ওলামাদের মুখে কেনো হজ বয়কটের ডাক?
৯ জুলাই ২০১৯এবারের কারণটি অবশ্য যতোটা না ধর্মীয়, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক৷
প্রতি বছর হজ পালনের জন্য প্রায় ২০ লাখ মানুষ সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা সফর করেন৷ কিন্তু আরব উপদ্বীপে সংঘাত এবং রিয়াদের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে মতানৈক্য়ের ফলে বেশ কিছু ইসলামবিদ এবছর সৌদি আরবকে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন৷
এপ্রিলে লিবিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি সাদিক আল-ঘারিয়ানি ফতোয়া দেন, যেসব মুসলিম দ্বিতীয়বারের মতো হজ করতে যাবেন, তারা ‘পুরস্কারের বদলে পাপের ভাগীদার' হবেন৷ আল আরাবি সংবাদপত্রে আল-ঘারিয়ানিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ‘হজ করতে যাওয়া মানে অন্য এক মুসলিম ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপরাধ করতে সৌদি আরবকে সহায়তা করা'৷
বিভিন্ন সময়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইয়েমেন, লিবিয়া, সুদান, টিউনিশিয়া ও আলজেরিয়ায় অভিযান চালিয়েছে সৌদি সমর্থিত সেনাজোট৷
তেলক্ষেত্র বাদ দিলে সৌদি আরবের বার্ষিক আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হজ৷ বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের আমলে রিয়াদ সরকার তেল-গ্যাস থেকে নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে, খুব শিগগিরই পর্যটন ও হজই দেশটির আয়ের সবচেয়ে বড় খাতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
কিন্তু শুরু থেকেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইয়েমেনে সাধারণ মানুষের ওপর হামলার ঘটনা এবং তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে মার্কিন সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যা৷
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, ইয়েমেনে চার বছর ধরে যুদ্ধে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন, প্রায় দেড় কোটি মানুষ আছেন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে৷ সৌদি নেতৃত্বে সামরিক জোট প্রায়ই ইয়েমেন জুড়ে চালাচ্ছে বিমান হামলা৷
জাতিসংঘের আশংকা, এই যুদ্ধ চলতে থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটবে৷ এর মধ্যে এক লাখের বেশি সরাসরি হামলায় এবং আরো এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ মারা যাবেন রোগ ও ক্ষুধায় ভুগে৷
এই পরিপ্রেক্ষিতে টিউনিশিয়ার ওলামা কাউন্সিল দেশটির গ্র্যান্ড মুফতিকে আহ্বান জানিয়েছে হজ বয়কটের ফতোয়া দিতে৷ দৈনিক আল-বাওয়াবা পত্রিকাকে দেশটির সিনিয়র ইসলামবিদ ফাদেল আশুর জানিয়েছেন, ‘‘গত বছর হজ থেকে পাওয়া অর্থ বিশ্বের দরিদ্রদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়নি৷ বরং এই টাকা কাজে লাগানো হয়েছে ইয়েমেনের নাগরিকদের হত্যায়৷''
এর আগেও কয়েকবার হজ বয়কটের আহ্বান জানানো হলেও তা ছিল মূলত শিয়া-সুন্নি বিভক্তি থেকে৷ কিন্তু আবারই প্রথম সৌদি রাজত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক বিবাদের কারণে এমন জোরেসোরে নড়ে বসতে দেখা গেলো মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে৷
২০১৭ সালে আঞ্চলিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে কাতারকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করে সৌদি আরব৷ সেসময় মুসলিম ব্রাদারহুডের এক সদস্য ইউসুফ কারাদাওয়ি বলেছিলেন, ‘‘যেসব মুসলিম গরীবকে খাওয়ায়, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে, প্রতি বছর হজ পালনকারীদের চেয়ে তাঁরা বেশি সওয়াবের ভাগীদার হন৷''
এডিকে/ (আল আরাবিয়া, আল বাওয়াবা, ফরেন পলিসি)