করোনার বাড়বাড়ন্ত, হাসপাতালে বেডের হাহাকার
১৪ এপ্রিল ২০২১দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরও মারাত্মক করোনা৷ পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতালগুলিতে সিসিইউ-আইসিইউ-এইচডিইউ বেডের চাহিদা বাড়ছে৷ পাশাপাশি কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে নার্স-মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের অভাব৷ ১৩ এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী, শহরের মোট ২৭০৩টি বেসরকারি হাসপাতালের করোনা বেডের মধ্যে ফাঁকা আছে স্রেফ ৬৯০টি বেড৷ দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সঙ্গে এটাই এখন রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি৷ সঙ্কট মেটাতে সরকারি কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা ৪৬ থেকে বাড়িয়ে ৫৬ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি বেডের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬০৪ থেকে সাত হাজার ৪২৮ করা হয়েছে৷ এক ধাক্কায় রাজ্যের সরকারি হাসপাতলের বেড দু হাজার বৃদ্ধি পেলেও তা মোটেই চাহিদা পূরণ করতে পারছে না৷ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে পরিমাণ রোগী এই মুহূর্তে আসছে, তাতে বেড দ্বিগুণ বাড়ানো হলেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না৷ গতবছর দৈনিক ১০-১৫ সংক্রমণ নিয়ে রোগী এলে, এবার সেই সংখ্যাটা ৪০-৪৫ তে পৌঁছেছে৷”
বেড ঘিরে দুশ্চিন্তা
আগামী দিনে স্বাস্থ্যভবনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকারি ক্ষেত্রে সাধারণ শয্যার সংখ্যা নয় হাজার ৬৪ করা হবে৷ ৫০১টি সিসিইউ এবং এক হাজার ৪৬৪টি এইচডিইউ বেড তৈরির লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে৷ পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ বছরও সেফ হোমের সংখ্যা বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য ভবন৷ কিন্তু যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিকাঠামো কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন চিকিৎসকেরা৷ সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম'-এর সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার সজল বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এবারে উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা বেশি৷ রোগীদের হঠাৎই বাড়াবাড়ি অবস্থা তৈরি হচ্ছে৷ গতবছর সর্বোচ্চ সংক্রমণ শুরু হয়েছিল অক্টোবরে, এবার এপ্রিলেই সেই সংখ্যায় পৌঁছে গিয়েছে৷ মানে এবার সর্বোচ্চ সংক্রমণ দিয়েই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের যাত্রা৷”
সরকারি স্তরে গাফিলতিকে দায়ী করে তিনি বলেন, "প্রথম থেকে সরকারের তরফ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আটকানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি৷ গতবছর যে বেডগুলি বাড়ানো হয়েছিল, করোনার প্রকোপ কমতে সেগুলো অন্য রোগের জন্য ব্যবহার হচ্ছিল, নতুন করে ফের করোনার জন্য বেড তৈরিতে সময় তো লাগবেই৷ তাছাড়া গতবছর জেলাস্তরে প্রাইভেট হাসপাতালে বেড নেওয়া হয়েছিল, এ বছর এখনও সেই বেড নেওয়া হয়নি৷ ফলে বেডের সমস্যা দিনদিন আরও বাড়বে৷”
মানুষের হায়রানি
চিকিৎসকেরা বলছেন, ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ঢেউ তিনগুণ বেশি রোগী আক্রান্ত করেছে, সেই সংখ্যাটা বেড়ে দশগুণ হতেও পারে৷ সেই আতঙ্কে বেসরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৪৮৫ সংখ্যক বেড বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৫১১৷ সরকারি স্তরে আর জি কর হাসপাতালে ৬০ শয্যার কোভিড ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন৷ রোগীদের হয়রানি এড়াতে বুকিংয়ের সুবিধা শুরু করেছে বেসরকারি স্তরে বেলভিউ হাসপাতাল৷ তবুও নাজেহাল সাধারণ মানুষ, এপ্রিলেই শুরু হয়ে গেছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটার হায়রানি! এ জন্য কলকাতার অন্যতম নামী বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাক্তার কুণাল সরকার দায়ী করছেন সরকারি হাসপাতালগুলির উদাসীনতাকে৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সরকারি হাসপাতালগুলি এখনও কোভিড ম্যানেজমেন্টে অংশগ্রহণ করছে না৷ কলকাতা বা জেলার বড় বড় সরকারি হাসপাতালগুলি তাদের বেড়ের ৫০শতাংশ কোভিড বেড করলে অনেকটা সমাধান হয়৷ এই পরিস্থিতিতে পুরো কোভিড বা পুরো নন-কোভিড হাসপাতাল করা উচিত নয়৷”
পেডিয়াট্রিক আইসোলেশন কোথায়?
প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় কোভিড ঢেউ শিশুদের আক্রমণ করছে বেশি৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট জানাচ্ছে, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো পাঁচটা রাজ্যে মার্চে প্রায় ৭৯ হাজার শিশু কোভিড পজিটিভ চিহ্নিত হয়েছে৷ কিন্তু এ রাজ্যে শিশুদের আইসোলেশন বা শিশু কোভিড ওয়ার্ড কোথায়? শিশু চিকিৎসেকরা পেডিয়াট্রিক আইসোলেশন ওয়ার্ডের অভাব নিয়ে চিন্তিত৷ ডাক্তার সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পেডিয়াট্রিক কোভিড ওয়ার্ড শহরে কোথায় আছে জানি না৷ আমাদের হাসপাতালে নেই৷ তবে এখানে কোভিড ওয়ার্ডে শিশু চিকিৎসকেরা আছেন, শিশুরা কোভিড নিয়ে ভর্তি হলে চিকিৎসা পেতে অসুবিধা হবে না৷”
দ্রুত ভ্যাকসিন পথ
একদিকে নির্বাচনী জনজোয়ার, অন্যদিকে ১৩ এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার পার করেছে৷ বাঁচার উপায় কী? কুণাল বলেন, "ভারতের কাছে অনেক সুযোগ ছিল, কিন্তু করোনা মোকাবিলা করার জন্য সেই সুযোগের সদ্বব্যবহার হয়নি৷ এখন দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়াটাই একমাত্র পথ৷” কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের যে পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, সেখানে প্রতিদিন ৩০ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন৷ ইতিমধ্যে লকডাউনের বদলে মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মানা, ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷