করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গে রক্তের সংকট
১৫ মে ২০২০‘‘প্রত্যেক বছরই গরমকালে রক্তের একটা সংকট হয়৷ সাধারণভাবে গরমকালে ভোটগুলো হয়৷ ভোটের কিছু বাধ্যবাধকতা, বিধিনিষেধের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ওই সময় রক্তদান শিবির করতে পারে না৷ ফলে গত বছর গরমকালেও একটা সংকট গেছে৷ কিন্তু এ বছর এই করোনা এবং লক ডাউন জনিত কারণে একটা ভয়ঙ্কর সংকট তৈরি হয়েছে৷''
জানালেন শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত গৌতম সরকার৷ প্রতি বছরই এই মরশুমি সংকট দেখা দেয় বলে বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল, ব্লাড ব্যাঙ্ক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলিও৷ এবার লক ডাউনের কারণে সেই উদ্যোগ অনুপস্থিত৷ এছাড়া আরও কিছু বাস্তবিক অসুবিধার কথা ডয়চে ভেলেকে জানালেন গৌতমবাবু৷ বললেন, ‘‘আমরা (এবার)শুরুই করতে পারছিলাম না লকডাউনের কারণে৷ পুলিশ থেকে অনুমতি দিচ্ছিল না৷ যদিও রক্তদান করার ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতির আগে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না৷ কিন্তু যেহেতু লক ডাউন এবং সর্বত্রই ১৪৪ ধারা, সেহেতু পুলিশের একটা অনুমতির প্রশ্ন থাকে৷ পুলিশ অনুমতি পাচ্ছিলাম না রক্তদান শিবির করার ক্ষেত্রে৷ আরেকটা অসুবিধে, করোনা নিয়ে যে একটা আতঙ্ক রয়েছে মানুষের মধ্যে, যে রক্ত দিলে তার ইমিউনিটি পাওয়ার কমে যাবে, তা হলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে৷ আরেকটা দিক ছিল, রক্ত দিতে গেলে তার রক্তে যদি করোনা ভাইরাস থাকে, সেটা অন্যত্র ছড়িয়ে যাবে৷ এরকম কিছু কাজ করছিল মানুষের মধ্যে৷''
ব্লাডমেটস, লাইটহাউস, লাইফ কোয়েস্ট— এরকম একাধিক স্বেচ্ছাসেবী, অলাভজনক সংগঠন আছে, যারা বছরের বিভিন্ন সময়ে নিজস্ব উদ্যোগে রক্ত সংগ্রহ করে থাকে৷ এদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত শবনম ব্যানার্জি, যিনি কলকাতা শহর এবং শহরতলীর যে রক্তের চাহিদা, তা মেটানোর এক সমবেত প্রয়াসে সামিল৷ তিনি জানাচ্ছেন, করোনা লক ডাউনের কারণে যেহেতু অন্যান্যবারের মতো রক্তদান শিবির করা যাচ্ছে না, মোবাইল ব্লাড কালেকশন ভ্যান নিয়ে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়৷ যাতে রক্ত দিতে উৎসাহী লোককে বাড়ি থেকে দূরে যেতে না হয়৷
বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মোবাইল ইউনিটগুলো কীভাবে কার্যকর হচ্ছে বোঝাতে গিয়ে শবনম ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ছোট ভ্যানে তিনটে বেড থাকে, বড় ভ্যানে ছ'টা বেড থাকে৷ বড় ভ্যান একটা এসি বাস৷ একটা করে বেড বাদ দিয়ে যদি আমরা ডোনেশন করাই, তা হলে ছ'ফুট ডিস্ট্যান্স থাকে৷ এই ভ্যানগুলো, সরু গলি ছাড়া, যে কোনও মেইন রোডে যেতে পারে৷ এই ভ্যানগুলোকে ডিসইনফেক্ট করা যায়, স্যানিটাইজেশন করা যায়৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্মেন্টের ১০টা আছে, স্বাস্থ্য ভবন থেকে পারমিশন নিয়ে যেটা বের করতে হয়৷ এছাড়া প্রাইভেট আছে৷ বারাসত ব্লাড ব্যাঙ্কের আছে, লাইফ কেয়ার–এর আছে, মানিকতলা (ব্লাড ব্যাঙ্ক)–এর আছে৷ এরকম মোবাইল ভ্যান আছে৷ এতে সুবিধে দুটো৷ এতে সুবিধে দুটো, এই মুহূর্তে৷ এক, ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলে, সেখানে যত ভিড়, ওখানে ঠিকঠাক স্যানিটাইজেশন হচ্ছে কি না আমরা জানি না৷ এক্ষেত্রে কন্ট্রোলটা টু সাম এক্সটেন্ট আমাদের হাতে থাকবে, বা আমরা সুপারভাইজ করতে পারব৷ দ্বিতীয় যেটা, সেটা হচ্ছে, লোককে এই সিচুয়েশনে (রক্ত দিতে)বাড়ি থেকে দূরে যেতে হবে না৷ এটা এই মুহূর্তে অত্যন্ত ইম্পর্ট্যান্ট একটা স্টেপ৷''
শবনম জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য ভবনের অনুমতি নিয়ে সরকারি গাড়ি পাওয়া একটু কঠিন, যেহেতু বড় রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তারা সেই বড় গাড়িগুলো পেতে চান৷ কিন্তু ছোট ব্লাড ব্যাঙ্কের গাড়ি চেষ্টা করলেই পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থা এখন সেভাবেই রক্ত সংগ্রহের উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে সংকট কিছুটা হলেও মেটানো যায়৷