করাচিতে বর্জ্য বেচাকেনা
২২ জানুয়ারি ২০২০করাচি শহরের বাইরে জাম চক্র এলাকাটি বিখ্যাত বর্জ্যের জন্য৷ ৫শ হেক্টর জমিতে পাহাড় সমান উঁচু বর্জ্য পড়ে থাকে এখানে৷ এটি এখানকার সবচেয়ে বড় বর্জ্যের ভাগাড়৷ ময়লা কুড়ানি আর বর্জ্য মাফিয়াদের আড্ডাখানা৷
এই অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্যের কেনাবেচা এখানকার পরিবেশ নষ্টের গোড়া৷ আর এটা একরকম স্বীকৃতই৷ বিষয়টি ভাবায় সবাইকেই৷ কিন্তু খুব বেশি মানুষ মাথা ঘামাবার সাহস করেন না৷
এ অবস্থায় তিন বছর আগে আহমাদ শাব্বার ‘গার্বেজ ক্যান' নামের একটি পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্টার্টআপ গড়ে তোলেন৷ কারণ পাকিস্তানিরা জনপ্রতি এক কেজিরও কম বর্জ্য তৈরি করলেও সরকার কেবল তার অর্ধেকটাই জোগাড় করতে পারে৷
গারবেজক্যানের প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ শাব্বার বলেন, ‘‘সরকারের জন্য পুরোটা ব্যবস্থাপনা করা কঠিন৷ জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা পৃথিবী থেকে ২০ বছর পিছিয়ে আছি৷ এটা মেনে নিয়ে সুশীল সমাজ আধুনিক সমাধান বের করার চেষ্টায় আছে৷''
করাচি প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তের হাজার টন কঠিন বর্জ্য তৈরি করে৷ বর্জ্য তৈরির এ হার প্রতিদিনই বাড়ছে৷ বর্জ্য তৈরির একটা বড় জায়গা হলো করাচি বিশ্ববিদ্যালয়৷
এখানে বিনা পয়সায় বর্জ্য সংগ্রহ করে গার্বেজক্যান৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কোনো পয়সা দিতে হয় না৷ এর বদলে কোম্পানি সেখানকার আবার ব্যবহার করা যায় এমন বর্জ্য বিক্রি করে অর্থ আয় করে৷ প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ কেজি পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করে গার্বেজক্যান৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই উদ্যোগ খুব একটা লাভজনক না হলেও এটা ছাড়তে চায় না গার্বেজক্যান৷
‘‘এটা শুধু ময়লা আবর্জনার বিষয় না, জীবনমানেরও বিষয়৷ কিছুটা স্বার্থপরের মতোও শোনায়৷ কারণ আমি যদি করাচি বা পাকিস্তানে থাকতে চাই, আমি এই বর্জ্যের মাঝখানে থাকতে চাই না,'' বলেন শাব্বার৷
কোম্পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সব ব্যবহারযোগ্য বর্জ্যকে আলাদা করা হয়৷ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় কাগজ ও প্লাস্টিক৷ সবচেয়ে বেশি দাম অ্যালুমিনিয়াম ক্যানের৷
সময়ভেদে প্লাস্টিকের দাম ভিন্ন হয়৷ গরমে দাম বেশি৷ কারণ তখন বেশি ব্যবহার হয়৷ তখন প্রতিকেজিতে প্রায় ৫০ টাকা পাওয়া যায়৷
এমন আধুনিক এই ধারণা থাকা সত্ত্বেও করাচিতে বর্জ্য কেনাবেচা একটি ঝামেলাপূর্ণ প্রক্রিয়া৷
শাব্বার বলেন, ‘‘অবশ্যই গারবেজ মাফিয়ারা এর সঙ্গে জড়িত৷ এরাই অবৈধভাবে এই ব্যবসা চালায়৷ আপনি যদি এর গোড়া খুঁজতে যান, দেখবেন এখানে আছে শিশুশ্রম, আছে শিশু যৌননিপীড়ন৷ মাদকাসক্তরা ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে মাদক কেনে৷''
মাফিয়াচক্রের বেশিরভাগ থাকেন করাচির উপকণ্ঠে শের শাহ কলোনিতে৷ এর পাশেই শত কোটি টাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিরাট কারবার৷
এবং দক্ষিণ এশিয়ার বাতিল পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার৷ অ্যালুমিনিয়ামের মতো দাম আছে এমন প্রতি কেজি বর্জ্য এখানে আসে৷
এরপর যথাযথ যন্ত্রপাতি ছাড়াই এগুলোকে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে৷ শুধু করাচিতেই নয়, পুরো পাকিস্তানেরই এমন দশা৷ শাব্বার মনে করেন, ১ কোটি ৪০ লাখ করাচিবাসী চাইলেই পরিবেশবান্ধব শহর গড়ে তুলতে পারেন৷সেজন্য চাই নতুন নতুন কোম্পানি ও নতুন আইডিয়াগুলোর সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব৷
রিজকি নুগ্রাহা/জেডএ