1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার বাড়বাড়ন্ত, হাসপাতালে বেডের হাহাকার

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ এপ্রিল ২০২১

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে হাসপাতালগুলিতে বেড-সঙ্কট! বেড বাড়ানো হয়েছে সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, সরকারি ক্ষেত্রে প্রায় দু হাজার বেড বেড়েছে৷ 

https://p.dw.com/p/3rzz4
Frankreich Coronavirus Intensivstation Beatmung Symbolbild
প্রতীকী ছবিছবি: Alain Jocard/AFP/Getty Images

দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরও মারাত্মক করোনা৷ পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতালগুলিতে সিসিইউ-আইসিইউ-এইচডিইউ বেডের চাহিদা বাড়ছে৷ পাশাপাশি কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে নার্স-মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের অভাব৷ ১৩ এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী, শহরের মোট ২৭০৩টি বেসরকারি হাসপাতালের করোনা বেডের মধ্যে ফাঁকা আছে স্রেফ ৬৯০টি বেড৷ দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সঙ্গে এটাই এখন রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি৷ সঙ্কট মেটাতে সরকারি কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা ৪৬ থেকে বাড়িয়ে ৫৬ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি বেডের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬০৪ থেকে সাত হাজার ৪২৮ করা হয়েছে৷ এক ধাক্কায় রাজ্যের সরকারি হাসপাতলের বেড দু হাজার বৃদ্ধি পেলেও তা মোটেই চাহিদা পূরণ করতে পারছে না৷ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে পরিমাণ রোগী এই মুহূর্তে আসছে, তাতে বেড দ্বিগুণ বাড়ানো হলেও  সামাল দেওয়া যাচ্ছে না৷ গতবছর দৈনিক ১০-১৫ সংক্রমণ নিয়ে রোগী এলে, এবার সেই সংখ্যাটা ৪০-৪৫ তে পৌঁছেছে৷”    

বেড ঘিরে দুশ্চিন্তা

আগামী দিনে স্বাস্থ্যভবনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকারি ক্ষেত্রে সাধারণ শয্যার সংখ্যা নয় হাজার ৬৪ করা হবে৷ ৫০১টি সিসিইউ এবং এক হাজার ৪৬৪টি এইচডিইউ বেড তৈরির লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে৷ পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ বছরও সেফ হোমের সংখ্যা বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন৷ কিন্তু যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিকাঠামো কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা৷ সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম'-এর সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার সজল বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এবারে উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা বেশি৷ রোগীদের হঠাৎই বাড়াবাড়ি অবস্থা তৈরি হচ্ছে৷ গতবছর সর্বোচ্চ সংক্রমণ শুরু হয়েছিল অক্টোবরে, এবার এপ্রিলেই সেই সংখ্যায় পৌঁছে গিয়েছে৷ মানে এবার সর্বোচ্চ সংক্রমণ দিয়েই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের যাত্রা৷”

ডা. কুনাল সরকার

সরকারি স্তরে গাফিলতিকে দায়ী করে তিনি বলেন, "প্রথম থেকে সরকারের তরফ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আটকানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ গতবছর যে বেডগুলি বাড়ানো হয়েছিল, করোনার প্রকোপ কমতে সেগুলো অন্য রোগের জন্য ব্যবহার হচ্ছিল, নতুন করে ফের করোনার জন্য বেড তৈরিতে সময় তো লাগবেই৷ তাছাড়া গতবছর জেলাস্তরে প্রাইভেট হাসপাতালে বেড নেওয়া হয়েছিল, এ বছর এখনও সেই বেড নেওয়া হয়নি৷ ফলে বেডের সমস্যা দিনদিন আরও বাড়বে৷”    

মানুষের হায়রানি

চিকিৎসকেরা বলছেন, ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউ তিনগুণ বেশি রোগী আক্রান্ত করেছে, সেই সংখ্যাটা বেড়ে দশগুণ হতেও পারে৷ সেই আতঙ্কে বেসরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৪৮৫ সংখ্যক বেড বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৫১১৷ সরকারি স্তরে আর জি কর হাসপাতালে ৬০ শয্যার কোভিড ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন৷ রোগীদের হয়রানি এড়াতে বুকিংয়ের সুবিধা শুরু করেছে বেসরকারি স্তরে বেলভিউ হাসপাতাল৷ তবুও নাজেহাল সাধারণ মানুষ, এপ্রিলেই শুরু হয়ে গেছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটার হায়রানি! এ জন্য কলকাতার অন্যতম নামী বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাক্তার কুণাল সরকার দায়ী করছেন সরকারি হাসপাতালগুলির উদাসীনতাকে৷

ডা. সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সরকারি হাসপাতালগুলি এখনও কোভিড ম্যানেজমেন্টে অংশগ্রহণ করছে না৷ কলকাতা বা জেলার বড় বড় সরকারি হাসপাতালগুলি তাদের বেড়ের ৫০শতাংশ কোভিড বেড করলে অনেকটা সমাধান হয়৷ এই পরিস্থিতিতে পুরো কোভিড বা পুরো নন-কোভিড হাসপাতাল করা উচিত নয়৷”   

পেডিয়াট্রিক আইসোলেশন কোথায়?

প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় কোভিড ঢেউ শিশুদের আক্রমণ করছে বেশি৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট জানাচ্ছে, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো পাঁচটা রাজ্যে মার্চে প্রায় ৭৯ হাজার শিশু কোভিড পজিটিভ চিহ্নিত হয়েছে৷ কিন্তু এ রাজ্যে শিশুদের আইসোলেশন বা শিশু কোভিড ওয়ার্ড কোথায়? শিশু চিকিৎসেকরা পেডিয়াট্রিক আইসোলেশন ওয়ার্ডের অভাব নিয়ে চিন্তিত৷ ডাক্তার সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পেডিয়াট্রিক কোভিড ওয়ার্ড শহরে কোথায় আছে জানি না৷ আমাদের হাসপাতালে নেই৷ তবে এখানে কোভিড ওয়ার্ডে শিশু চিকিৎসকেরা আছেন, শিশুরা কোভিড নিয়ে ভর্তি হলে চিকিৎসা পেতে অসুবিধা হবে না৷”

দ্রুত ভ্যাকসিন পথ

একদিকে নির্বাচনী জনজোয়ার, অন্যদিকে ১৩ এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার পার করেছে৷ বাঁচার উপায় কী? কুণাল বলেন, "ভারতের কাছে অনেক সুযোগ ছিল, কিন্তু করোনা মোকাবিলা করার জন্য সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার হয়নি৷ এখন দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়াটাই একমাত্র পথ৷” কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের যে পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, সেখানে প্রতিদিন ৩০ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন৷ ইতিমধ্যে লকডাউনের বদলে মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মানা, ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য