1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা আতঙ্কে কলকাতায় বাড়ি ছাড়তে বলা হল বিদেশিকে

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
২৪ মার্চ ২০২০

তিনি জার্মান, ফলে করোনা সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই কলকাতায় এক গবেষককে বাড়ি ছাড়তে বললেন বাড়িওয়ালা।

https://p.dw.com/p/3ZwmG
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Kumar

তাঁর দোষ, তিনি বিদেশি। তাই ছেড়ে দিতে হবে বাড়ি। এমনকী, থাকা যাবে না পাড়ায়। করোনা ভাইরাসের আবহে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন জার্মান নাগরিক নিকোলাস গেরল্ড। তাও খাস কলকাতায়।

ডয়চে ভেলেকে নিকোলাস জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। তাঁর কথায়, ''একটি হাউসিং সোসাইটিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকি। গবেষণার কাজে দীর্ঘদিন ভারতে আছি। কলকাতাতেও এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেল। এমন অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি।'' তিনি জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে আচমকাই ওই সোসাইটির সভাপতি ঘরে ঢুকে তাঁকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। নিকোলাস কারণ জানতে চাইলে তাঁকে বলা হয়, তিনি বিদেশি। করোনার সংক্রমণ থাকতে পারে। তাঁর জন্য গোটা সোসাইটিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে জন্য ওই মুহূর্তে তাঁকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। নিকোলাসের বক্তব্য, ''বিনীত ভাবে আমি ওঁকে বলার চেষ্টা করি, গত এক বছরেরও বেশি সময় আমি ইউরোপে ফিরিনি। গত কয়েকমাসের মধ্যে আমি বিদেশে কোথাও যায়নি। এমনকী, আমার পাসপোর্টও ওঁকে দেখানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সভাপতি কোনও কথাই মানতে চাননি।''

প্রায় ২০ মিনিট তর্কবিতর্ক চলার পরে নিকোলাসকে বলা হয়, তাঁকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। এবং সেই গোটা সময়টা নিকোলাসকে পাহারা দেওয়ার জন্য সোসাইটির নিরাপত্তরক্ষীকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

আশার কথা, ওই দিনই বিকেলে নিকোলাসের কাছে সভাপতি ক্ষমা চেয়ে নেন। তাঁর যুক্তি, করোনা আতঙ্কেই এই কাজ করে ফেলেছেন তিনি। আপাতত নিকোলাসকে বাড়ি থাকার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার কারণেই তাঁর সোসাইটির এলাকাটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন নিকোলাস। তাঁর আশঙ্কা, এরপরে এলাকাতেও তাঁর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটতে পারে। গবেষকের ভয়, এই সময় বাড়ি থেকে বার করে দিলে নতুন বাড়ি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চাইবেন না। দেশে ফেরারও উপায় নেই। ফলে কার্যত পথে পথে কাটাতে হবে।

নিকোলাসের সোসাইটির আবাসিকদের সঙ্গে ডয়চে ভেলে যোগাযোগ করলেও এ বিষয়ে কেউ কোনও কথা বলতে চাননি। পুলিশের বক্তব্য, এমন কোনও অভিযোগ তাঁরা পাননি। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

নিকোলাসের অভিজ্ঞতা অবশ্য প্রথম নয়। বিদেশ থেকে কলকাতায় কাজ করতে এবং পড়তে আসা একাধিক ব্যক্তি একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটালির এক তরুণীর বক্তব্য, ''নিকোলাসের কাছে সোসাইটির সভাপতি তো তাও ক্ষমা চেয়েছেন। আমাকে তো দুই দিনের নোটিসে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত এক বন্ধুর বাড়িতে আছি।''

গোটা ভারত জুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। কলকাতাতেও বিবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু একই সঙ্গে মানুষের মনে এক প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ পর্যন্ত সৎকার করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজের অনেকেরই বক্তব্য, যত দিন যাবে, এমন ঘটনা তত বাড়বে। কারণ, সাধারণ মানুষ প্রবল ভয়ে আছে। মনরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সামাজিক আন্দোলনের কর্মী মোহিত রণদীপ ডয়চে ভেলেকে এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ''আতঙ্কের সময়ে মানুষ মানবিকতা হারিয়ে ফেলে। আনন্দের কথা, শেষ পর্যন্ত নিকোলাসের বাড়িওয়ালা সম্বিত ফিরে পেয়েছেন। ক্ষমা চেয়েছেন। এ ধরনের কোনও ঘটনা আমার কানে এলে অবশ্যই পাশে থাকার চেষ্টা করব।''

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো