ওমিক্রন ঠেকাতে কতটা প্রস্তুত পশ্চিমবঙ্গ?
২৫ ডিসেম্বর ২০২১কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারগুলিকে লেখা চিঠিতে এ নিয়ে সতর্কবাণী দিয়েছে৷ তারা বলেছে, নয়া ভ্যারিয়েন্ট তিনগুণ বেশি সংক্রামক৷ তাই চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে৷ কোনো এলাকায় আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি বিপদসীমায় পৌঁছে গেছে এমনটা ধরে নিতে বলে হয়েছে৷ তাছাড়া অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত হাসপাতালের আইসিইউ বেডের ৪০শতাংশ যদি পূর্ণ হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও বুঝতে হবে পরিস্থিতি বিপজ্জনক৷
কেন্দ্রের বিশেষ কমিটি ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে, জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে ভারতে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে৷ তাই রাজ্যে রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখার ওপর জোর কেন্দ্রীয় সরকারের৷
কলকাতাসহ দেশের আটটি মেট্রো শহরে পজিটিভিটি রেট এখন পাঁচ শতাংশের আশেপাশে৷ শুক্রবার কেন্দ্রের দেওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত ৩৫৮ জনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিনজন৷ এই সংখ্যা নগণ্য হলেও বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন চিকিৎসকরা৷
ওমিক্রন চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে জরুরি জিনোম সিকোয়েন্সিং অর্থাৎ ডিএনএর ক্রমবিন্যাস খতিয়ে দেখা হয়৷ এই পদ্ধতির মাধ্যমে জেনেটিক কোড পরপর সাজিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে কোথাও কোনো গলদ আছে কিনা৷ কিন্তু কলকাতাসহ দেশের বড় শহরগুলিতে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার যথেষ্ট পরিকাঠামো আছে কি?
জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় কলকাতার অদূরে নদীয়ার কল্যাণীতে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স নামক সংস্থায়৷ কিন্তু সেখানে চারটের মত জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে দিন তিনেক সময় লেগে যাচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে এই বিপুল জনসমষ্টিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে এত সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং কীভাবে সম্ভব হবে?
চিকিৎসক মহলে অবশ্য এ ব্যাপারে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷
চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘কল্যাণীর সংস্থায় অত্যাধুনিক পরিকাঠামো রয়েছে৷ সেখানে বড় সংখ্যায় জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্ভব বলে আমি জানি৷ নতুন ভ্যারিয়েন্ট-এর চরিত্র বুঝতে এই পদ্ধতি জরুরি৷’’
যদিও ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, ‘‘গোড়ায় আরটিপিসিআর টেস্ট করাতে সমস্যা হচ্ছিল৷ পরিকাঠামো ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে৷ এখন হাজার হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ কিন্তু সেভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং এখনই সম্ভব হবে না৷ যেখানে পরীক্ষা করাই এই রোগ নির্ণয়ের চাবিকাঠি, সেক্ষেত্রে পরিকাঠামো না থাকা খুবই উদ্বেগের৷’’
কীভাবে নয়া ভ্যারিয়েন্টের মোকাবিলা সম্ভব এমন প্রশ্নে চিকিৎসকরা বলছেন, ‘‘আমাদের হাতে চারটে হাতিয়ার রয়েছে৷ মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা ও ভ্যাকসিন দেওয়া৷’’
চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ব্যাপক টিকাকরণের ফলে ভাইরাস আটকাতে আমরা এখন অনেকটাই সক্ষম৷ নতুন ভ্যারিয়েন্টের পরিপ্রেক্ষিতে টিকা কতটা কাজ করবে সেটা পরে বোঝা যাবে৷ তবে বিশ্বজুড়ে টিকাকরণ না হলে অতিমারি রোখা যাবে না৷ সেক্ষেত্রে সব বিমানবন্দর একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে৷’’
তবে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘ভাইরাস নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ক্রমাগত মিউটেশন চালিয়ে যায়৷ সেটা বিদেশে হবে কিন্তু এদেশে হবে না, এভাবে বলা যায় না৷ তাই বিদেশ থেকে যাতায়াত বন্ধ করে সমস্যা মিটবে না৷’’
নয়া ভ্যারিয়েন্টের বিপদ যখন অপেক্ষারত তখন উৎসবের উদ্দীপনাও তুঙ্গে৷ বড়দিন ও বর্ষবরণে মেতে উঠেছে কলকাতা৷ রাজ্য সরকার বিধির কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করেছে উৎসবের জন্য৷ আর এতে বিপদ দেখছেন চিকিৎসকরা৷ এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব রাজ্যের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন৷
তবে চিকিৎসকরা আশার কথা শোনাচ্ছেন৷ ডা. পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘ডেল্টা থেকে তিনগুণ বেশি সংক্রামক ওমিক্রন৷ কিন্তু এর মারণ ক্ষমতা কম৷ তাই কোভিড বিধি মেনে চললে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ উৎসবে গা ভাসালে মুশকিল৷ প্রয়োজনে বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজের উপর জোর দিতে হবে৷’‘
বুস্টার ডোজ নিয়ে বিস্তারিত দেখুন ছবিঘরে