কপ-২৭: মিশরের আলোচনায় প্রধান ভূমিকা রাখবে যারা
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী ১৯৭টি দেশের সবারই নিজস্ব উদ্বেগ ও লক্ষ্য রয়েছে৷ কিন্তু কিছু দেশ ও গ্রুপ এই আলোচনায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ তাদের নিয়ে এই ছবিঘর৷
চীন
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন৷ এ বছরই দেশটিতে গ্রীষ্মে সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে৷ কিন্তু জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বলে কয়লার ব্যবহার বাড়াচ্ছে দেশটি৷ তবে কয়লার ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে চীন৷ জ্বালানি নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রাজনীতিও বড় ভূমিকা রাখছে৷ তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক জলবায়ু আলোচনা বাতিল করেছে চীন৷
যুক্তরাষ্ট্র
চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সম্প্রতি দেশটি কিছু আইনী পরিবর্তন এনেছে৷ এর ফলে দেশটিতে সবুজ জ্বালানি এবং পরিবহণে কয়েক লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগ সম্ভব হবে৷ আগস্টে ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্টে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সই করার ফলে দেশটির ন্যাশনাল গ্রিডে সবুজ বিদ্যুৎ বাড়বে৷ এই দশকের শেষ থেকে বছরে ১০০ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপের ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের আট শতাংশের জন্য দায়ী৷ তবে এর পরিমাণও অনেক বছর ধরেই কমছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে ১৯৯০ সালের তুলনায় কার্বন নিঃসরণ ৫৫% কমানোর আইন পাস করেছে এই জোট৷ কিন্তু কীভাবে এই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, এ নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে৷ জলবায়ু সম্মেলনে একক গ্রুপ হিসাবে আলোচনায় অংশ নেয় ইইউ৷
যুক্তরাজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিদ্যুৎসংকটের ফলে গতবারের জলবায়ু সম্মেলন আয়োজক দেশটির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হুমকিতে পড়েছে৷ ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণে পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটি৷ নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে কীভাবে দেশটি জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, তা স্পষ্ট নয়৷ যুবরাজ থাকা অবস্থায় জলবায়ু নিয়ে সোচ্চার থাকা বর্তমান রাজা চার্লস মিশরের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানানো হয়েছে৷
‘বেসিক’ রাষ্ট্র
এই ব্লকে রয়েছে ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, ভারত এবং চীনের মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ৷ ২০২১ সালের সম্মেলনে চীনের মতো ভারতও কয়লার ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানায়৷ ব্রাজিল কার্বন ক্রেডিট মার্কেটের নিয়ম নির্ধারণে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়৷ সাউথ আফ্রিকা জীবাশ্ম থেকে সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরের জন্য সাড়ে আট হাজার কোটি ডলারের চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে৷
জি-৭৭ + চীন
চীন এবং অন্য ৭৭টি দেশের এই জোট মনে করে ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে৷ কপ-২৭ সম্মেলনে এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেবে বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান৷ এই গ্রুপের অন্যতম দাবি, ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে একটি স্থায়ী তহবিল গঠন করা৷
আমব্রেলা গ্রুপ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা উন্নত দেশগুলোর জোট এটি৷ এতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো৷
আফ্রিকা গ্রুপ
জাতিসংঘের সদস্য আফ্রিকার দেশগুলোর দাবি, আরো বেশি জলবায়ু অর্থায়ন৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রয়োজন বলেও মনে করে এই গ্রুপ৷ মিশরসহ বেশকিছু আফ্রিকান দেশ রূপান্তর জ্বালানি হিসাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত গড়ে তুলতে চায়৷ রাশিয়া থেকে আমদানি করা গ্যাসের বিকল্প হিসাবে ইউরোপকে এই গ্যাস সরবরাহও করতে চায় দেশগুলো৷
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা ৫৮টি দেশের এই গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশও৷ এই গ্রুপের প্রধান দাবি হচ্ছে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’-এর ভিত্তিতে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা৷
ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জোট
এই জোট আওসিস নামেও পরিচিত৷ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূল ক্ষয়ের কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে এই দেশগুলো৷