জুরি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করলেন সুফিয়ান
২৬ জুন ২০১২
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের মূল মঞ্চেই অনুষ্ঠিত হয় বব্স'এর পুরস্কার বিতরনী উৎসব৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্লগার, সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকেন এই আয়োজনে৷ বিজয়ী প্রতিটি ব্লগ সম্পর্কে সেখানে বিশেষ মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়৷ এবং এরপর বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়৷ বাংলা ব্লগার আবু সুফিয়ানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রিপোটার্স উইদাউট বডার্স জার্মানির নির্বাহী পরিচালক ক্রিস্টিয়ান মায়ার৷ সুফিয়ান এসময় বলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত৷ আমি মনে করি এই পুরস্কারটি বাংলা ভাষাভাষী সব ব্লগারকে অনুপ্রানিত করবে ভালোভালো কাজের জন্য৷''
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের ঘটনায় একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিপোটার্স উইদাউট বডার্স৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় নিজ বাসভবনে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনি৷ অথচ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার বা খুনের কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারেনি বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী৷ এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ব্লগারদেরকে রাজপথে নিয়ে গেছেন সুফিয়ান৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর আমরা সাংবাদিকদের ব্যানারে আন্দোলন করছিলাম৷ কিন্তু একসময় হঠাৎ করেই আমাদের দেশের সাংবাদিক নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন এবং এই বৈঠকের পর পর হঠাৎ করে তারা আন্দোলন একমাসের জন্য পিছিয়ে দেন৷ তখন আমরা ব্লগাররা চিন্তা করি যে, এই একমাসে আন্দোলন পিছিয়ে যাওয়ার পরে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পরিনতি কী হবে৷ এই শঙ্কা থেকে আমরা ব্লগাররা নিজেরা আলোচনা করি এবং আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা রাজপথে নামি, ব্লগারদের প্ল্যাটফর্মে৷ সেই থেকে আমরা এখন অবধি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের সনাক্ত, গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি৷''
বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুমসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে সোচ্চার আবু সুফিয়ান৷ অনুসন্ধানী এই সাংবাদিক প্রতি নিয়ত অনেক সাহসী প্রতিবেদন প্রস্তুত করছেন, যা তার জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে৷ বিশেষ করে সাংবাদিক দম্পতি হত্যার পর বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিষয়টি বারবার ঘুরে ফিরে আসছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে৷ এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সুফিয়ান বলেন, ‘‘আমি মানবাধিকার ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফোর্সের মাধ্যমে আমি হুমকির সম্মুখীন হই, কখনো কখনো হত্যার হুমকিও আমি পেয়েছি৷ এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি যখন বাসায় কথা বলি, তখন আমার স্ত্রী বিভিন্ন সময় আমাকে বলেছেন যে, তুমি এই পেশা ছেড়ে দেও৷ মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে আর বেশি কাজ করার দরকার নেই৷ হয়ত কোন একদিন তোমাকে হত্যা করা হবে৷ কিন্তু আমার দশ বছরের ছেলে বলে যে চালিয়ে যাও বাবা৷ তুমি একজন সাহসী সাংবাদিক, সাহসী বাবা৷''
উল্লেখ্য, ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার সেরা ব্লগ খেতাব জয় করেছে ইরানি ব্লগার আরাস সিগারচির ব্লগ৷ জার্মানির বন শহরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন সিগারচি৷ এছাড়া উপস্থিত ছিলেন এবছরের অন্যান্য মিশ্র ক্যাটেগরিতে বিজয়ী ব্লগের প্রতিনিধিরা৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন