এশিয়ায় হুমকির মুখে পরিযায়ী পাখির দল
১০ মে ২০১০কিন্তু সম্প্রতি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আর শিকারির ফাঁদে পড়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে নানা রঙের বাহারি পাখির দল৷ ফলে ভয় আর আতঙ্কে এশিয়ার জলাভূমিতে কমে যাচ্ছে এসব যাযাবর পাখির বিচরণ৷
বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপাইন্স, কোরিয়া, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর চীনের বিস্তৃত জলাভূমিতে প্রতি বছরই দূর দূরান্ত থেকে উড়ে আসে ঝাঁক ঝাঁক বিদেশি পাখির দল৷ সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত তারা পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ খেয়ে আয়েশ করেই সময় কাটায় এশিয়ার এই অঞ্চলে৷ এমনকি এসব পাখির আগমনে প্রাকৃতিকভাবেই অনেক ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গের হাত থেকে রক্ষা পায় ঐ অঞ্চলের মানুষ৷
বেশ কিছু অতিথি পাখি ইঁদুর ধরে খায়৷ ফলে শস্য খেতের জন্য ক্ষতিকর এসব ইঁদুরের সংখ্যা হ্রাস পায় মানুষের বিনা প্রচেষ্টাতেই৷ আবার পাতিহাঁস জাতীয় পাখির দল জলাভূমিতে ভেসে থাকা অসুস্থ মাছ ধরে খায়৷ ফলে জল পরিষ্কার থাকে আর রোগের মড়ক থেকে বেঁচে যায় অন্যান্য মাছের ঝাঁক৷ এভাবে দেখা যায়, পরিযায়ী পাখিদের অধিক হারে আগমন শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধিই করে না, বরং একইসাথে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য এবং ভারসাম্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে৷
পর্যটন শিল্পের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই অতিথি পাখিদের বিচরণ৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসব অতিথি পাখির প্রতি আতিথেয়তার বদলে তাদের অস্তিত্বই বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানুষের লোভনীয় আচরণ৷ কেউ অর্থের লোভে, কেউ সৌন্দর্যকে ঘরের কোণে আবদ্ধ করার শখে আর কেউবা রসনা বিলাসের কারণে বিনাশ করছে এই অতিথিদের৷
বাংলাদেশের অন্যতম পাখি বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর জাহান সরকার বলেন, শুধুমাত্র জাল কিংবা বন্দুক দিয়েই পাখি শিকার করা হচ্ছে না, বরং বিষজাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে মারা হচ্ছে শিকারী পাখিদের৷ আর এসব পাখির মাংস বিক্রি করা হচ্ছে খোলা বাজারে৷ ফলে মানুষের শরীরের জন্যও হুমকি বেড়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে প্রায় ৬৩০ প্রজাতির পাখি আছে৷ আর শীতের পাখি আসে ২০০ রও বেশি প্রজাতির৷ কিন্তু শিকারিদের নির্মম হানার কারণে এগুলোর সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷''
এছাড়া পাখিদের জন্য উপযোগী দেশীয় গাছের পরিবর্তে বিদেশি গাছ লাগানোর প্রবণতাকেও পাখিদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন ড. নূর জাহান, ‘‘এসব বিদেশি গাছের অনেকগুলোই পাখিদের বসবাস এবং বিচরণের জন্য অনুপযোগী৷ ফলে বিদেশি গাছ লাগানোর পরিবর্তে পাখিদের জন্য উপকারী গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিতে হবে৷''
ফিলিপাইন্সের ওয়াইল্ড বার্ড ক্লাবের সদস্য নিলো অ্যারিবাস জানান যে, দেশটির ওলাঙ্গো দ্বীপে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতিথি পাখির হার কমে গেছে৷ তিনি বলেন, বিরল প্রজাতির পাখিগুলো দৃষ্টির অগোচরেই হারিয়ে যাচ্ছে এসব অঞ্চল থেকে৷ এদের সুদৃশ্য পালকগুচ্ছের ব্যবসা-ই এদের অস্তিত্বের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ শিকারিদের হানার পাশাপাশি ওলাঙ্গো এবং এর পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোর জলাভূমিগুলো মাছের পুকুর আর শিল্প কারাখানায় রূপান্তরিত হয়ে পড়াও যাযাবর পাখিদের জন্য বড় হুমকি৷
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই জলাভূমি অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার একর বন এলাকার তত্ত্বাবধান করেন রেজিনাল্ডো বুয়েনো৷ তিনি বলেন, ২০০৮ সালের শীতকালে যেখানে ১৬ হাজার পাখি এসেছিল, সেখানে গত বছর আসে ১২ হাজার পাখি৷ ফিলিপাইন্সের সান কার্লোস বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফিলিপিনাস সট্টো বলেন, ওলাঙ্গো দ্বীপসহ সেবু অঞ্চলে পরিবেশ বিপর্যয়ে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷ কেননা সেবুর বনাঞ্চল প্রায় উজাড় করে ফেলা হয়েছে৷ ফলে সেবু অঞ্চলে দেখা যেতো এমন বিরল শ্যামা এবং দোয়েল পাখি বিলুপ্তির পথে৷ আমরা কি পাখিদের জন্য অভয়ারন্য বানাতে পারিনা আমাদের দেশকে, অঞ্চলকে?
প্রতিবেদক : হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক