ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন
পুরনো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক একটি স্থাপনা ‘রোজ গার্ডেন’৷ টিকাটুলি এলাকার কে এম দাস লেনে অবস্থিত৷ প্রাসাদসম এ বাড়িটি যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে৷ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এ বাড়িতেই৷
প্রতিষ্ঠাতা
১৯৩১ সালে ঋষিকেশ দাস নামে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পুরান ঢাকার ঋষিকেশ রোডে প্রায় ২২ বিঘা জমির উপর এই বাগানবাড়ি তৈরি করেন৷
নামকরণ
ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস তাঁর বাগানবাড়িতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এনে দুর্লভসব গোলাপ গাছ রোপণ করেন৷ সেই থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’৷ বর্তমানে গোলাপের সেই প্রাচুর্যতা এখন আর নেই রোজ গার্ডেনে৷
মালিকানা
বাড়িটি নির্মাণের পর কয়েক বছর পরেই ঋষিকেশ দাস দেউলিয়া হয়ে যান৷ ১৯৩৭ সালে রোজ গার্ডেন খান বাহাদুর আবদুর রশীদের কাছে বিক্রি করে দেন৷ ১৯৬৬ সালে রশিদের ছেলে কাজী আব্দুর রকিব বেঙ্গল স্টুডিও অ্যান্ড মোশন পিকচার্স-এর কাছে ভাড়া দেন এটি৷ ১৯৯৩ সালে কাজী আবদুর রকীব বাড়িটি আবার ফিরে পান৷ তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী লায়লা রকীব এখন বাড়িটির মালিক৷ ১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তালিকাভুক্ত করে বাড়িটি৷
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা
১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) গঠনের প্রাথমিক আলোচনা সভা এই বাড়িতেই হয়েছিল৷ নতুন দল গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে রোজ গার্ডেনে এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল সেবছরের ২৩ এবং ২৪ জুন৷
নানা নাম
প্রতিষ্ঠাকালীন বাড়িটির নাম ‘রোজ গার্ডেন’ হলেও, বিভিন্ন সময়ে নানা নামে পরিচিতি পেয়েছে৷ কখনো ‘রশিদ মঞ্জিল’, কখনো ‘বেঙ্গল স্টুডিও’ আবার কখনো বাড়িটি পরিচিত ছিল ‘হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি’ নামে৷
শুটিং স্পট
১৯৭০ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল স্টুডিও অ্যান্ড মোশন পিকচার্স’ কে ‘লিজ’ দেয়া হয় রোজ গার্ডেন৷ এর পর থেকে বাড়িটি চলচ্চিত্রের ‘শুটিং স্পট’ হিসাবে ব্যবহৃত হয়৷ এখনো বিভিন্ন নাটক সিনেমার শুটিং হয় বাড়িটিতে৷ কিছু বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও আজকাল ভাড়া দেয়া হয় রোজ গার্ডেন৷
স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট
পশ্চিমমুখী দ্বিতল এ ভবনটি ৪৫ ফুট উঁচু৷ ভবনটি আয়তনে প্রায় সাত হাজার বর্গফুট৷ লতাপাতার কারুকাজ করা ছ’টি থামের উপর এই প্রাসাদটি নির্মিত৷ মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাঁচটি কক্ষ আর একটি বড় নাচঘর আছে৷ নীচতলায় আছে আটটি কক্ষ৷
শানবাঁধানো পুকুর
রোজ গার্ডেন তৈরির সময় বাড়ির সামনে ছিল শানবাঁধানো একটি পুকুর৷ সেই পুকুরটি আজও বিদ্যমান৷
বর্তমান অবস্থা
রোজ গার্ডেন এখন আর পুরো ২২ বিঘা জায়গা জুড়ে নেই৷ দিনে দিনে জৌলুশ হারানোর সঙ্গে দখল হয়েছে আশেপাশের কিছু যায়গাও৷ বাড়িটির চারপাশে বহুতল বেশ কিছু ভবনও তৈরি হয়েছে৷ বাড়ির সামনের কৃত্রিম ঝরনাটি এখন আর সচল নেই৷