করোনার পর ট্রাম্পের প্রথম সভা
১৬ অক্টোবর ২০২০বৃহস্পতিবার তাঁদের মুখোমুখি দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে এক মঞ্চে থাকতে চাননি প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন। ভার্চুয়াল বিতর্ক সভা চেয়েছিলেন। ট্রাম্প তাতে রাজি হননি। তাই বৃহস্পতিবার অ্যামেরিকায় দ্বিতীয় প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক হয়নি। তবে পৃথক দুইটি টেলিভিশন শো-তে অংশ নিয়েছিলেন যুযুধান দুই পক্ষ। ট্রাম্পের শো হয়েছে মিয়ামিতে। বাইডেনের ফিলাডেলফিয়া।
বিতর্কের সূত্রপাত ট্রাম্পের করোনা হওয়ার পর। আক্রান্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্প করোনা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন সমর্থকদের হাত নাডতে। যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল অ্যামেরিকায়। এর পর ট্রাম্প জানিয়ে দেন পরবর্তী প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে তিনি অংশ নিতে রাজি। কিন্তু তা হতে হবে মুখোমুখি, ভার্চুয়াল বিতর্কে তিনি অংশ নেবেন না। অন্য দিকে বাইডেন শিবির জানিয়ে দেয়, আপাতত একই মঞ্চে বিতর্কে অংশ নিতে চান না বাইডেন। ভার্চুয়াল বিতর্কে অংশ নিতে চান। ফলে শেষ পর্যন্ত বিতর্কসভা বসানোই যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার দুই নেতাই পৃথক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দর্শকদের প্রশ্ন শুনেছেন তাঁরা। উত্তরও দিয়েছেন।
মুখোমুখি না হলেও দুই পক্ষই নিজেদের অনুষ্ঠানে অন্য পক্ষকে আক্রমণ করেছেন। বাইডেন প্রশ্ন তুলেছিলেন ট্রাম্পের করোনা মোকাবিলা নিয়ে। বলেছেন, প্যানডেমিকের গোটা সময়টা জুড়ে একের পর এক ভুল তথ্য দিয়ে গিয়েছেন ট্রাম্প। মানুষকে আশ্বাস তো দিতেই পারেননি উল্টে সমস্যায় ফেলেছেন। বাইডেনের বক্তব্য, ট্রাম্প বলেন, তিনি মানুষকে প্যানিকে ফেলতে চাননি, আসলে উনি নিজেই প্যানিক করেছেন।
ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, প্যানডেমিক এ বার শেষ হবে। যদিও গোটা ইউরোপ জুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। নতুন করে কার্ফিউ ঘোষণা করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
এ দিন ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয় কেন তিনি মাস্ক ব্যবহার করেন না। ট্রাম্পের জবাব, মাস্ক পরা নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যেই দ্বিমত আছে। আদৌ মাস্ক কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। সে কারণেই তিনি সাধারণত মাস্ক ব্যবহার করেন না।
প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছিল বর্ণবাদের প্রসঙ্গ। হোয়াইট সুপ্রিমেসির প্রসঙ্গ। সেখানে ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছিলেন বর্ণবাদী গোষ্ঠীগুলি। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল অ্যামেরিকায়। বৃহস্পতিবার অবশ্য ট্রাম্প এক কথায় বলে দিয়েছেন, তিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। হোয়াইট সুপ্রিমেসির বিরুদ্ধে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিউঅ্যানন বিতর্ক প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি তিনি। শুধু বলেছেন, কিঅ্যানন পেডোফেলিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে, যা তিনি সমর্থন করেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, পেডোফেলিয়া নিয়ে ট্রাম্পের হয়ে কিউঅ্যানন যা প্রচার করে, তা মিথ্যা।
ট্রাম্প এ দিন দাবি করেছেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে অ্যামেরিকার অর্থনীতি দ্রুত উন্নতি করবে। দেশের মানুষের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য নিয়ে আরও নতুন নতুন কাজ করবেন তিনি। সকলে যাতে চাকরি পান, তার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, ট্রাম্প যা যা বলেছেন, তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। করোনা দেখিয়ে দিয়েছে অ্যামেরিকার দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। অর্থনীতিতে অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে অ্যামেরিকা। করোনা কালে বহু মানুষের চাকরি গিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের অন্য অংশের বক্তব্য, করোনা কাল দিয়ে ট্রাম্পের ব্যর্থতা বিচার করা অন্যায়। কারণ এটি এক বিশেষ সময়। গোটা বিশ্বেই একই অবস্থা।
বৃহস্পতিবার বাইডেন ফের প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পের ট্যাক্স নিয়ে। নিউ ইয়র্ক টাইমস কিছু দিন আগে রিপোর্ট করেছে যে, ট্রাম্প বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর বিপুল সম্পত্তি। তার জন্য বিপুল লোন রয়েছে তার। সে কারণেই ট্যাক্স নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। তবে ঠিক কী জটিলতা আছে, তা এখনো পর্যন্ত খুব স্পষ্ট করতে পারেননি তিনি। উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রেসিডেন্টের ট্যাক্সের কাগজ হাতে নিয়ে রিপোর্ট করেছিল। এবং সেখানে বলা হয়েছিল, বিপুল অঙ্কের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
এ দিন ফের প্রশ্ন উঠেছে, হেরে গেলে নির্বাচন কি মনে নেবেন প্রেসিডেন্ট। প্রতিদিনের মতোই এ দিনও বিতর্কিত জবাব দিয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ হয়, তা হলে তিনি মেনে নেবেন। অর্থাৎ, ফলাফল মেনে না নেওয়ার রাস্তাটিও তিনি খোলা রেখেছেন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)