1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা কি ঠেকানো যেত?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ জুলাই ২০২১

বাংলাদেশকে করোনার দুইটি ঢেউ অনেকটাই বিপর্যস্ত করে দিয়েছে৷ প্রথম ঢেউটি ছিল গত বছর উহান করোনার৷ আর দ্বিতীয় ঢেউটি এবছর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের৷ প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি করোনা ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছিল?

https://p.dw.com/p/3wac2
Bangladesch Dhaka | Corona | Start der landesweiten Impfkampagne
ছবি: Asif Mahmud Ove/bdnews24.com

বাংলাদেশকে করোনার দুইটি ঢেউ অনেকটাই বিপর্যস্ত করে দিয়েছে৷ প্রথম ঢেউটি ছিল গত বছর উহান করোনার৷ আর দ্বিতীয় ঢেউটি এবছর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের৷ প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি করোনা ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছিল?  

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ৷ জুলাই মাসে করোনা সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়৷  এরপর কমে আসলেও এখন আবার করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে৷ বাংলাদেশে এপর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১৭ হাজার ২৭৮ জন৷ শনাক্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৪ জন৷ এখন প্রতিদিন মৃত্যু দুইশ’র উপরে৷ আর এই মাসেই করোনায় সর্বোচ্চ সংখ্যায় মারা যাচ্ছেন৷ 

বাংলাদেশে  করোনা টেস্টের ওপর নির্ভর করছে শনাক্তের সংখ্যা৷ এখন প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়৷ তবে এই টেস্ট বাড়ানো হলে সঠিক পরিস্থিতি বোঝা যেত৷  

ডা. মো. শহীদুল্লাহ

গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার আগেই করোনা ঠেকাতে বিমান ও স্থল বন্দরে বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ আর চলতি বছরের মে মাসে সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত হওয়ার পরও ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়৷ কিন্তু কাজ হয়নি৷ করোনা ঠেকানো যায়নি৷ আইসোলেশন, কোয়ারান্টিন ঠিকমত না করায় এই পরিস্থিতি হয়েছে৷ গত বছর করোনা ছিলো ঢাকা  ও শহর কেন্দ্রিক৷ কিন্তু এবার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে৷  এখন শহরের চেয়ে গ্রামে সংক্রমণ বেশি৷  আর গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে পরিস্থিতি অনেক খারাপ৷  

করোনার টিকা নিয়েও বাংলাদেশকে হোঁচট খেতে হয়েছে৷ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশেকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা দেয়ার চুক্তি করলেও শেষ পর্যন্ত তারা ৭০ লাখের বেশি টিকা দেয়নি৷ ফলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার গণটিকা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়৷  

ডা. কামরুল ইসলাম

এই করোনা ঠেকাতে গত বছর টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি দিয়ে সব কিছু বন্ধ রাখা হয়৷  আর এবারও লকডাউন ও কঠোর লকডাউ দেয়া হচ্ছে৷ দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষ হয়েছে ১৪ জুলাই৷ কিন্তু এই এই লকডাউনও সঠিকভাবে করা হয়নি৷ আর স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ও মাস্ক পরাতে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা কম৷ ফলে করোনা ছড়াচেছ দ্রুত৷  

তাই বিশ্বের অনেক দেশ করোনা পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে এলেও বাংলাদেশে দীর্ঘায়িত হচ্ছে৷ 

জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ বলেন,“১৫ জুলাই থেকে আমরা আরও দুই সপ্তাহের লকডাউনের প্রস্তাব করেছিলাম৷ কিন্তু উল্টো শিথিল করা হয়েছে৷ এতে করোনা আরো ছড়িয়ে পড়বে৷ আর লকডাউন এর আগে ঢিলেঢালা হওয়ায় সংক্রমণ কমানো যায়নি৷” 

বিএসএমইউ এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন,“কোনো দেশই করোনা ঠেকাতে পারেনি৷ বাংলাদেশের পক্ষেও সম্ভব ছিল না৷ তবে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে আমরা এখনো করোনা বিদায় করতে পারছি না৷” 

তিনি বলেন,“লকডাউন, ভ্যাকসিন, চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের ব্যবস্থাপনার সংকট এবং সমন্বয়ের অভাব শুরু থেকেই আছে৷ আছে করোনার সময় স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি৷ ফলে বাংলাদেশ করোনা থেকে বের হতে পারছে না৷” 

ডা. মো শহীদুল্লাহ

তার মতে, বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে লকডাউন পুরোপুরি সম্ভব না৷ গত ঈদে এক কোটি মানুষ মহানগর থেকে গ্রামে গেল৷ ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না৷’’ 

এই বৈশ্বিক মহামারি পৃথিবীর কোনো দেশই ঠেকাতে পারেনি৷ তবে সঠিক এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর  ক্ষয় ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা যেত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী৷  তিনি বলেন,“আমরা বিজ্ঞানসম্মতভাবে এটা মোকাবেলার চেষ্টা করিনি৷ আমরা কোনো পরিকল্পনা করিনি৷ এপিডেমিক প্রজেকশন করতে হয় তা আমরা করিনি৷ ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা দীর্ঘায়িত হচ্ছে৷  যেভাবে চলছে তাতে বাংলাদেশ ঠিক কবে করোনা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে তা বলা কঠিন৷” 

তবে জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান ডা. মো শহীদুল্লাহ মনে করেন,“বাংলাদেশ যে খুব খারাপ করেছে তা নয়৷  ভারত, ব্রাজিলসহ অনেক দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের পারফরমেন্স তত খারাপ না৷ তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা করা গেলে পরিস্থিতি আরো ভাল করা সম্ভব ছিল৷’’ 

আর বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ মনে করেন,“ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এর চেয়ে আর ভালো কিছু করা সম্ভব নয়৷ এখানকার মানুষ মনে করে তারা করোনায় নয়, না খেয়ে মারা যাবেন৷ তাই করোনা ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কাছে৷”