1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনাও রুখতে পারেনি অস্ত্রের ব্যবসা

৬ ডিসেম্বর ২০২১

গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি সংকটে। কিন্তু তার জন্য বন্ধ হয়নি অস্ত্রের ব্যবসা। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে অস্ত্র কেনাবেচা।

https://p.dw.com/p/43sLv
অস্ত্র ব্যবসা
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture alliance

পৃথিবীর সার্বিক অর্থনীতি এখনো করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির বক্তব্য, ২০২০ সালে বিশ্বের অর্থনীতি প্রায় তিন শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অথচ অস্ত্রের ব্যবসা বেড়েছে এক দশমিক তিন শতাংশ। সম্প্রতি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপরি) এই তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের তথ্য বলছে, অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রায় প্রতিটি দেশই করোনাকালে অস্ত্রের ব্যবসায় চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, খাবার, ওষুধ-সহ একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এই সময়ে আমদানি-রপ্তানি করতে অসুবিধা হলেও অস্ত্রের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।

বিশ্বের প্রথম ১০০টি অস্ত্র তৈরির সংস্থাএকত্রে ২০২০ সালে অস্ত্র বেচে লাভ করেছে ৫৩১ বিলিয়ন ডলার। যা বেলজিয়ামের মতো একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর চেয়েও বেশি। সিপরির গবেষকদের বক্তব্য, করোনায় অ্যামেরিকা সবচেয়ে বেশি মার খেলেও অস্ত্র ব্যবসায় তার প্রভাব পড়েনি। অ্যামেরিকার মোট ৪১টি সংস্থা গোটা বিশ্বের মোট অস্ত্রের ৫৪ শতাংশ তৈরি করেছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র লকহেড মার্টিন ৫৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে।

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্কুস বায়ারের বক্তব্য, অস্ত্র সংস্থাগুলি তাদের ব্যবসা ধরে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলির উপর। তার বক্তব্য, ''জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক বছরে বিশ্বের বড় অস্ত্র তৈরির সংস্থাগুলি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রচারে ব্যয় করেছে ৮৫ মিলিয়ন ডলার। আর লবিংয়ের জন্য খরচ করেছে দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।''

এশিয়ায় বাড়ছে অস্ত্র বিক্রি

এশিয়ায় অস্ত্র বিক্রি চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। গবেষকদের বক্তব্য, অস্ত্র বিক্রিতে ক্রমশ প্রথম সারিতে উঠে আসছে ভারতের নাম। ভারতের চারটি সংস্থা প্রথম ১০০টি অস্ত্র তৈরির কোম্পানির মধ্যে উঠে এসেছে। এক বছরে তারা মোট এক দশমিক দুই শতাংশ অস্ত্র তৈরি করেছে। যা দক্ষিণ কোরিয়ার সমান। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরই অস্ত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তবে এশিয়ায় অস্ত্রের বাজার সবচেয়ে বেশি চীনের। চীনের পাঁচটি সংস্থা সব মিলিয়ে ১৩ শতাংশ অস্ত্র তৈরি করেছে। সিপরির বক্তব্য, চীনের অস্ত্র তৈরির সংস্থাগুলি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। চীন সব তথ্যও দেয় না। বেশ কিছু সংস্থা মিলিটারি-সিভিলিয়ান ফিউশন। ফলে চীনের যে তথ্য মিলেছে, বাস্তবে চীনের উৎপাদন তার চেয়েও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

এক বছরে উন্নতি

সিপরি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে গত এক বছরে, ঘোর করোনাকালে যুক্তরাজ্যের অস্ত্রের বাজার সবচেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, ছয় দশমিক দুই শতাংশ। এরপরেই অ্যামেরিকা, এক দশমিক নয় শতাংশ। চীনে বেড়েছে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ। জার্মানির এক দশমিক তিন শতাংশ। রাশিয়া এবং ফ্রান্সের অবশ্য কমেছে। রাশিয়ার কমেছে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ। এবং ফ্রান্সের সাত দশমিক সাত শতাংশ।

রাশিয়ার ক্ষতি

অস্ত্র ব্যবসায় একসময় বড় খেলোয়াড় ছিল রাশিয়া। অ্যামেরিকার সঙ্গে যে সমানে টক্কর দিত। রাশিয়ার অস্ত্রের বাজার ছিল এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের একাংশ। সিপরির রিপোর্টের ব্যাখ্যা, চীন এবং ভারতে অস্ত্রের উৎপাদন বাড়ায় তার প্রভাব পড়ছে রাশিয়ায়। ব্যবসা চোখে পড়ার মতো মার খেয়েছে। ফ্রান্সের অস্ত্র ব্যবসাও এক বছরে খানিকটা মার খেয়েছে।

ইউরোপ সার্বিকভাবে লাভ করেছে

ইউরোপের মোট ২৬টি কোম্পানি একত্রে অস্ত্র তৈরি করেছে মোট উৎপাদনের ২১ শতাংশ। যৌথভাবে লাভ করেছে নয় বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে যুক্তরাজ্য এবং জার্মানি সবচেয়ে বেশি অস্ত্র তৈরি করেছে।

অস্ত্র এবং সিলিকন ভ্যালি

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে সিপরির রিপোর্টে। এখন আর কেবল অস্ত্রতৈরির পুরনো সংস্থাগুলির দিকে তাকিয়ে নেই বিশ্বের ডিফেন্স সিস্টেম। সিলিকন ভ্যালির সংস্থাগুলি অর্থাৎ, গুগল, মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিও তাদের প্রভূত সাহায্য করছে। কারণ ইনফরমেশন টেকনোলজি এখন সাইবার যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার। সম্প্রতি মার্কিন সামরিক বাহিনী মাইক্রোসফটের কাছ থেকে কিছু চশমা কিনেছে। যে চশমা পড়লে সেনারা ওই জায়গার বিভিন্ন তথ্য দেখতে পাবেন। ফলে অস্ত্র ব্যবসার হিসেব করতে হলে এখন সিলিকন ভ্যালির সংস্থাগুলিকেও ধরতে হবে।

ম্যাথিয়াস ফন হাইন/এসজি