জার্মানি
৩১ ডিসেম্বর ২০১২জার্মানির রাজনীতিতে বেশ সোজা সাপ্টা কথার জন্য পরিচিত পেয়ার স্টাইনব্রুক৷ সামাজিক গণতন্ত্রী দল বা এসপিডি-র এই নেতার ওপর নির্ভর করছে এখন গোটা দল৷ কারণ আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে চ্যান্সেলর নির্বাচনে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক অর্থমন্ত্রী৷ তবে সোজা সাপ্টা কথার জন্য অনেক সময় বিতর্কেরও জন্ম দেন ৬৫ বছরের এই রাজনীতিক৷
এই যেমন ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইনে পত্রিকার রোববারের সংস্করণে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চ্যান্সেলরের বেতন তার কাজের তুলনায় কম৷ তিনি যে ধরণের দায়িত্ব এবং কাজের চাপ নেন সেই তুলনায় চ্যান্সেলর কম বেতন পেয়ে থাকেন৷ স্টাইনব্রুকের নিজের অঞ্চল নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া অঙ্গরাজ্য৷ সেই রাজ্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এখানকার প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাংকের পরিচালকের বেতনও চ্যান্সেলরের চেয়ে বেশি৷ শুধু চ্যান্সেলর নন, সাংসদদের বেতন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পেয়ার স্টাইনব্রুক৷ তিনি বলেন, সাংসদরা সপ্তাহে প্রায় সাতদিনই কাজ করেন৷ প্রতিদিন তারা ১২/১৩ ঘণ্টা করে কাজ করেন৷ কাজের তুলনায় তাদের বেতন পর্যাপ্ত নয় বলে মন্তব্য করেন স্টাইনব্রুক৷
এসপিডি দলের নেতার এই বক্তব্যের পর তাঁর নিজ দলের ভেতরই গুঞ্জন তৈরি হয়েছে৷ এসপিডির নেতা ও সাবেক চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার সাফ বলে দিয়েছেন, জার্মানির কোন রাজনৈতিক নেতাই কম বেতন পান না৷ বিল্ড আম জোনটাগ পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্যে অবশ্য স্টাইনব্রুকের নাম নেননি শ্রোয়েডার৷ উল্লেখ্য, ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চ্যান্সেলর ছিলেন গেরহার্ড শ্রোয়েডার৷ সেসময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি যে বতন পেতাম তাতেই আমার চলে যেত৷ কেউ যদি মনে করে তার বেতন পর্যাপ্ত নয় তাহলে তিনি অন্য কোন কাজ খুঁজতে পারেন৷ এসপিডির সংসদীয় নেতা ডিটার ভিফেলস্পুয়েৎস বলেছেন, চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালনটাই চমৎকার একটি ব্যাপার এবং বেতনটাও খুব কম নয়৷
উল্লেখ্য, বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বেতন পেয়ে থাকেন ১৬,৬৮৪ ইউরো৷ তার সঙ্গে রয়েছে সংসদ সদস্য হিসেবে ভাতা৷ গত মে মাসে জার্মান মন্ত্রিসভা বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ এর অংশ হিসেবে আগামী বছর থেকে ম্যার্কেলের বেতন বাড়বে শতকরা এক ভাগের একটু বেশি৷
এদিকে ম্যার্কেলের বেতন ছাড়াও তাঁর নারী ভোটারদের কাছে বাড়তি সুবিধার প্রসঙ্গ তুলে বিতর্ক আরও বাড়িয়েছেন স্টাইনব্রুক৷ পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চ্যান্সেলর ম্যার্কেল নারী হওয়ার কারণে নারী ভোটারদের কাছে তিনি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন৷ তবে পুরুষ হওয়ার কারণে তিনি পুরুষ ভোটারদের কাছে কোন সুবিধা পাচ্ছেন কিনা সেটি তিনি বলেন নি৷ তবে জনমত জরিপে নারী ভোটারদের কাছ থেকে খুব একটা সাড়া পাচ্ছেন না পেয়ার স্টাইনব্রুক৷
এর বাইরে স্টাইনব্রুকের বেতন বহির্ভূত আয় নিয়েও কথা শোনা যাচ্ছে৷ তিনি জানিয়েছেন গত তিন বছরে তিনি কেবল বক্তৃতা দিয়েই সাড়ে ১২ লাখ ইউরো কামিয়েছেন৷ মোট ৮৯টি জায়গায় তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন৷ এই আয়ের সঙ্গে রয়েছে সাংসদ হিসেবে বেতন ভাতা৷ স্টাইনব্রুকের এই বক্তব্য আর্থিক মন্দার শিকার ভোটাররা কীভাবে নেবে সেটাই এখন দেখার বিষয়৷
আরআই/এএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ, এপি)