করোনার টিকা যেভাবে পেতে চায় বাংলাদেশ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০তবে এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম৷ তার মতে, ‘‘আগে ঠিক করতে হবে কোন ভ্যাকসিন আমাদের দেশের মানুষের জন্য উপযোগী৷’’
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে চীনা ভ্যাকসিনকে৷ আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা গেছে, এই মাসের মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে বাংলাদেশে৷ এর ভালো দিক হলো, ট্রায়াল সফল হলে বাংলাদেশেরই দুটি কোম্পানি এখানে এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে৷ সেই দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে এরই মধ্যে সিনোভ্যাকের চুক্তিও হয়েছে৷ তারা বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করবে৷ আর এক লাখ ১০ হাজার ভ্যাকসিন ফ্রি দেবে৷ এই ট্রায়াল পরিপূর্ণভাবে শেষ হতে ১৮ মাস লাগার কথা৷ ট্রায়াল শুরুর ছয় মাস পর ডাটা অ্যানালাইসিস শুরু হবে৷ ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত আমার কাছে চীনা ভ্যাকসিনই সুবিধাজনক মনে হচ্ছে৷’’
বাংলাদেশ এরই মধ্যে চীন ছাড়াও রাশিয়ার সাথে ভ্যাকসিনের জন্য কথা বলেছে৷ স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘‘আমরা সারা দুনিয়ায় যেখানেই ভ্যাকসিন হচ্ছে সেখানেই চিঠি দিচ্ছি, পত্রালাপ করছি, যোগাযোগ করছি৷ আমরা বসে নেই৷ প্রধানমন্ত্রী তো সংসদে বলেছেন, যেখানেই আগে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আমরা ভ্যাকসিন আনবো৷ প্রয়োজনে কিনে আনব৷ এজন্য আমরা টাকাও প্রস্তুত রেখেছি৷’’
ভ্যাকসিন পেতে যোগাযোগের তৎপরতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চীনা ভ্যাকসিনের আমাদের দেশে ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছি৷ রাশিয়ার সাথে কথা বলেছি৷ ভারতের সাথে কথা বলেছি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি৷’’ তিনি জানান, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইম্যুনাইজেশন-এর (গ্যাভি) সঙ্গেও বাংলাদেশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে৷ ওখানে বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত৷ বুকিং দেয়া আছে৷
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি হতাশার খবর৷ বেক্সিমকো ফার্মা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন বাংলাদেশে বিপণনের চুক্তি করেছে৷ সেরাম ইন্সটিউটের সঙ্গে ভারতে টিকা উৎপাদনের চুক্তি আছে অক্সফোর্ডের৷ বাংলাদেশে এই টিকা উৎপাদনের কোনো চুক্তি হয়নি৷
ভারত নিজেও করোনার টিকা নিয়ে কাজ করছে৷ ভারতের বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল ওই টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে করতে চায়৷ বাংলাদেশেরও তাতে আগ্রহ আছে৷ ভারত থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবে বাংলাদেশ৷
১৭৯টি পৃথক টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে ১৪৫টি৷ আর পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে ৩৪টি৷ এসব টিকা শেষ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্রি কোয়ালিফাই করলেই বাজারজাত করার অনুমতি পাবে৷ কিন্তু রাশিয়া ১২ আগস্ট টিকা আবিস্কারে সফলতার ঘোষণা দিলেও স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি৷ তারপরও রাশিয়ার টিকা পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশেরও একটি প্রতিষ্ঠান টিকা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
যেসব দেশের মানুষ গরিব বা নিম্ন আয়ের, তাদের বিনামূল্যে বা নামমাত্র দামে টিকা সরবরাহের জন্য কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ সংস্থাটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস (কোভ্যাক্স) নামে একটি কোয়ালিশন গড়ে তুলেছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভ্যাক্স-এর সাথেও যোগাযোগ রাখছে৷
ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘এছাড়া বিনামূল্যে বা কম মূল্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার আরো কিছু কোয়ালিশন আছে৷ তাদের সাথেও যোগাযোগ করতে আমরা স্বাস্থ্যমন্ত্রলয়কে পরামর্শ দিয়েছি৷’’
তার মতে, আগে ভ্যাকসিন পাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কোন ভ্যাকসিন বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ও কাদের ভ্যাকসিন প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণও জরুরি৷ কারণ, করোনা বিভিন্ন দেশে তার রূপ পরিবর্তন করছে৷ তাই বাংলাদেশে ট্রায়াল দিয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে, এখানে কোন ভ্যাকসিন কার্যকর হবে৷ আর সবার ভ্যাকসিন লাগবেনা৷ যার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তার তো ভ্যাকসিনের প্রয়োজন নেই৷ যে ভাইরাস বহন করছে তাকে দিয়েও তো কোনো লাভ নেই৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করছি, ভ্যাকসিন আসলেই সবাই বেঁচে যাবো৷ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে না৷ বিষয়টি সেরকম নয়৷’’
জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি এখন মূলত ভ্যাকসিন এলে তা সংরক্ষণ ও বিতরণ কীভাবে হবে, তা নিয়ে কাজ করছে৷
২৯ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...