টিকা না নিলে নিষেধাজ্ঞা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও করোনা টিকা নিতে প্রস্তুত নয়, জার্মানিতে এমন মানুষের জন্য একের পর এক বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ কোনো জটিলতা ছাড়াই বিনামূল্যে টিকা নেবার যাবতীয় সুযোগ পেয়েও জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো সেই পথে যেতে নারাজ৷ জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশের কিছু বেশি অংশ টিকার সব প্রয়োজনীয় ডোজ নেবার পর সংখ্যাটা প্রায় থমকে গেছে৷ আবেদন-নিবেদন বা বিশাল প্রচার অভিযান চালিয়েও বাকিদের মন জয় করা সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা এখনও অবাস্তব থেকে যাচ্ছে৷
এদিকে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের রোষের মুখে মূলত টিকা না নেওয়া মানুষের মাঝে সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে৷ হাসপাতালেও তাদের সংখ্যাই বেশি৷ হেমন্ত ও শীতকালে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে জার্মানির স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামোর উপর অহেতুক প্রবল চাপ সৃষ্টি হতে পারে, গোটা দেশকে যার মূল্য চোকাতে হবে৷ এমন পরিস্থিতি এড়াতে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র থেকে সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর উপর চাপ বাড়ছে৷
আগামী ১১ই অক্টোবর থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষার জন্য টিকা নিতে অস্বীকার করা মানুষদের মাসুল দিতে হবে৷ এই সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল৷ বুধবার ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা আরও কড়া সিদ্ধান্ত নিলেন৷ এতকাল করোনা ভাইরাসের কারণে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের সময় সরকারই ভরতুকি হিসেবে কর্মীদের বেতনের ব্যয়ভার গ্রহণ করে আসছিল৷ বুধবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিকা না নেওয়া মানুষ সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন৷ জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান বলেন, বৃহত্তর সমাজের প্রতি ন্যায্য মনোভাব দেখাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে৷ যারা টিকা নিতে চান না, তাদের বিশেষ করে সেই সিদ্ধান্তের আর্থিক পরিণাম মেনে নিতে হবে৷ তাছাড়া ১লা নভেম্বর থেকে এই নিয়ম চালু হওয়ার আগেই করোনা টিকা নেবার সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে কোনো সমস্যা হবে না৷
সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এমন মানুষের উপর চাপ বাড়ছে৷ জার্মানির একাধিক রাজ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ একাধিক স্থাপনা শুধু টিকাপ্রাপ্ত ও করোনাজয়ীদের প্রবেশাধিকার দিচ্ছে৷ অর্থাৎ দ্রুত করোনা টেস্ট করিয়ে আর সেই সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না৷ স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রেও করোনা টিকা নিতে অস্বীকার করা মানুষদের মাসুল বাড়ানোর প্রাথমিক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে নতুন করে বেসরকারি স্বাস্থ্য বিমা করাতে গেলে অদূর ভবিষ্যতেই এমন শর্ত চালু করা হতে পারে৷
সমাজের সংখ্যাগুরু অংশের মধ্যেও করোনা টিকা নিতে অনিচ্ছুক মানুষের প্রতি সহানুভূতির মাত্রা কমছে৷ জার্মানিতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক নয় বটে৷ তবে নিজের এবং অন্যদের স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্বজ্ঞান না দেখালে বৃহত্তর সমাজ আর এমন মানুষের ‘স্বাধীনতা'-র পরোয়া করতে প্রস্তুত নয়৷ একাধিক জনমত সমীক্ষায় এমন মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ কিন্তু সমাজে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বেড়ে চলা সংঘাত হিংসা পর্যন্ত গড়ানোর কারণে দুশ্চিন্তা বাড়ছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এপি)