1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বাড়ছে

১৩ মে ২০২০

শরণার্থীরা সব দখল করে নিচ্ছে বলে ২০১৫ সালে ভয় পেয়েছিলেন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তারা৷ আর এখন করোনার সময়ে তারা মনে করছেন, রহস্যময় এক বিশ্ব শক্তির ক্ষমতা বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/3c9cO
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Barbour

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বর্তমানে সমাজের রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে৷ এ বিষয়ে এখনও গবেষণামূলক তথ্য পাওয়া না গেলেও গত কয়েকদিনে আমি এর অনেক বাস্তব প্রমাণ পেয়েছি৷ ভাইরোলজিস্ট, বিল গেটস, টিকা, আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও করোনা ঠেকাতে কড়াকড়ির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য দিয়ে আমার ফেসবুকের টাইমলাইন ভরে গেছে৷

২০১৫ সালে ইউরোপে যখন শরণার্থী সংকট শুরু হয়েছিল তখন জার্মানিতে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল৷ জার্মানদের পরিবর্তে আঙ্গেলা ম্যার্কেল গোপনে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে লোকজন আনার পরিকল্পনা করছেন বলে দাবি করেছিলেন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তারা৷

হাঙ্গেরীয়-মার্কিন বিলিওনেয়ার ও জনসেবক জর্জ সরোসের জন্ম এক ইহুদি পরিবারে৷ বিশ্বব্যাপী ইহুদি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি জড়িত এমন তত্ত্বও অতীতে ছড়িয়েছে৷

করোনা কি ল্যাবে তৈরি?

তবে এবার ষড়যন্ত্রের ধরনটা অন্যরকম৷ কিন্তু কেন? এর কারণ সম্ভবত করোনা এই বিশ্বের প্রায় সবাইকে ভোগাচ্ছে৷ বাচ্চারা কিন্ডারগার্টেন বা স্কুলে যেতে পারছেনা৷ মা-বাবাকে বাচ্চাদের দেখাশোনার পাশাপাশি আয়ের বিষয়টিও ঠিক রাখার চেষ্টা করতে হচ্ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানও কয়েক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে৷

একটি ভাইরাস কি সমাজে এমন প্রভাব ফেলতে পারে? এটা কি সত্যি হতে পারে? এর উত্তরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেশিরভাগই মানুষই হয়ত বলবেন হ্যাঁ৷ কারও চোখে হয়ত তখন থাকবে অশ্রু৷ আর বাকি অল্প যারা আছেন, যারা কড়াকড়ির বিরুদ্ধে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, তাদের বিশ্বাস ‘যারা ক্ষমতায় আছেন’ তারা আসলে শয়তানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছেন৷

২০১৫ সালে যারা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ছিলেন তারা তখন আসলে বাস্তব পরিস্থিতির সমালোচনা করেননি, তারা সমালোচনা করেছিলেন রাজনীতিবিদদের কৌশলের- যা প্রায় দশ লাখ শরণার্থী আসার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল৷

বর্তমানে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তারা মৌলিক তথ্য নিয়ে প্রশ্ন করছেন৷ ভাইরাস ছড়ানো নিয়ে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাকে বিতর্কিত করছেন৷ অবশ্য এই বিষয়েও একমত হতে পারছেন না তারা৷ কেউ মনে করছেন করোনা ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর না, কেউ ‘হার্ড ইমিউনিটি’কে সমর্থন করছেন৷ আর একটি অংশ আছে যারা টিকার কার্যকারিতায় বিশ্বাস করেন না৷

Kommentarfoto: Prof. Dr. Dr. Alexander Görlach
আলেকজান্ডার গ্যোরলাখ ছবি: Harvard University/D. Elmes

একটি সমাজ যখন কোনো একটি মৌলিক তথ্যে একমত হতে পারেনা, তখন কী ঘটে? এমন হতে পারে- কোনো তথ্যকে বিভিন্ন উপায়ে ব্যাখ্যা করার জন্য খোলামেলা বিতর্কের আর কোনো জায়গা বা প্রতিষ্ঠান থাকবেনা৷ এমন মনোভাব ইতিমধ্যে জার্মান সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ক্যাথলিক বিশপ সম্প্রতি একটি চিঠি লিখেছেন৷ তারা মনে করছেন, করোনা সংকট একটি ‘বিশ্ব সরকার’ তৈরির অজুহাত মাত্র৷ তাদের অভিযোগ, মহামারির কারণ দেখিয়ে ‘অযৌক্তিকভাবে’ মানুষের মৌলিক অধিকার চর্চা সীমিত করা হচ্ছে৷ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ করার ক্ষমতাকেও বেশি করে দেখানো হচ্ছে বলে মনে করেন তারা৷

অবশ্য এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি উপভোগ করছেন বিশ্বের একনায়কেরা, যারা সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিতভাবে বিশেষজ্ঞ ও অভিজাতদের কথায় সন্দেহ পোষণ করে এসেছেন৷ মহামারির সময়টি তারা তাদের সমর্থকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করছেন তারা৷ এই একনায়কেরা শিক্ষা বা জ্ঞানের পূজারি নন, তারা ভিত্তিহীন গুজব আর ক্ষমতার পূজারি৷ একসময় নির্বুদ্ধিতা ও কুসংস্কার গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ছুড়ে মারবে৷ করোনার সঙ্গে এই পরিণতির কোনো সংযোগ নেই, অনেকদিন ধরেই পপুলিস্টরা আমাদের সমাজকে বিষ দিয়ে কলুষিত করছে৷

আলেকজান্ডার গ্যোরলাখ ‘কার্নেগি কাউন্সিল ফর এথিকস ইন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স'এর সিনিয়র ফেলো৷ এছাড়া তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রিলিজিয়ন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইনস্টিটিউট'এর সিনিয়র রিসার্চ এসোসিয়েট৷

আলেকজান্ডার গ্যোরলাখ/জেডএইচ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য