করোনা প্রভাব: যমুনায় ফিরলো নীল জল
৮ এপ্রিল ২০২০যমুনায় আবার ফিরে এলো নীল জল। দিল্লি থকে মথুরা পর্যন্ত এতদিন যমুনায় জলের রঙ ছিল নিকষ কালো। পুতিগন্ধময়। দিল্লিতে তো চরম দূষণের ফলে যমুনার কালো জল থেকে ফেনা উড়তো। সেই যমুনা লকডাউনের কিছুদিনের মধ্যেই একেবারে পরিষ্কার। জলের স্বচ্ছ্বতা ফিরে এসেছে।নদীর ধারে দাঁড়ালে অনেকটা নিচ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। দুর্গন্ধ উধাও। দিল্লির যমুনায় ফিরে আসছে মাছ। শুধু যমুনা নয়, গঙ্গার জলেও দূষণের পরিমাণ কমেছে।
এমনিতে গঙ্গার জলের রঙ ঘোলা। যমুনার জল নীল। আর সেই নীল জল নিয়ে রচিত হয়েছে কত গান-কবিতা। মথুরা-বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের যমুনা-তীরের লীলাকাহিনি। বছরখানেক আগের কথা। উত্তরাখণ্ড থেকে গঙ্গা ও যমুনা বাঁচানোর দাবি নিয়ে দিল্লি এসেছিলেন বেশ কিছু পরিবেশ সচেতন সাধারণ মানুষ। দিল্লিতে যমুনার হাল দেখে এক বৃদ্ধা হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, ''আমরা যমুনাকে কী ভাবে নিচে নামিয়েছি। তোমরা তার কী দশা করেছো!''
যমুনা বঁচানোর জন্য ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত জাপানের সহায়তায় এক হাজার ৭৭০ কোটি ইয়েন খরচ করা হয়েছে। মোদী সরকারও যমুনার দূষণ কমাবার কথা বলেছে। কিন্তু অবস্থার বিশেষ বদল হয়নি। লকডাউনের ফলে কল-কারখানা বন্ধ, সেখান থেকে দূষিত পদার্থ আর যমুনায় এসে পড়ছে না। তাই যমুনা অনেকাংশে ফিরে পেয়েছে নিজের রূপ। দিল্লি জল বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রাঘব চাড্ডা জানিয়েছেন, তাঁরা দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় যমুনার জল পরীক্ষা করে দেখেছেন। জলের মান অনেকটা ভালো হয়েছে। হরিয়ানা থেকে পরিষ্কার অ্যামোনিয়া মুক্ত জল আসছে।
তা হলে কারখানাগুলি কি আইন মানছে না? তাদের অপরিশোধিত বর্জ্য গিয়ে পড়ছে যমুনায়? পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''দেখা গিয়েছে, নদীগুলিতে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা থেকে আসা অপরিশোধিত জল ও বর্জ্য ৭০ শতাংশ দূষণ ঘটায় এবং কল-কারখানা থেকে বাকি ৩০ শতাংশ দূষণ হয়। আইন অনুযায়ী, কোনও কারখানা অপরিশোধিত ও ক্ষতিকর বর্জ্য নদীতে ফেলতে পারে না। এটা দেখার কথা কেন্দ্রীয় ও রাজ্যগুলির দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। লকডাউনের জন্য এখন কলকারখানা বন্ধ। তাদের কাছ থেকে কোনও বর্জ্য নদীতে মিশছে না। এর ফলে যদি বাতাবরণ ভালো হয়, নদীতে দূষণ কমে, তা হলে বোঝা যাবে, শিল্পের দূষণের ফলেই নদীগুলির অবস্থা এতটা খারাপ। এবং যাঁদের তা দেখার কথা, তাঁরা দেখেননি। এটা তো দেখাই যাচ্ছে, গঙ্গা ও যমুনার জলে দূষণ কমেছে।''
লকডাউনের ফলে আপাতত যমুনা স্বচ্ছ। লকডাউন উঠে গেলে তো আবার পুরনো অবস্থায় ফিরবে যমুনা। তারপরেও যদি কারখানাগুলিতে কড়াভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা যায় এবং নিকাশির জল শোধন করা যায়, তা হলে গঙ্গা ও যমুনায় দূষণ অনেকটাই কম করা সম্ভব। লকডাউন অবশ্য কবে উঠবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। মহারাষ্ট্র সহ কিছু রাজ্য চাইছে, লকডাউন চলুক। কর্ণাটকের মতো কিছু রাজ্যের মতে, হট স্পট মানে যেখানে করোনায় লোক মারা যাচ্ছেন, সেই এলাকাগুলি বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় লকডাউন উঠুক।
বেঙ্গালুরু তেমনই একটি হট স্পট। অথচ, সেখানে কারাগা উৎসব পালনের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন, ''ধর্মরায়না স্বামীর মন্দিরে একেক বারে চার থেকে পাঁচজনকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।'' কিন্তু প্রশ্ন হলো, তার জন্য যে বিশাল লাইন পড়তে পারে, তার কী হবে? দেখা যাচ্ছে, নিজামুদ্দিনের তাবলিগের ঘটনা থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে না রাজ্য সরকারগুলি। এখানে একজন করোনা আক্রান্তের কাছ থেকে প্রচুর লোক আক্রান্ত হতে পারেন। করোনা আরও ছড়াতে পারে। ইয়েদুরাপ্পারা তা বুঝতে পারছেন না?
জিএইচ/এসজি(পিটfআই, এএনআই)