কপ ২৬: গরিব দেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন
৪ নভেম্বর ২০২১১২০টি দেশ অংশ নিয়েছে গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মলনে। বিশ্বের তাবড় নেতারা একাধিক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন এরমধ্যেই। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলির সেই অর্থে প্রতিনিধিত্ব নেই এই সম্মেলনে। অধিকাংশ দেশের পরিবেশবিদরাই সম্মেলনে এসে পৌঁছাতে পারেননি। কারণ, করোনাবিধি মেনে তাদের পক্ষে এসে পৌঁছানো সম্ভবই হয়নি। এর দায় কার? কপ ২৬ আপাতত এই প্রশ্নে উত্তাল।
সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের দাবি, গতবছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি পরিবেশবিদ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে সংখ্যাটি প্রায় ৪০ হাজার। রাষ্ট্রনেতারা ছাড়া অধিকাংশ পরিবেশবিদই অপেক্ষাকৃত উন্নতদেশের বাসিন্দা। যারা ভ্যাকসিন পেয়ে গেছেন। যাদের দেশ থেকে আসার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। কিন্তু গরিব দেশগুলি, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। করোনা ঠেকাতেই ওই সমস্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বহু পরিবেশবিদ আসতেই পারেননি সেখান থেকে। ১০ বা ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনের খরচ তুলতে পারেননি বলে অনেকে আসতে পারেননি। যারা এসেছেন, তাদের অনেকেই গ্লাসগোয় জায়গা পাননি। পার্শ্ববর্তী শহর এডিনবরায় তাদের থাকতে হচ্ছে। নিয়মিত সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না তারা।
প্রশ্ন এবং অভিযোগ
পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তনের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দায় প্রথম বিশ্ব বা উন্নত বিশ্বের। যথেচ্ছভাবে তারা পরিবেশের ক্ষতি করেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফল অনেক বেশি ভোগ করছে অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলি। বিশেষত, পৃথিবীর নীচের অর্ধের আফ্রিকা মহাদেশ। যারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায়, কার্যত তাদের বাদ দিয়েই এত বড় একটি সম্মেলন হয়ে যাচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। অথচ যারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায়, তাদের কথাই শোনার সুযোগ হচ্ছে না।
পরিবেশবিদদের দাবি
২০০৯ সালের জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলি শপথ নিয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলিকে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে দেওয়া হবে। ওই সাহায্য নিয়ে তারা তাদের অর্থনীতিকে সবুজবান্ধব করার চেষ্টা করবে। কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে সচেতন হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই আশ্বাস পূরণ করা হয়নি। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে ওই বিষয়টি নিয়ে যাতে আলোচনা হয়, তার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদদের এক বড় অংশ।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বিশ্বনেতারা। যেভাবেই হোক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হবে। কীভাবে তা সম্ভব, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেকটা কমিয়ে ফেলার শপথ নেওয়া হয়েছে। মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। পরিবেশবিদদের বক্তব্য, এর কোনোটাই সম্ভব নয়, যদি গরিব দেশগুলিকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা না যায়। এবং তাদের সঙ্গে পেতে গেলে তাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদের দিকে নজর দিতেই হবে।
সারা স্টিফেন/অজিত নিরঞ্জন/এসজি