কথায়, তথ্যে ম্যারাডোনা
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা৷ পেশাদার জীবন শেষে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটিয়ে, অন্যের সম্পর্কে মন্তব্য করে মাঝেমধ্যেই আলোচনায় আসতেন তিনি৷
নিজ সন্তানদের নিয়ে মন্তব্য
১৯৮৪ সালে ক্লাওদিয়া ভিলইয়াফানিয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় তার৷ ২০০৪ সালে তা ভেঙে যায়৷ ডালমা ও খিয়ানিনা (আগুয়েরোর সাবেক স্ত্রী) নামে তাদের দুটি সন্তান আছে৷ এর বাইরে বিভিন্ন সময় অনেকের সঙ্গে জড়িয়ে আরও সন্তানের জনক হয়েছেন ম্যারাডোনা৷ তবে ডালমা ও খিয়ানিনাকেই তিনি তার বৈধ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ বাকিরা তার ‘টাকা আর ভুলের’ ফসল বলে মন্তব্য করেন ম্যারাডোনা৷ ছবিতে দুই মেয়ের সঙ্গে ম্যারাডোনা৷
‘চার্চ অফ ম্যারাডোনা’
হ্যাঁ, সত্যিই ম্যারাডোনার নামে একটি ধর্ম আছে৷ ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনার তিন সমর্থক ‘ইগলেসিয়া মারাডোনিয়ানা’ বা ‘চার্চ অফ মারাডোনা’ গড়ে তোলেন৷ ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর ম্যারাডোনা জন্মান৷ সে হিসেবে ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর ছিল ৬০ ডি.ডি৷ ডি.ডি অর্থ ‘ডেসপুয়েস ডিয়েগো’ বা ডিয়েগোর পর৷ প্রতিবছর ৩০ অক্টোবর ক্রিসমাস পালন করা হয়৷ একশ’র বেশি দেশে এই ধর্মের অনুসারীরা রয়েছেন৷ ছবিতে এক অনুসারীকে দেখা যাচ্ছে৷
ফিফা ‘প্লেয়ার অফ দ্য সেঞ্চুরি’
বিশ শতকের সেরা ফুটবলার নির্বাচনে ২০০০ সালে জরিপ করেছিল ফিফা৷ প্রথমে ইন্টারনেট জরিপে ৫৩ শতাংশ ভোট পান ম্যারাডোনা৷ পেলে পান ১৮ শতাংশ ভোট৷ কিন্তু ইন্টারনেট জরিপে ম্যারাডোনা-প্রজন্মের বেশি ভোট পড়া নিয়ে কথা ওঠায় ফিফা তার ম্যাগাজিনের পাঠক, বিভিন্ন দেশের কোচ, কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের নিয়ে দ্বিতীয় একটি জরিপ করে৷ তাতে ৭৩ শতাংশ ভোট পান পেলে৷ ম্যারাডোনা পান ৬ শতাংশ৷ ফলে দুজনকেই যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে ফিফা৷
ম্যারাডোনাকে নিয়ে পেলের মন্তব্য
যৌথভাবে ‘প্লেয়ার অফ দ্য সেঞ্চুরি’ নির্বাচিত হওয়ার পর ম্যারাডোনা সম্পর্কে পেলে বলেছিলেন, ‘‘যদি সে নিজেকে শতাব্দীর সেরা প্লেয়ার মনে করে তাহলে সেটা তার সমস্যা৷’’ এছাড়া ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব পাওয়া সম্পর্কে পেলে বলেছিলেন, ‘‘এটা ম্যারাডোনার ভুল নয়৷ ভুল হচ্ছে তার, যে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে৷’’ অবশ্য ম্যারাডোনা মারা যাওয়ার পর পেলে এক টুইটে তার সঙ্গে স্বর্গে ফুটবল খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন৷
পেলেকে নিয়ে ম্যারাডোনার মন্তব্য
আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব পাওয়ার পর পেলের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘‘পেলের মিউজিয়ামে ফিরে যাওয়া উচিত৷ এবং সেখানেই থাকা উচিত৷’’ এছাড়া ২০০৬ বিশ্বকাপের উদ্বোধনীতে না যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘‘ব্লাডি পেলে আমার আশপাশে হেঁটে বেড়াবে সেটা দেখতে আমি আসিনি৷’’ অথচ ২০০৫ সালে টিভিতে নিজের টকশোর প্রথম অতিথি হিসেবে পেলেকে নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা৷
‘হ্যান্ড অফ গড’
১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করা প্রথম গোল সবসময় আলোচনায় থাকবে৷ ম্যাচ শেষে ম্যারাডোনা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সেই গোলের ক্ষেত্রে ‘ম্যারাডোনার মাথার সামান্য আর ইশ্বরের হাতের সামান্য’ (এ লিটল উইথ দ্য হেড অফ ম্যারাডোনা অ্যান্ড এ লিটল উইথ দ্য হ্যান্ড অফ গড) অবদান আছে৷ ঐ ম্যাচের রেফারি টিউনিশিয়ার আলী বিন নাসেরের সঙ্গে ২০১৫ সালে দেখা হয়েছিল ম্যারাডোনার৷ আলীকে তিনি ‘চিরকালের বন্ধু’ বলেছিলেন৷
‘হ্যান্ড অফ রিজন’
একবার এক আলোকচিত্রীর গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলেছিলেন ম্যারাডোনা৷ এরপর বলেছিলেন, ‘‘আমি যুক্তির হাত দিয়ে (হ্যান্ড অফ রিজন) এটা করেছি৷’’ ছবিটি প্রতীকী৷
১০ নম্বর তুলে রাখা?
ম্যারাডোনাকে সম্মান জানাতে ফ্রান্সের মার্সেই ক্লাবের কোচ আন্দ্রেই ভিলাশ-বোয়াশ সব দল ও সব প্রতিযোগিতা থেকে জার্সি নম্বর ‘১০’কে অবসরে পাঠাতে ফিফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ এর আগে ২০০১ সালে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশন তাদের জাতীয় দলে আর ১০ নম্বর জার্সি ব্যবহার না করতে ফিফার অনুমতি চাইলে ফিফা সেটি দেয়নি৷ তবে ২০০০ সাল থেকে নেপোলি ক্লাব আর কাউকে ১০ নম্বর জার্সি দিচ্ছে না৷
মেসিকে সমর্থন
২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন ম্যারাডোনা৷ কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে হেরে সেবার বিদায় নিয়েছিল মেসির দল৷ এরপর মেসির সমালোচনা শুরু হলে ম্যারাডোনা তাকে রক্ষায় এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ‘‘যারা বলছেন বিশ্বকাপটা মেসির ভাল যায়নি, তারা বোকা৷’’ একমাত্র ম্যারাডোনা আর মেসিই অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ও বিশ্বকাপ - দুটোতেই ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন৷
সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার
১৯৮২ সালে ইটালির সঙ্গে ম্যাচে ম্যারাডোনাকে ২৩ বার ফাউল করা হয়েছিল৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ফাউলের শিকার হওয়া ফুটবলার তিনি৷ এরপর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মোট ৫৩ বার ফাউল করা হয় তাকে৷ সেটিও একটি রেকর্ড৷ এক বিশ্বকাপে কোনো এক ফুটবলারকে এতবার ফাউল করা হয়নি৷