিয়া গ্যাব্রিয়েলের আশঙ্কা৷ অস্বাস্থ্যকর জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে হয় বলে এমনিতেই অভিবাসীদের এইচআইভি বা এইডসের মতো ভয়াবহ রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে৷ তার ওপর এশিয়ার অনেক দেশ রোগসচেতনা বাড়ানো, চিকিৎসা ইত্যাদিতে খরচ কমানোর উদ্যোগ নেয়ায় এই ঝুঁকি আরো বেড়েছে বলে তার ধারণা৷
প্রতিবেদক : আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক