1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, ফের শুরু কড়াকড়ি

২০ জুলাই ২০২০

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন করে নিয়মের কড়াকড়ি শুরু হয়েছে।

https://p.dw.com/p/3fa8m
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Feeney

বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় করোনা ভাইরাস ফিরে আসতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যার জেরে সাময়িক স্বস্তির পরে ফের করোনা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে বিভিন্ন দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দ্বিতীয় দফায় আরও ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে করোনা।

ইউরোপের পরিস্থিতি

গত মাস থেকে ক্রমশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল ইউরোপ। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিতে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু হয়েছিল। খুলে গিয়েছিল রেস্তোরাঁ, স্কুল, অফিস। খুলে দেওয়া হয়েছিল সীমান্তও। কিন্তু নতুন করে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় ফের কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ফ্রান্স। বাইরে বেরলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ মাস্ক না পরলে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে। জার্মানিতেও করোনা কড়াকড়ি অনেকটাই শিথিল করা হয়েছিল। গরমে বহু মানুষ বেড়াতেও যাচ্ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়াতে নতুন করে করোনার দাপট শুরু হয়েছে। রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৪৯ জন। এর অধিকাংশই বাভারিয়াতে। এর মধ্যেই বহু মানুষ বাভেরিয়াতে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন। যে কারণে প্রশাসন জানিয়েছে, বাভেরিয়ার বিমানবন্দরে নামলেই করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।

এ দিকে গত শুক্রবার থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকেও করোনাকালীন অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা চলছে। সূত্র জানাচ্ছে, করোনার সময়ে অর্থনৈতিক প্যাকেজ নিয়ে ঐক্যমত্যে আসতে পারছে না দেশগুলি। সে কারণেই আজ সোমবারও বৈঠকে বসার কথা সকলের। বৈঠকে এক দশমিক ৮৫ ট্রিলিয়ন ইউরোর প্যাকেজ ঘোষণা করার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু তা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে। নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এক সময় আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই সকলে মত দেন।

অস্ট্রেলিয়ার পরিস্থিতি

নিউজিল্যান্ড আগেই নিজেদের করোনাহীন রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করে দিয়েছে। নতুন করে সেখানে আর করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। অস্ট্রেলিয়াও করোনার সঙ্গে যুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। লকডাউনও তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মেলবোর্নে নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে ফের সেখানে আংশিক লকডাউন জারি করা হয়েছে। মেলবোর্নেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সিডনির দিকে দ্বিতীয় দফায় করোনার প্রকোপ পৌঁছয়নি। অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, আপাতত মেলবোর্নের দিকেই প্রশাসন দৃষ্টি রেখেছে। নতুন নিয়ম দুই সপ্তাহ অন্তত জারি থাকবে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চীন এবং এশিয়া

এশিয়ার পরিস্থিতি সংকটজনক। ভারত সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। ভারতে প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যায় করোনা ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগাস্টে ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে। ফলে বেশ কিছু রাজ্য নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছে। দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই সহ বিভিন্ন শহরের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনা বাড়লেও মৃত্যুর হার কমেছে।

চীনেও নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় এখনও পর্যন্ত ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে দেশের সর্বত্র চিত্রটি এক নয়। বেজিংয়ে করোনার প্রকোপ কম। শিনজিয়াং প্রদেশেই মূলত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে সেখানেও নতুন বিধি তৈরি করেছে প্রশাসন।

হংকংও জানিয়েছে সেখানে করোনার প্রকোপ আগের চেয়ে বেড়েছে। কঠিন নিয়ম তৈরি করে করোনা মোকাবিলার কথা জানিয়েছে সেখানকার প্রশাসন।

দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। মার্চ মাস থেকে সেখানে লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। কিন্তু তাতেও করোনার সংক্রমণ আটকানো যায়নি। জুন-জুলাই মাসে লকডাউনের কড়াকড়ি অনেকটাই শিথিল করা হয়েছে। এবং তার জেরে সংক্রমণের পরিমাণও লাফিয়ে বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাও নতুন করে লকডাউনের কথা ভাবছে। তবে দ্বিতীয় দফার লকডাউন এলাকাভিত্তিক হতে পারে বলে প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে।

অ্যামেরিকা এবং মাস্ক

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনা নিয়ে কড়াকড়ি শুরু হলেও অ্যামেরিকার পরিস্থিতি সেই তিমিরেই। নিউ ইয়র্কের পর দেশের একাধিক রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। এখনও সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে অ্যামেরিকায়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চান না বলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেননি। যদিও দেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার জন্য যা করা দরকার ছিল, তার অনেক কিছুই করেননি ট্রাম্প। যা নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে একাধিকবার বিতর্কও হয়েছে তাঁর।

সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীই দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণ নিয়ে নতুন করে ভাবিত।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিডাব্লিউ)