করোনা কমায় প্রকাশ্য উৎসবে প্রবাসীদের ঢল

জার্মানিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় অনেক বিধিনিষিধ শিথিল রয়েছে৷ মানহাইম শহরে তিনশ’ জন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে একত্রে অনুষ্ঠান করতে পারছেন৷ সেই সুযোগে শনিবার সেখানে এক অনুষ্ঠানে হাজির হন শতাধিক মানুষ৷

মানহাইমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ পূর্ণমিলনীতে হাজির ছিলেন ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের নানা দেশের মানুষ৷ ছবিতে পাকিস্তানি কয়েকজন তরুণীকে ঘাসের উপর মাদুর বিছিয়ে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে৷

পুরো করোনার সময়টা ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে কাটিয়েছেন সোনালী৷ ২০০৬ সাল থেকে জার্মানিতে বসবাসরত এই নারী জানান, করোনার সময় কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় সন্তানদের ২৪ ঘণ্টাই নিজের সঙ্গে রাখতে হয়েছে৷ কাজটি কঠিন হলেও, সামলাতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি৷ এখন করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় আবারও ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন সোনালী৷ তবে ভবিষ্যতে আবার কী হয় তা নিয়ে উদ্বেগ আছে তার৷

মানহাইমের ঈদ আয়োজনে কথা হয় নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিকা সিদ্দিকা ইসলামের সাথে৷ সে জানায় যে করোনার সময় তাদের স্কুল বন্ধ হয়নি৷ বরং যখন সংক্রমণ বেশি ছিল তখন অনলাইনে ক্লাস চলেছে৷ সংক্রমণ কমে গেলে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের৷ পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে শ্রেণীকক্ষে৷

মানহাইমে প্রবাসীদের নিয়ে ঈদ উৎসব আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম৷ তিনি জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর বাঙালিদের নিয়ে ঈদ উৎসব করা যায়নি৷ তবে, এবার বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় আয়োজনটি করা গেছে৷

বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য মাত্র দুই মাস আগে জার্মানিতে এসেছেন শায়লা৷ হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের আসার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বটে তবে থেমে যায়নি৷ যেসব শিক্ষার্থী এখনো জার্মানিতে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের ধৈর্য ধরে সব প্রক্রিয়া শেষ করার পরামর্শ তার৷

ঈদ পূর্ণমিলনীতে প্রধান আকর্ষণ ছিল বারবিকিউ৷ চিকেন উইংস, গরুর মাংসের সসেজ, খাসির মাংসসহ নানা কিছু পুড়িয়ে উৎসবে আগতদের পরিবেশন করা হয়েছে৷

তবে, ঈদ পূর্ণমিলনীতে চা এবং মিষ্টান্ন সরবরাহ করেছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আগত অভিবাসীদের কয়েকজন৷

মানহাইমের একটি পার্কে এবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়৷ সেখানে সবুজ পরিবেশের মাঝে অনেককেই দেশীয় পোশাকে ছবি তুলতে দেখা গেছে৷

জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ গত কয়েকসপ্তাহ কম থাকলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ যদিও সংক্রমণ এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে গ্রীষ্মের ছুটির পর পরিস্থিতি আবারো বদলে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ তবে আপাতত বিধিনিষেধের বাইরের সময়টাই উপভোগ করছেন সবাই৷

ঈদ উৎসবে জার্মানিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে৷ এই আয়োজনে তাদেরকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম৷