সিডি যখন শিল্পের কাঁচামাল
২৪ মে ২০১৭একটি হিট-গান, চিমটা ও সিডি – ব্যাস, মাটিয়াস হিনৎস এই নিয়েই কাজ করতে পারেন৷ ড্যুসেলডর্ফ শহরের কাছে থাকেন এই শিল্পী৷ প্রায় ৯ বছর ধরে তিনি ‘ডেটা ভাস্কর্য’ নিয়ে চর্চা করছেন৷ এর জন্য তিনি কয়েকশো সিডি গরম করে তার উপকরণ ম্যাক্রোলনকে নতুন রূপ দিচ্ছেন৷ মাটিয়াস হিনৎস বলেন, ‘‘তথ্যের বিকৃতি, বা বলতে গেলে ডিজিটাল মাধ্যমে রাখা গোপন তথ্যের মাধ্যমে আমি অ্যানালগ বস্তু তৈরি করি, যা ছুঁয়ে দেখা যায়, ঘেঁটে দেখা যায়৷ তার উপর ধাক্কা মারা যায়, অনুভব করা যায়, এমনকি কিছু শুনতে পাওয়া যায়৷ তার নিজস্ব গন্ধও রয়েছে৷ এই বিষয়টি বেশ রোমাঞ্চকর৷’’
মাটিয়াস হিনৎস নিজের ভাস্কর্যগুলির নাম দিয়েছেন ‘অ্যানালগ-ডিজিটাল’৷ ড্যুসেলডর্ফ-এর শিল্প অ্যাকাডেমিতে শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি বৈপরিত্যের মধ্যে ব্যবধান দূর করার কাজে মনোনিবেশ করেছেন৷ নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি কয়েক'শ ‘ডেটা-স্কাল্পচার’ তৈরি করেছেন৷ তাঁর কাজের মূলমন্ত্র হলো – বস্তুর মধ্যে মানুষ৷
তবে মানুষের মূর্তি তৈরির কাজে বেশ কাকতালীয়ভাবে তিনি ভাস্কর্যের কাঁচামাল হিসেবে সিডি ব্যবহার করতে শুরু করেন৷ ২০০৮ সালে এক হাসপাতাল তাঁকে একটি ভাস্কর্য গড়ে তোলার কাজ দেয়৷ নিজের সৃজনশীল সত্তা দিয়ে ক্রোমোজোমের রূপ ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি৷ তখন তাঁর মনে হয়েছিল, কমপ্যাক্ট ডিস্ক বা সিডি শুধু তথ্য ধারণ করার মাধ্যম নয়৷ মাটিয়াস হিনৎস বলেন, ‘‘তথ্যভরা একটি সিডি মানুষের একটি জিনের মতো৷ জিনের উপর জিন বসালে শেষ পর্যন্ত একটা আস্ত মানুষ সৃষ্টি হয়৷ শৈল্পিক ক্ষেত্রে কাজ করার সুবাদে আমি সিডির উপর সিডি বসিয়ে একটি মূর্তি তৈরি করতে পারি৷’’
তবে মাটিয়াস হিনৎস তাঁর ডিজিটাল ভাস্কর্যের অনুপ্রেরণা পান এক অ্যানালগ উপকরণ থেকে – ব্রকোলি নামক সবজি থেকে৷ প্রাথমিক খসড়ার জন্য তিনি সেই সবজির অংশ ব্যবহার করেন৷ কয়েকদিন ধরে শুকিয়ে নিয়ে তার রূপান্তর ঘটান৷ সেটাই হয় তাঁর ডেটা ভাস্কর্যের ভিত্তি৷
মাটিয়াস হিনৎস কাঠ ও ফুলের মতো প্রাকৃতিক উপকরণ নিয়ে কাজ করেন৷ কিন্তু গলানো সিডিগুলি যোগসূত্র হিসেবে থাকে৷ উপকরণ হিসেবে এর অনেক সুবিধা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কাজের সময় বিরক্ত লাগতো, যে কাঠ ক্ষয়ে যায়, মোমে ফাটল ধরে অথবা রোদ উঠলে গলে যায়৷ পোকায় কাঠ খেয়ে নেয়৷ ম্যাক্রোলন-এর সম্ভাবনা দেখে খুবই উৎসাহ পেয়েছি৷ সেটা নিয়ে কত কী যে করা যায়, নানা রকম রূপ দেওয়া যায়৷ কোনো ভুল করলে বা সন্তুষ্ট না হলে বিনা সমস্যায় সবকিছু ধ্বংসও করে দিতে পারি৷’’
এই কৃত্রিম উপাদানের আরও কিছু সুবিধা রয়েছে৷ এটি হালকা, স্থিতিশীল – যে কোনো আবহাওয়ায় অক্ষত থাকে৷ চার মিটার লম্বা এমন ভাস্কর্য বাড়ির সামনেই সহজে বসানো যায়৷ মাটিয়াস হিনৎস-এর মূর্তিগুলি সত্যি চোখে পড়ার মতো৷ ড্যুসেলডর্ফ শহরের এক গ্যালারিতে যেমনটা শোভা পাচ্ছে৷
গোটা জার্মানিতেই তাঁর ভাস্কর্যের চাহিদা রয়েছে৷ যেমন ২০১০ সালে প্লাস্টিক সংক্রান্ত এক বাণিজ্যমেলা উপলক্ষ্যে তাঁকে একটি ভাস্কর্য তৈরি করতে হয়েছিল৷ ২০১৬ সালে তথ্য প্রযুক্তি মেলা ‘সেবিট’-এও তাঁর সৃষ্টি দেখা গেছে৷ সেগুলির কোনো নাম দেওয়া হয় না৷ সিডির মধ্যে কোন তথ্য লুকিয়ে রয়েছে, শিল্পী তা নিয়ে মাথা ঘামান না৷ হিনৎস বলেন, ‘‘এর কোনো কন্টেট নেই৷ মনের মধ্যেই তা থাকে৷ যার যেমন ইচ্ছা ভেবে নিতে পারে৷’’
মাটিয়াস হিনৎস এখনো নানা উপকরণ নিয়ে কাজ করার সব সম্ভাবনা পরখ করে দেখেন নি৷ তবে ভবিষ্যতেও তিনি তাঁর পছন্দের উপকরণ সিডি নিয়ে কাজ করতে চান৷
ডানিয়েলা স্পেট/এসবি