করোনার জ্ঞান ছাড়াই ওষুধ কতটা কার্যকর হবে?
৪ এপ্রিল ২০২০করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা করতে মোটামুটি তিন ধরনের প্রচেষ্টা চলছে৷ প্রথমত টিকা আবিষ্কার করে বিশ্বের মানুষকে করোনার থাবা থেকে আগেভাগেই বাঁচানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেক দেশের গবেষক৷ কিন্তু সেই প্রচেষ্টা যে বেশ সময়সাপেক্ষ, চরম আশাবাদীরাও সেই বাস্তব মানতে বাধ্য হচ্ছেন৷ দ্বিতীয় প্রচেষ্টার আওতায় করোনা ভাইরাস নিরাময়ের ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে৷ সেই উদ্যোগ সফল হলে অন্যান্য রোগীদের মতো করোনা ভাইরাস আক্রান্তদেরও চিকিৎসা করা সম্ভব হবে৷ তৃতীয় প্রচেষ্টার লক্ষ্য হলো, প্রচলিত কোনো ওষুধ দিয়েই করোনার রোগীদের চিকিৎসার করা৷ যেমন এবোলা বা এইডসের ওষুধ নির্দিষ্ট কিছু করোনা রোগীর উপর প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি৷ জাতীয় সংকীর্ণ স্বার্থে অথবা মুনাফার লোভে বিচ্ছিন্ন গবেষণা বিশ্বজুড়ে বর্তমান সংকট কাটাতে মোটেই সহায়ক হবে না৷ লাল ফিতের ফাঁস এড়িয়ে গবেষণার সুফল দ্রুত গোটা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তবেই এই সংকট কাটানো সম্ভব হবে৷
বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন৷ ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা এমন মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, যার মাধ্যমে সম্ভবত কভিড-১৯ সংক্রমণ এড়ানো যেতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে সার্স ও মার্সের মতো অন্যান্য করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন৷ গবেষক দলের সদস্য আন্দ্রেয়া গামবটো বলেন, এই দুই ভাইরাসের মতে কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও স্পাইক প্রোটিন ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জরুরি ভূমিকা রাখে৷ তাই এভাবেই কভিড-১৯-কে কাবু করার চেষ্টা চালাতে হবে৷
পিটসবার্গে ইঁদুরের উপর ‘পিটকোভ্যাক' নামের যে পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেটি মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে কভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে অসংখ্য অ্যান্টিবডি গড়ে তুলেছে৷ তবে সেই প্রাণীগুলির উপর দীর্ঘ সময় ধরে নজর না রাখলে প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়িত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়৷ মার্স ভাইরাসের পরীক্ষামূলক টিকার ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট ছিল৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কভিড-১৯ প্রতিষেধক পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের উপর প্রয়োগের আশা করছেন গবেষকেরা৷
এদিকে জাপানের ফুজিফিল্ম কোম্পানি অ্যাভিগান নামের নিজস্ব ওষুধ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কতটা সক্ষম, তা পরীক্ষা করতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে৷ উল্লেখ্য, চীনে এই ওষুধ করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷ অনেকের ক্ষেত্রে দ্রুত আরোগ্য লক্ষ্য করা গেছে৷ কমপক্ষে ১৪ দিন পরীক্ষার পর এই ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে৷ কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, জুন মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন রোগীর উপর এই ওষুধের প্রভাব পরীক্ষা করা হবে৷
প্রবল চাপের মুখে টিকা ও ওষুধ নিয়ে গবেষণার কার্যকারিতা সম্পর্কেও কিছু সংশয় দেখা যাচ্ছে৷ কারণ গোটা বিশ্বের ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা এখনো কভিড-১৯ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন নি৷ এমনকি এই ভাইরাসের কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তাঁরা বিভ্রান্ত৷ বিশেষ করে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সামান্য বা কোনো লক্ষণই দেখা না যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত বিস্মিত৷ ফলে কভিড-১৯ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছাড়াই টিকা বা ওষুধ কতটা কার্যকর হবে, সেই প্রশ্নও বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)