1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওমিক্রন: বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো

৩০ নভেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে করোনার অফ্রিকান ভেরিয়েন্ট মোকাবেলায় ব্যাপক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই তথ্য জানিয়েছেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

https://p.dw.com/p/43fIa
Symbolbild Corona Covid Variante Omicron B.1.1.529
ছবি: Pavlo Gonchar/Zumapress/picture alliance

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, গত এক মাসে আফ্রিকা থেকে ২৪০ জন বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তারা পরিচয় গোপন করে কোথাও লুকিয়ে আছেন। তারা নাম ঠিকানাও ঠিকমত দেয়নি। তাদের ফোনও বন্ধ।  তাদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মহাপরিচালককেও জানানো হয়েছে। প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে আসতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আর আসলেও তাদের ১৪ দিন অবশ্যই কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে। তাদের সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। কিন্তু এনিয়ে এখনো কোনো প্রজ্ঞাপনই জারি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ৷ তিনি জানান,"বিমানবন্দরে প্রচলিত করোনা স্ক্রিনিং চালু আছে। কিন্তু আফ্রিকা থেকে কেউ আসলে তাকে যে কোয়ারান্টিনে নিতে হবে তারা কোনো আদেশ নাই। আমরা সরকারি আদেশের অপেক্ষায় আছি।”

তিনি আরো জানান,"আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নাই। ফলে ফ্লাইট বাতিলের তো প্রশ্ন আসে না।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," আফ্রিকা থেকে আসা যে ২৪০ জনের কথা বলা হচ্ছে তাদের নাম ও মোবাইল নাম্বার আমাদের কাছে আছে। তাদের ফোনে কল করে পাওয়া যাচ্ছে না। বন্ধ আছে। আমরা এখন ইমিগ্রেশন থেকে তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠাবো।”

ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ

করোনার এই নতুন ভেরিয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের অন্য দেশের মত বাংলাদেশেও উদ্বেগ রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ১৫ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এরমধ্যে রয়েছে-

১. সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব দেশ আক্রান্ত বলে জানাবে সেইসব দেশ হতে আসা যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্ক্রিনিং জেরদার করা।

২. সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সমাগম নিরুৎসাহিত করা।

৩. বাড়ির বাইরে মাস্ক পরতে হব, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

৪. রেস্তোরাঁয় বসে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকের বেশি লোককে খেতে দেয়া যাবে না।

৫.পর্যটন কেন্দ্র, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, বিয়েসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার চেয়ে কম লোক অংশ নিতে পারবে।

৬. মসজিদসহ সব ধরনের উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

৮. আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে।

৯. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

জাহিদ মালেক

১০. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও সেবা গ্রহীতাদের  নাক, মুখ ঢেকে মাস্ক পরতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

১১. ভ্যাকসিন কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করতে হবে।

১২. করোনা পজেটিভ এবং করোনা লক্ষণযুক্ত কারুর সংস্পর্শে যারা আসবেন তাদের কোয়ারান্টিনে নিতে হবে।

১৩. করোনা লক্ষণ দেখা দিলে আইসোলেশনে রাখতে হবে ও নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে।

১৪. অফিসে প্রবেশ ও অবস্থানের সময় সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

১৫. কারোনা নিয়ন্ত্রণ ও কমাতে কমিউনিটি পর্যায় পর্যন্ত জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালাতে হবে। এজন্য  জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে।

কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই নির্দেশনার বাস্তব কোনো প্রতিফলন  নেই। ঢাকাসহ সারাদেশে ঘরের বাইরে এখন মাস্ক অধিকাংশ লোকই পরছেন না। মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। আর সামজিক দূরত্ব অনেক আগেই উধাও হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের কারণে এসএসসিসহ কোনো পরীক্ষাই বন্ধ করা হচেছ না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এবার নো মাস্ক নো সার্ভিসের পরিবর্তে নো মাস্ক, নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস নীতি কার্যকর করা হচ্ছে। সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জাননো হচ্ছে। তিনি বলেন, সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সবাইকে টিকা দেয়া যায়নি তবে চেষ্টা করা হচ্ছে। আর করোনা নিয়ন্ত্রণে আসায় স্বাস্থ্যবিধি অনেকটা ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। তা কঠোর করা হবে। সভা সমাবেশের ওপরও নিয়ন্ত্রণ আনা হবে।

বাংলাদেশের স্থল বন্দরগুলোতে আবারো হেলথ ডেস্ক চালু করা হয়েছে।   ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, তারা বিমান বন্দরে কোয়ারান্টিনসহ সব ব্যবস্থা চালুর জন্য প্রস্তুত আছেন। তিনি বলেন,"এখন বিমান বন্দরে হেলথ ডিক্লারেশন দিতে হয়। তবে তাদের কাগজপত্র নঠিক কী না তা চেক করা যায় না। আর আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই স্ক্রিনিং-এ ধরা পড়ে না। তাই ১৪ দিনের কোয়ারান্টিন জরুরি।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় করোনায় দুই জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ২২৭ জন। এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১১ জন। এপর্যন্ত মারা গেছেন ২৭ হাজার ৯৮০ জন।

অন্যদিকে এপর্যন্ত দেশে মোট পাঁচ কোটি ৯৪ লাখ আট হাজার ২৫৪ জন করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তিন কোটি ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭৩৮ জন।

হারুন উর রশীদ স্বপন(ঢাকা)