কমলা বেগমের জৈব খামার
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকে বাড়ে ফসলের উৎপাদন৷ কিন্তু এতে জমির যেমন দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়, বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিও৷ ফলে বিশ্বজুড়েই গড়ে উঠছে জৈবকৃষি আন্দোলন৷ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা বাড়ছে বাংলাদেশেও৷
সার উৎপাদনে কেঁচো!
দেশজুড়ে যখন রাসায়নিক সার ও জিনগতভাবে পরিবর্তন করা বীজ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন স্রোতের উলটো দিকে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের কিষানি কমলা বেগম৷ নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন জৈব খামার৷ কমলা বেগম কেঁচোকে ব্যবহার করেন জৈবসার উৎপাদনে৷ ইংরেজীতে এই পদ্ধতিতে উৎপন্ন সারকে বলা হয় ‘ভার্মি কম্পোস্ট’৷ এই পদ্ধতিতে গাছের পাতা, খড়, গোবর, লতাপাতা, পচনশীল আবর্জনা খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে৷ সেই মল থেকেই তৈরি হয় কেঁচো সার৷
ফলমূল, সবজি থেকে সার
বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবজি, ফলমূলের উচ্ছিষ্ট জোগাড় করেন কমলা৷ সব একসাথে মিশিয়ে জমানো হয় একটি পাত্রে৷ একসময় সেই সবজি-ফলমূল পঁচে তৈরি হয় জৈব কম্পোস্ট৷ এসব উপাদানে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে বলে তা জমির জন্য ক্ষতিকর হয় না৷
খোপ সার
স্থানীয়ভাবে ‘খোপ সার’ বলে পরিচিত হলেও দেশের অন্যান্য জায়গায় সাধারণভাবে এই সারকে গোবর সার হিসেবেই চেনেন কৃষকরা৷ গরুর গোবর, হাঁস-মুরগি ও ছাগলের বিষ্ঠা দিয়ে তৈরি হয় এই সার৷ জমির উর্বরতা বাড়াতে বিশেষ খ্যাতি আছে এই সারের৷
জৈব বীজ
যেসব বীজ প্রাকৃতিক উপায়ে গাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় জৈব বীজ৷ তবে এখন বিভিন্ন উপায়ে জিনগতভাবে পরিবর্তন করে বীজ ছাড়া হয় বাজারে৷ এসব বীজ থেকে জন্মানো গাছ আগাছাপ্রতিরোধী এবং বিভিন্ন রোগ থেকে ফসলকে দূরে রাখে৷ কিন্তু এই বীজে উৎপাদিত ফসল স্বাস্থ্য এবং জমির জন্য ক্ষতিকর বলে উঠে এসেছে বিভিন্ন গবেষণায়৷ কমলা বেগম সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বীজ সংগ্রহ করে ফসল ফলান৷
জৈব ক্ষেত
শুধু সার ও বীজ থাকলেই হবে না৷ এর সঠিক প্রয়োগও জানতে হবে৷ কমলা বেগম জৈব সারের প্রয়োগ যাতে ঠিকমতো হয়, তা-ও নিশ্চিত করেন৷ শুধু জৈব সার ব্যবহার করে প্রায় দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছেন আখ খেত৷ এছাড়াও ঢেঁড়শ, লাউসহ নানা ধরনের সবজির চাষ করেন তিনি৷
কীটনাশকেও বিষ নেই
রাসায়ানিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও, তাতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও থেকেই যায়৷ ফলে কমলা বেগমের মতো অনেকেই ঝুঁকছেন জৈব কীটনাশকের দিকে৷ বিভিন্ন রকম গাছের পাতা, ছাল এবং বুনো ফল দিয়ে তৈরি হয় এই কীটনাশক৷ এই কীটনাশক ব্যবহার করে বেশ ফলও পাচ্ছেন সিঙ্গাইরের কৃষকরা৷
ফেরোমোন ফাঁদ
ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে কৃষক এখন নিজেই তৈরি করতে পারছেন ফেরোমোন ফাঁদ৷ এই পদ্ধতিতে একটি কৌটায় ফেরোমোন নামের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়৷ এর গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় এসে পড়ে কৌটার মধ্যে৷ জৈব পদ্ধতি না হলেও এতে ক্ষতি হয় একেবারেই কম৷ পুরো ক্ষেতে রাসায়নিক ছড়িয়ে না দিয়ে মাঝেমধ্যে শুধু ফেরোমোনের কৌটা পালটে দিলেই সম্ভব হয় পোকা দমন৷ এই পদ্ধতি এখন বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷
জৈবকৃষি আন্দোলন কিভাবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ে যায়? মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷